খালেদার বক্তব্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই, তবুও উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা
যারা এখনো নিস্ক্রিয় আছেন তারা সক্রিয় হোন, নিজ নিজ অবস্থান ও এলাকায় আন্দোলন গড়ে তুলুন। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলুন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য— বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যে উজ্জীবিত দলের নেতাকর্মীরা।
খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর পর শুক্রবার সন্ধ্যায় নেতাকর্মীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমনটা জানা যায়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতাকর্মীই বলেছেন, অবরোধ-হরতাল প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা বলেননি খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা পাননি তারা।
দলের নেতকার্মীরা জানান, দীর্ঘদিন টানা আন্দোলনে অনেকেই নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ এখনো আন্দোলনে নামেননি। তা ছাড়া কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় আন্দোলনও অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) বক্তব্যে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না থাকলেও অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আন্দোলনে নিস্ক্রিয়দের ছাড় দেওয়া হবে না। ফলে যারা এখনো নিস্ক্রিয় আছেন তারা জেগে উঠবেন।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আন্দোলনে দল-মত-শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সকল ব্যক্তি ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। যারা এখনো নিস্ক্রিয় আছেন তারা সক্রিয় হোন। নিজ নিজ অবস্থান ও এলাকায় আন্দোলন গড়ে তুলুন। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলুন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য।’
বিএনপির এক নেতা বলেন, যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ম্যাডাম আবারও এমন ঘোষণা দিয়েছেন। কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। কারণ ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আজ আমাদের দাবির কথা বলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ম্যাডাম তিনটি দাবির কথা বলেছেন। প্রথমত, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সারাদেশে যে সব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। পুলিশি ও যৌথবাহিনীর হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধের হয়রানিমূলক সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত সকল বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
তৃতীয়ত, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ সব দাবি মেনে নিলেই কেবল আন্দোলন থেকে সরে আসা সম্ভব।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান বলেন, ‘নেতাকর্মীরা সব সময় দলীয় প্রধানের কাছ থেকে একটা বার্তা চায়। তারা নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চায়, কথা বলতে চায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দলীয় প্রধানের কাছ থেকে তারা কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না। স্বাভাবিকভাবেই তারা আজকের (শুক্রবার) ম্যাডামের বক্তব্য শুনে উজ্জীবিত হয়েছে।’
আহমদ আযম বলেন, ‘জনগণ মনেপ্রাণে আন্দোলনে সম্পৃক্ত আছে। কারণ তারা ভোট দিতে পারেনি। তারা তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। এখানে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে, নেতাকর্মীরা রাজপথে নেই কেন? বাস্তবতা হল- রাস্তায় নামলেই দেখামাত্র গুলি করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বাসা থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ইতিহাসে এমন নজির নেই। তার পরও নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।’
যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘আন্দোলন আগামী দিনে আরও চাঙ্গা হবে। ম্যাডাম বলে দিয়েছেন, যারা এখনো নিস্ক্রিয় আছে তাদের সস্ক্রিয় হতে। ফলে কর্মীরা উজ্জীবিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমরা আন্দোলনটা ধরে রেখেছি। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে পারলেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-দফতর সম্পাদক মো. আকতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ম্যাডামের সরাসরি কোনো নির্দেশনা না থাকায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কর্মীদের সান্ত্বনা দিয়ে ধরে রেখেছি। আন্দোলন কোন দিকে যাচ্ছে। আজকের পর এ হতাশা থাকবে না।’