কোথায় পাব নিরপেক্ষ নির্দলীয় লোক : এইচটি ইমাম
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, ২০১৫ সালে নতুন করে বায়না ধরলাম আমি (কারো নাম বলেননি এ সময়) নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। বললেই দেওয়া হবে? এখন কোথায় পাব নির্দলীয়-নিরপেক্ষ লোক?
তিনি উপস্থিতদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এখানে আছেন নাকি নিরপেক্ষ-নির্দলীয় লোক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জার্নি’ আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
‘আজকে আপনারা যা কিছু দেখছেন সবকিছুর মূলে পাকিস্তানের আইএসআই এবং পাকিস্তানীরা’ উল্লেখ করে এইচটি ইমাম উপস্থিতদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, তা না হলে বাংলাদেশে কাকে ফাঁসি দেওয়া হয় তা কেন পাকিস্তানের ন্যাশনাল এসেম্বলিতে আলোচিত হবে? বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা কেন রেজুলেশন দিবে এবং তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন এ সবের সমালোচনা করবে?
সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি নিজেই অজ্ঞাতে চলে গিয়ে বলছেন, সরকার গুম করেছে। এর আগে বিএনপির আরেক নেতা ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনাটি এমন ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হলে সম্প্রতি ঘটা অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতো না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থা বা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান থাকা সত্ত্বেও তারা সেভাবে খেতাব পাননি উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য যেভাবে খেতাব দেওয়া হয়েছে তাতে বর্তমান প্রজন্ম হয়তো ভাবতে পারে, এটা কেবল সামরিক বাহিনীরই একটি যুদ্ধ ছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধের খেতাব পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।
পুলিশ বা কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সালাহউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করেনি উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ কোথায় রয়েছেন আমরা জানি না। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় আমরাও তাকে খুঁজছি।
তিনি বলেন, আমরা সালাউদ্দিনের স্ত্রীর অভিযোগের যথার্থতা নিয়েও তদন্ত করছি। যদি তার অভিযোগ যথার্থ হয় তবে আমরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোখলেছুর রহমান বলেন, আইন সবার জন্য সমান। পুলিশ আইন অমান্য করলে তাদেরও বিচার হবে। পুলিশের কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে শাস্তির আওতায় আনা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম পুলিশকে সক্রিয় ও অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
প্রস্তাবনাটি হলো- থানায় সিনিয়র এএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও দুইজন পরিদর্শক পদায়ন, পুলিশের একটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের ব্যবস্থা করা, পুলিশ হেডকোয়ার্টারসহ ছয় বিভাগীয় রেঞ্জে একটি করে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা।
‘জার্নি’র প্রধান উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. খন্দকার বললুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী মাহবুবউদ্দিন আহমেদ।