মেয়র প্রার্থীর হাসিমাখা মুখের অন্তরালে! – গোলাম মাওলা রনি
ক্যামেরাম্যান বললো- স্যার একটু হাসেন। আমি বললাম হাসি তো আসছে না- বরং অতিরিক্ত চেষ্টা করার ফলে তলপেটে নাভির গোড়ায় চুনচুনানী শুরু হয়ে গেছে। বেচারা এক গাল হেসে বললো – স্যার চুন-চুনানী কি ? তা তো আমিও জানি না- সম্ভবত শির শির জাতীয় কিছু একটা হবে। জবাব শুনে ভদ্রলোক কেনো জানি আমার প্রতি অতিরিক্ত মমত্ববোধ দেখাতে লাগলেন।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হলে আমার নিকট জনেরা পরামর্শ দিলো – প্রার্থী হতে চাও তাতে আপত্তি নেই। তবে এবার অবশ্যই নতুন ছবি লাগবে। পনের বছর আগে তোলা তোমার সেই ক্ষাচ্চা বাচ্চা চেহারা মার্কা পুরোনো ছবি দিয়ে হবে না- নতুন ছবি চাই। হাসিমুখে যথা সম্ভব ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলে আবেদনময়ী করে ছবি তুলতে হবে। তারা আমাকে বেশ কয়েকটি ভালো স্টুডিও, ক্যামেরাম্যান এবং ফ্যাশন ডিজাইনারের নাম ও বলে দিলো। তারা আরো বললো – ভালো একটি বিউটি শপে গিয়ে সুন্দর করে মেকাপ নেয়ার জন্য। দরকার হলে আমি যেনো হালকা লিপিস্টিক ব্যবহার করি- এমনতরো পরামর্শ দিতেও ভুল করলো না।
ক্ষন্ধুজনের পরামর্শ শুনে আমি ভারি মুছিবতে পড়ে গেলাম। তাদের কথা যতই স্মরন করি ততই আমার চিত্তে চাঞ্চল্য শুরু হয়ে যায়। শরীরে মৃদু ঘাম এবং হাতে পায়ে কিয়ৎ কম্পনও অনুভব করতে থাকি। আমি রাস্তায় গিয়ে অন্যসব মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ছবি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে শুরু করলাম। কেউ কেউ দাঁত বের করে হাসছেন। কেউবা দাঁত মুখ চেপে ফুচকী হাসি দেবার চেষ্টা করছেন। অন্যেরা ভোকা বাবা মার্কা হাসিমাখা ছবি তুলেছেন। ভোকা বাবা মার্কা হাসি হলো সেই হাসি হাসি ভাব যা কিনা তৈরী হয় খিলখিলিয়ে অট্রহাসিতে ফেটে পড়ার পূর্ব মুহুর্তে। আমাদের গ্রাম গঞ্জে আদুরে বালক বালিকারা যখন অভিমানে মুখ ভার করে থাকে তখন তাদের বাবা মারা বলে ওরে আমার ভোকা বাবা- ওরে আমার ভোকা মা- একটু হাসো তো ! ছেলেরা -মেয়েরা প্রথমে মুখ গম্ভীর করে থাকলেও একটু পরে ভোক করে হেসে দেয়। এই জন্য এই হাসিকে বলে ভোকা বাবা হাসি।
প্রার্থীদের ছবি দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না- কিভাবে আমি হাসিমাখা বদনের রূপ দিবো। আমি পুরুষদের বিউটি পার্লারেও গেলাম না। আর লিপিস্টিক ! ওটা দেখলেই আমার বমি চলে আসে। তাই নিত্য দিনকার সাজে চলে গেলাম বেইলি রোডের একটি স্টুডিও তে। ক্যামেরাম্যান অনেকক্ষন চেষ্টা করে একটি ছবি তুললেন এবং আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন বলে কিছু টাকা কম রাখলেন এবং আমার জন্য দোয়া করে দিলেন। অনেক কষ্টে আমি মুখে সামান্য একটু হাসির রেখা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম বটে কিন্তু ঠোট আর থুতনির এক্সপ্রেসনে খুশি হতে পারলাম না। ক্যামেরাম্যানকে জিজ্ঞাসা করলাম- ওমন হলো কেনো ? সে বললো -স্যার ছবি তোলার সময় আপনি নিজের অজান্তে ঠোঁট এবং থুতনীর পেশী সংকুচিত করে ফেলেছিলেন !
– লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত