সুপ্রীম কোর্ট বারের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি
প্রতিশ্রুতি আর উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
আগামী রবি ও সোমবার (১৫-১৬ মার্চ) সমিতির ২০১৫-১৬ বছরের কার্যনির্বাহী কমিটির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোটযুদ্ধে জয়ের জন্য রবি থেকে বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে আসা প্রত্যেক ভোটারের কাছে ভোট ও দোয়া চেয়েছেন প্রার্থীরা।
এ ছাড়া ছুটির দিনে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ভিত্তিতে ফোন, এসএমএস, চিঠি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা।
প্রতিদিন আদালতের মধ্যাহ্ন বিরতির সময় সাদা ও নীল প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়ে সমর্থকরা প্রচারণার অংশ হিসেবে বার ভবনের অলিগলিতে মিছিল করেন।
একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সংবলিত কাগজ, ব্যালট নম্বরসহ কার্ড বিতরণ তো রয়েছেই।
সুপ্রীম কোর্ট বারের নির্বাচন পেশাজীবী সংগঠনের হলেও নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অবস্থানই মনোনয়ন ও জয়ের অন্যতম চাবিকাঠি হয়।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা করেছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দুই রাজনৈতিক দল।
গত কয়েক বছর ধরে সুপ্রীম কোর্ট বারের নেতৃত্ব বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আইনজীবীদের হাতে থাকায় এবারের নির্বাচনকে বেশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
এবারের সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়াইয়ে নেমেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা।
সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের পক্ষে (সাদা প্যানেল) আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অপরদিকে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল) পক্ষে বারের বর্তমান সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে সম্পাদক পদে সাদা প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বারের সাবেক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদি।
অপরদিকে নীল প্যানেলের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও বারের বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ নির্বাচনেও সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আইনজীবীদের পেশাগত মান বৃদ্ধি, সকল আইনজীবীর বসার জন্য চেম্বারের ব্যবস্থা, আদালতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা, আইনজীবীদের তহবিলের অর্থ বৃদ্ধিসহ সার্বিক অবস্থার উন্নতির কথা তুলে ধরে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীরা।
সাদা প্যানেল থেকে সহ-সভাপতির দুটি পদে আবুল খায়ের ও মো. তাহেরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. আমির হোসেন, দুই সহ-সম্পাদক পদে মো. দেলোয়ার মোস্তফা চৌধুরী (মধু) ও মো. সুজা আল ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ কে এম দাউদুর রহমান মিনা, অমিত দাশগুপ্ত, খান মোহাম্মদ শাহীন আজিজ, মহি উদ্দিন শামীম, মো. আব্দুল আজিজ মিয়া মিন্টু, মো. হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাবিনা ইয়াসমিন (সাবিনা ইসলাম) ৭টি সদস্যপদে এ প্যানেলের প্রার্থী হয়েছেন।
অপরদিকে নীল প্যানেলে সহ-সভাপতির দুটি পদে প্রার্থী হয়েছেন- এ এস এম মোক্তার কবির খান ও মো. আব্দুল জাব্বার ভূঁইয়া। এ ছাড়া কোষাধ্যক্ষ পদে শওকত আরা বেগম দুলালী, দুই সহ-সম্পাদক পদে মাজেদুল ইসলাম পাটওয়ারী উজ্জ্বল ও মো. ইউসুফ আলী প্রার্থী হয়েছেন।
কার্যনির্বাহী ৭টি সদস্যপদে এই প্যানেল থেকে মির্জা আল মাহমুদ, আনোয়ারুল ইসলাম শাহিন, মো. জসিম সরকার, মো. নাসির উদ্দিন খান, রেজাউল করিম, মো. ফাইজুর রহিম, শামীমা সুলতানা দিপ্তী প্রার্থী হয়েছেন।
কার্যনির্বাহী ১৪টি পদে বিজয়ীদের নাম নির্ধারণ করবেন ৪ হাজার ৩৬২ ভোটার।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনজীবীরা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমানে এই দুটিই বিপন্ন।
তিনি বলেন, ‘আইনজীবীরা গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারের জন্য আশা করি আমাকে নির্বাচিত করবেন, যাতে করে সরকারের বিপক্ষে লড়ে তা করতে পারি।’
অপরদিকে সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে সুপ্রীম কোর্টের পবিত্রতা রক্ষা ও আদালত অঙ্গনকে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ রাখার জন্য কাজ করব।’
তিনি বলেন, সাবলীলভাবে আদালত যেন চলতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য এ্যাডভোকেট মো. হারুন অর রশিদকে প্রধান করে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুই দিনের এ নির্বাচনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।