উত্তাল মার্চ ১৮, ১৯৭১: তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন বঙ্গবন্ধু

Sakib১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ইংরেজি দৈনিক ডন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান।
আওয়ামী লীগ প্রধান বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কোনভাবেই এ কমিশনকে সহযোগিতা করবে না। কাউকেই এ কমিশনে মনোনয়ন কিংবা সদস্য হিসেবে কমিশনকে সহায়তা করা উচিত হবে না বলেও জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু জানান, এ কমিশন প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে পারবে না। বরং তা জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করবে।
সামরিক আইন প্রশাসক পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছিল। কমিশন প্রধান মনোনয়ন দেবেন প্রধান বিচারপতি।
দৈনিক পাকিস্তানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্বাধীনতা এবং বিদ্রোহী বাংলার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবসে (১৮ মার্চের) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি তুলে ধরা হয়।
‘আজ (১৮ মার্চ) বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা নার্সিং স্কুল ছাত্রী সংসদের উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিক হবে। বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রাক্তন কর্মচারীদের এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তান মৃত্তিকা বিজ্ঞান সংস্থার এক জরুরি সভা আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় ২০/জি বিশ্ববিদ্যালয় বাসভবনে অনুষ্ঠিত হবে।’
‘আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে সাহায্য দানের উদ্দেশ্যে কল্যাণপুর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে মিরপুর বিউটি সিনেমা হলে এক ‘ম্যাজিক শো’ আয়োজন করা হয়েছে।’
উত্তাল একাত্তরের এই দিনে দেশব্যাপী সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি চলছিল। একদিকে সংগ্রামের প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে চলছিল বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের আলোচনা। এক পর্যায়ে সবাই বুঝতে পারে যে আলোচনার নামে চলছে সময়ক্ষেপণ।
একাত্তরের এ দিনেই বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মীরা বাংলাদেশে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় চালিয়ে যেতে থাকে।
এদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁও-মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ধরনের উস্কানি আর সহ্য করা হবে না।’
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তার ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইয়ে ১৮ মার্চের ঘটনাবলীতে লিখেছেন, ‘ঢাকা টেলিভিশন স্বাধিকার আন্দোলনকে তুঙ্গে তুলে দিয়েছে অভিনব গানের অনুষ্ঠান দিয়ে। এমন অনুষ্ঠান দেখি নাই কভু। ঢাকার যত প্রথম সারির নামকরা সঙ্গীতশিল্পী- ফেরদৌসি রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন, শাহনাজ বেগম, আঞ্জুমান আরা বেগম, সৈয়দ আবদুল হাদী, খোন্দকার ফারুক আহমদ, রথীন্দ্রনাথ রায় এবং আরও অনেকে মিলে যখন গাইতে থাকেন- সংগ্রাম সংগ্রাম সংগ্রাম। চলবেই দিনরাত অবিরাম।’
‘আর তাদের কয়েকটা চেহারা হাজার হাজার চেহারা হয়ে যায়। তখন মনে হয় বুকের মধ্যে, ঘরের মধ্যে ঝড় উঠে গেছে, সে ঝড়ের মাতামাতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে’ লিখেছেন জাহানার ইমাম।
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন প্রভৃতি শক্তির প্রতি তাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রের দ্বারা বাঙালী হত্যার প্রয়াস বন্ধ করার আবেদন জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ অপর এক বিবৃতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা প্রেরণ করে আসন্ন গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিবৃত্ত করার অনুরোধ জানান।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend