তাদের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
সব খেলোয়াড়েরই নির্দিষ্ট একটি প্রিয় প্রতিপক্ষ থাকে। যাকে পেলে ওই খেলোয়াড় অটোমেটিক্যালি জ্বলে উঠেন। ভাল খেলার অনুপ্রেরণা পান। ভারতকে পেলে বাংলাদেশের কয়েকজন ক্রিকেটার আছে; যারা আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠেন। আর তাদের ভাল করার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম ভারতের বিপক্ষে বাজির ঘোড়া হতে পারেন। হতে পারেন তাসকিন-নাসির-সৌম্য-সাব্বিরও। কিংবা হতে পারেন বিশ্বকাপের আলোচিত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ!
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ৩টি। একটি ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। বর্তমান দলের অধিনায়ক মাশরাফির দৃঢ়তায় ওই ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ। বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে মাশরাফি বিন মর্তুজার তোপে ভারত অলআউট ১৯১ রানে; এরপর মুশফিকের অসাধারণ ইনিংসে সহজ জয়।
পরের হিসাব ২০১২ সালের ১৬ মার্চ। আরও একটি বীরোচিত জয় রচিত হয়েছে বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তামিম-সাকিব-নাসির-মুশফিকের ব্যাটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ২৮ লড়াইয়ে বাংলাদেশের জয়ের ঘটনা মাত্র ৩টি। যে ৩টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, সবকটি জয়ই দলীয় প্রচেষ্টায়।
নিয়ম মেনে ম্যাচের মূল নায়ক হিসেবে একজনকে বেছে নিতে হয়েছে। কিন্তু সে সব ম্যাচের পার্শ্বনায়ক ছিলেন অনেকেই। তাহলে এবার কার পালা! ১৯ মার্চ মেলবোর্নে পুরোনো নায়কদেরই কী দেখা যাবে নাকি বাংলাদেশ খুঁজে পাবে নতুন কোনো নায়ক।
ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান বলতে হবে সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে। ২০১২ সালের ১৬ মার্চ এক কাব্যিক ইনিংস খেলেছেন মুশফিক। ফতুল্লাহ ভারতের বিপক্ষে ১১৭ রানের ইনিংসের পরও ওই ম্যাচে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হিসাবটা এমন; মুশফিকুর রহিম ১৪ ম্যাচ খেলে ৪২১ রান সংগ্রহ করেছেন ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে। তার একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ২টি হাফ সেঞ্চুরি। ২০০৭ সালে পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে শচিন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির দিনে বাংলাদেশ পেয়েছে এক রূপকথার জয়। আর এই জয়ে মুশফিক খেলেছিলেন অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংস।
মুশফিকের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন তামিম ইকবাল। ১৩ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৪০১ রান। সর্বোচ্চ ৭০ রানের ইনিংস রয়েছে ২০১২ সালের এশিয়া কাপে। সেঞ্চুরি না পেলেও রয়েছে ৫টি হাফসেঞ্চুরি।
সাকিব আল হাসানের সংগ্রহ ১১ ম্যাচে ৩৬০ রান। সর্বোচ্চ ৮৫ রান রয়েছে সাকিবের। সেই সঙ্গে রয়েছে ৫টি হাফসেঞ্চুরিও। ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচে তার জ্বলে উঠাটা তাই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাট হাতে যেমন সফল সাকিব আল হাসান তেমনি সফল বল হাতেও। বল হাতে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ২৭ রানে ৩ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে জয়ের কোনো ম্যাচেই সাকিব বল হাতে ভূমিকা রাখতে পারেননি। এবার কী পারবেন তিনি ১৯ মার্চ ভেলকি দেখাতে।
এই বিশ্বকাপে নায়ক হয়ে উঠা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ভারতের বিপক্ষে ভাল ব্যাটিং করেছেন। মেলবোর্নে ম্যাচ শুরুর আগে ক্রিকেট ভক্তরা নতুন করে রিয়াদকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনছেন। রিয়াদ ১০ ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছে ২৪৮ রান। রয়েছে ২টি হাফসেঞ্চুরি। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ২ সেঞ্চুরি করা রিয়াদ ভারতের বিপক্ষে চাইবেন আরেকটি স্মরণীয় ইনিংস খেলার। হয়তো মাহমুদউল্লাই বিশ্বকাপের নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠতে পারেন।
ভারতের বিপক্ষে মাশরাফি হাত ধরেই সবগুলো জয়ে এসেছে। ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে মাশরাফি ছিলেন সবচেয়ে ভয়ংকর। শুরুতেই ভারতের টপ অর্ডার এলোমেলো করে দিয়েছিলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার মাশরাফি। ১২ ম্যাচে মাশরাফির সংগ্রহ ১৫ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ৩৮/৪; ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে। এবারও হয়ত মাশরাফিকে এমনি একটি স্পেল করতে হবে। পোর্ট অব স্পেনকে ফিরিয়ে আনতে হবে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।
ভারতের বিপক্ষে ২টি ম্যাচে খেলেছেন তাসকিন আহমেদ। ২ ম্যাচের একটিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং পেয়েছেন। ২৮ রান খরচায় নিয়েছেন ৫ উইকেট। ওই ম্যাচ থেকেই অনুপ্রেরণা খুজছে তাসকিন। এমন একটি স্পেল মেলবোর্নের মাঠে দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা।
ভারতের বিপক্ষে স্ট্রাইক রেটে সবচেয়ে এগিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ! ভারতের বিপক্ষে তার স্ট্রাইক রেট ৮৭.৩২, দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন সাকিব আল হাসান ৮৬.৯৫।
তামিম তিনে। তার স্ট্রাইক রেট ৮৪.৭৭। মুশফিকের স্ট্রাইক রেট ৭৮.২৫।
মোদ্দা কথা ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে একটি শুভদিনের অপেক্ষায় বাংলাদেশের ভক্তরা।