সংবাদ সম্মেলনে আত্মপ্রত্যয়ী খালেদা
দীর্ঘ ৬৫ দিন ধরে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন পরিচালনা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি তিনি গণমাধ্যমের সামনে আন্দোলন ও দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেন।
এর পর দীর্ঘ ৫৩ দিন তিনি একপ্রকার পর্দার আড়ালে থেকেই চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এ সময়ে রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতে তাকে জনসম্মুখে বা গণমাধ্যমের সামনে দেখা যায়নি।
যদিও ২৭ জানুয়ারি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুতে গুলশানে নিজ কার্যালয়ের নিচে শোোহত অবস্থায় এক মুহূর্তের জন্য তাকে দেখা যায়।
টানা ৬৫ দিন ধরে অবরোধ এবং ৪১ দিন ধরে হরতাল কর্মসূচি চলার পর শুক্রবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন তার গুলশান কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সামনে আসেন। সেখানে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ৯ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সাদা জমিনের ওপর হালকা খয়েরি নকশার শিফন শাড়ি, কানে ছোট সাদা মুক্তার দুল ও চোখে হালকা গোলাপী রংয়ের চশমা পরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সারাক্ষণই অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়েছে। কোনো ধরনের জড়তা ছাড়াই তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। একবারের জন্যও তাকে হতাশ মনে হয়নি।
বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রধান খালেদা জিয়া মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত করেছিলেন, সেই শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাপ্রিয় দেশবাসীর প্রতি জানাচ্ছি মোবারকবাদ। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সংগঠকদের স্মরণ করছি পরম শ্রদ্ধায়।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘একটি শান্তিময়, সুখি-সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক স্বদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এ দেশের বীর সন্তানরা জীবন দিয়েছিলেন। অপরিমেয় ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সেই দেশ আজ গভীর সঙ্কটে। এ সঙ্কট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক। আর এ সঙ্কটের স্রষ্টা আওয়ামী লীগ এবং আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে শেখ হাসিনা। জনগণের সম্মতি ছাড়া কারসাজির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে সেই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার উদগ্র বাসনা আজ সমগ্র জাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।’
তিনি ঘোষণা করেন, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সকল শ্রেণীর জনগণ, দল-জোটের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী, সমর্থক ও সাংবাদিকসহ সবাই যে নির্যাতন, জেল-জুলুম ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন তার জন্য প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। যারা নিহত, আহত ও গুম হয়েছেন বেদনাহতচিত্তে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সমাবেদনা জানাই। আল্লাহর রহমতে দিন পরিবর্তন হলে আমরা অবশ্যই আপনাদের পাশে দাঁড়াব।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফলের বিষয়ে নিজের প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র ও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। উন্নত কিংবা অনুন্নত কোনো দেশেই গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং সংগ্রামী মানুষের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায়নি। বাংলাদেশেও তা বৃথা যাবে না ইনশা আল্লাহ।’