তরুণ ৩ অক্সিজেন সিলিন্ডার

WCঅতীতের বাংলাদেশ এবং বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবধান অনেক! গত বছরও বাংলাদেশকে নিয়ে হাসি-তামাশা-ঠাট্টা করেছে বিশ্বখ্যাত ক্রিকেট বোদ্ধারা। সেই তারাই যখন বাংলাদেশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, তখন বুঝতে হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় পরিবর্তন এসেছে।
তবে এমন পরিবর্তনে দলের তরুণ ক্রিকেটারদের অবদান যথেষ্ট। মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান ও তাসকিন আহমেদরা প্রমাণ করেছেন, তারা বাংলাদেশ দলের নতুন অক্সিজেন সিলিন্ডার।
সৌম্য সরকারের উপস্থিতির পর থেকে দ্রুত উইকেট পতনের পরও বিপদে পড়ছে না বাংলাদেশ। কেননা সৌম্য ভয়ডরহীনভাবে বুক চিতিয়ে যেভাবে প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করছেন, তাতে করে দলের অক্সিজেন সরবরাহকারী তরুণদের মধ্যে এক নম্বর তালিকায় থাকবে তার নামই।
বাংলাদেশের অতীত পারফরম্যান্সের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরুতে বাংলাদেশের কোনো উইকেট পতন মানেই দল যেন খোলসের ভেতর ঢুকে যাওয়া; পরের ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব থাকত কোনোমতে উইকেট টিকিয়ে রেখে সাদামাটা একটা স্কোর সংগ্রহ করা। সেখানেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। এখন আর দ্রুত উইকেট পতনে নুয়ে পড়ে না দল। সৌম্য তার ব্যাটে এই বিপর্যয় রোধ করার ক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে ফেলেছেন ইতোমধ্যে।
চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের বেশীরভাগ ম্যাচে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ব্যর্থ ছিল। স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান ওঠার আগে উইকেট পতন; নামতে হয়েছে সৌম্য সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে দলকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন তিনি। তার যেন চিন্তা নেই, কয়টা উইকেটের পতন হয়েছে কিংবা উইকেট কতটা কঠিন; সৌম্য তার স্বাভাবিক ছন্দেই খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতি ম্যাচে, যা বাংলাদেশকে দিচ্ছে স্বস্তিকর অনুভূতি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন তিনি। পুরো বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলছেন বাঁহাতি এই পেস অলরাউন্ডার।
প্রতিপক্ষ বোলারদের নাস্তানাবুদ করে রুখে দিচ্ছেন তাদের একের পর এক ভয়ঙ্কর ভেলিভারি। শুক্রবার ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদির অসাধারণ আউটসুইংকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসাধারণ ইনিংস খেলছেন সৌম্য, যা প্রশংসিত হয়েছে দেশ-বিদেশে।
অথচ ইমরুল-তামিম যে ডেলিভারি খেলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, সৌম্য ওই বোলারদের অবলীলায় ৪ মারতে শুরু করেছেন। তার চমৎকার শট সিলেকশন, অসাধারণ টাইমিং, বোলারদের ওপর চড়াও হওয়ার মানসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ধারাভাষ্যকাররাও। শ্রীলঙ্কান ধারাভাষ্যকার রাসেল আরনল্ড তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই ছেলেটার মানসিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। অসম্ভব সাহসী এক ক্রিকেটার সে। ভবিষ্যতের তারকা।’
আরেক তরুণ সাব্বির রহমানের ভয়ডরহীন লড়াকু মানসিকতারও প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেট বিশ্ব। শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলায় জুড়ি নেই তার। গত ম্যাচেও অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন সাব্বির। আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া প্রতিটি ম্যাচেই রান পেয়েছেন তরুণ এই ক্রিকেটার। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। শেষের দিকে বোলারদের ওপর চড়াও হওয়ার জুড়ি নেই তার। যেন ড্যাম কেয়ার ভাব! দ্রুত চিন্তা, দুরুন্ত গতি, দুর্দান্ত সাহস তাকে আলাদা করেছে অন্য ব্যাটসম্যানদের থেকে।
আরেক তরুণ ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ তাজিম। যেমন স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে দ্যুতি ছড়াতে গিয়েছিলেন, এখন অবধি ঠিক সেভাবে পারেননি। কিন্তু যা করেছেন, তাও কম নয়। দুর্দান্তগতির বোলার তাসকিন। বিশ্বকাপের মঞ্চে এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন তিনি। ৬ ম্যাচে তাসকিনের উইকেট সংখ্যা ৬টি। প্রতিনিয়তই গতিময় বোলিং করে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাসিকন।
বাংলাদেশের এই তিন তরুণ ক্রিকেটারের লড়াকু মানসিকতা বিশ্বকাপ মঞ্চে বাংলাদেশ দলকে সাফল্য পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সময়টায় এই তিন তরুণের সরবরাহ করা অক্সিজেন যে খুব প্রয়োজন পড়বে বাংলাদেশের, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend