চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে কি ব্যর্থ হোমিওপ্যাথি?
জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অনেকেই হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, রোগ সারাতে কোনো রকমের ভূমিকা রাখে না হোমিওপ্যাথি।
দি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এডজার্ড আর্নস্ট এর ভাষ্য থেকে দেখা যায়, জীবনের অনেকটা সময় তিনিও হোমিওপ্যাথিতে বিশ্বাস করতেন। জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে প্রথমে তাকে একটি হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তিনি হোমিওপ্যাথির ওপর গবেষণা করে এর ওপর ১০০টিরও বেশি পেপার প্রকাশ করেন। এরপর এ সবের ওপর একটি বই লেখেন যার নাম “A Scientist in Wonderland”।
১৯৯৩ সালে তিনি এক্সেটার ইউনিভার্সিটিতে কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি আশা করেন এখানে গবেষণার মাধ্যমে তিনি দেখাতে সক্ষম হবেন যে প্লাসিবো হিসেবেই শুধু নয় বরং আসল ওষুধ হসেবেও হোমিওপ্যাথি কার্যকর (প্লাসিবো হলো ওষুধের বদলে ব্যবহার করা এমন পিল যাতে রোগী মনে করেন তিনি ওষুধ খাচ্ছেন এবং মনের জোরেই তার রোগ সেরে যায়)। এমনটি করতে চাইবার একটি কারন হলো, তা প্রমাণ করতে পারলে নোবেল পুরস্কার পাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত। হোমিওপ্যাথি সত্যিই যদি কার্যকরী প্রমাণিত হয় তবে তার সাথে সাথে প্রমাণ হয়ে যাবে প্রকৃতির ব্যাপারে অনেক ভুল জ্ঞান আছে আমাদের। হোমিওপ্যাথি বলে, রোগ সারাতে হলে একই ধরণের বস্তুর সাহায্য দরকার, আর কোনো তরলকে যত পাতলা করে ফেলা হবে, এর শক্তি কমার বদলে আরও বেড়ে যাবে। এসব ধারণা সত্য প্রমাণিত হলে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হতো।
কিন্তু গবেষণা যখন সত্যি সত্যি শুরু করা হলো, তখন উবে গেলো এই গবেষকের উৎসাহ। কী পাওয়া গেলো গবেষণায়?
– গবেষণা থেকে দেখা যায়, প্লাসিবো হিসেবেই কেবল কার্যকরী হতে পারে হোমিওপ্যাথি। এর বাইরে তার কোনো কার্যকারিতা আছে, এমন প্রমান পাওয়া যায় না।
– হোমিওপ্যাথির যেসব ট্রায়াল বিশ্বাসযোগ্য বলে ধরা যায়, সেগুলোর ডেমনস্ট্রেশন থেকেও নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
– অন্যান্য প্রাণীর ওপরে গবেষণা করেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
– সার্ভে এবং কেস রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, হোমিওপ্যাথি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
– হোমিওপ্যাথি ক্যান্সার, অ্যাজমা বা এবোলা সারাতে পারে- হোমিওপ্যাথদের এমন দাবীর কোনো ভিত্তি নেই।
– হোমিওপ্যাথির অগ্রযাত্রাকে উৎসাহিত করাটা নৈতিক হতে পারে না।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালিত মূল্যায়নে দেখা যায়, প্লাসিবো দিয়ে চিকিৎসা করা এবং হোমিওপ্যাথির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। হোমিওপ্যাথির ২০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এতো বড় পরিসরে এর মূল্যায়ন করা হলো। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে বিশাল সমালোচনার ঝড় উঠেছে হোমিওপ্যাথির সমর্থকদের মাঝে এবং এই কাউন্সিল তাদের এই গবেষণার প্রমাণ পেশ করতে বাধ্য হয়। এতে বরং হোমিওপ্যাথির ব্যর্থতাই প্রমাণিত হয় আরো স্পষ্টভাবে।
২০১০ সালে হাউজ অফ কমন্স এর এক কমিটি হোমিওপ্যাথির পক্ষে এবং বিপক্ষে থাকা প্রমাণগুলো বিবেচনা করে দেখে প্লাসিবোর চাইতে হোমিওপ্যাথি বেশি কার্যকরী নয়। তবে তারা এটাও বলে যে রোগী যদি হোমিওপ্যাথি চায়, তবে সেভাবেই তার চিকিৎসা হওয়া উচিত।
তবে যতই প্রমাণ থাকুক না কেন, হোমিওপ্যাথির প্রতি মানুশের আস্থা কমছে না বিন্দুমাত্র। পৃথিবীজুড়ে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ হোমিওপ্যাথির ওপর নির্ভর করে এবং এর কার্যকারিতায় বিশ্বাস করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এই ইভ্যালুয়েশনের ফলে এখন নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে হোমিওপ্যাথি প্লাসিবোর তুলনায় কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নয়।
মূল: Edzard Ernst, The Guardian