ঢাকায় ক্রিকেট জুয়া
না, ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের খোঁজ এখনো পায়নি ঢাকার গেfয়েন্দারা। তবে ক্রিকেট জুয়া চলছে ঢাকায়। ক্লাবে, পাড়ায়, মহল্লায় আর অফিস বাসায় এই জুয়া এখন সবার মুখে মুখে। এই ক্রিকেট জুয়ায় উড়ছে লাখ লাখ টাকা। রিকশা চালক, ছাত্র, দোকানী, বেকার অনেকেই এই ক্রিকেট জুয়ায় লাল হচ্ছেন। আবার কেউবা হচ্ছেন সর্বশান্ত। এর একে তারা জুয়া না বলে বলছেন বাজি ধরা।
জানা গেছে, ঢাকার ক্লাবগুলোতে এই জুয়ার আগাম বুকিং দিতে হচেছ। নয়তো জুয়ার সময় আসন মেলে না। আর স্থানীয়ভাবে যারা পাড়ায় মহল্লায় আয়োজন করছেন তারাও শৃঙ্খলার জন্য আগে থেকে নাম নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখছেন। জুয়াড়িদের জুয়ার টাকা জমা দিতে হচ্ছে আগাম।
কেমন এই ক্রিকেট জুয়া? জানতে চাইলে ঢাকার এক জুয়াড়ি জানান, ‘জুয়া হয় দল খেলোয়াড়, ওভার, এমনকি শেষ সময়ের ওপর। আর এই জুয়ার রেট নির্ভর করে কোন দল কেমন, কোন প্লেয়ার কেমন তার ওপর নির্ভর করে।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘যেমন বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার খেলা। এই খেলায় দলগত জুয়ার রেট ৪:১।
যদি দক্ষিণ আফ্রিকা হয় চার হাজার টাকা তাহলে শ্রীলঙ্কা হবে এক হাজার টাকা। এর মানে হল দক্ষিণ আফ্রিকা হারলে শ্রীলঙ্কার পক্ষের জুয়াড়ি পাবে চার হাজার টাকা। জিতলে দক্ষিণ আফ্রিকার জুয়াড়ি পাবে এক হাজার টাকা।’
তিনি জানান, ক্রিকেট বিশ্বকাপের শুরু থেকেই এই জুয়া শুরু হয়েছে। ফাইনাল খেলা যতই এগিয়ে আসছে ততই এই জুয়ায় অংশগ্রহণ বাড়ছে। আর এই জুয়া দলগত এবং এবং ব্যক্তি পর্যায়েও হয়। ঢাকার ক্লাবগুলোর একাংশ বড় স্ক্রীন ছাড়াও আলদাভাবে টিভি সেটের ব্যবস্থা করেছে খেলা দেখার জন্য। বড় স্ক্রীনের সামনে দলে দলে ভাগ হয়ে জুয়াড়িরা ক্রিকেট জুয়া খেলে। আর ছোট স্ক্রিনের সামনে চলে বড় অংকের জুয়া।
একজন জুয়াড়ি জানান, বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের খেলার দিন ঢাকার একটি ক্লাবে কোটি টাকার জুয়া হয়েছে। ওই খেলায় বাংলাদেশ ইংল্যান্ড জুয়ার রেট ছিল ১:৫।
ফলে যারা বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরেছেন তারা রীতিমত দাও মেরেছেন।
তিনি জানান, জুয়ার টাকার একটি অংশ ক্লাবগুলো রাখে পরিচালনার খরচ হিসেবে। আর টাকা আগেই জমা দেয়া হয়। তাই খেলার পর ঝামেলা তেমন হয় না। হলেও পুলিশের সঙ্গে আগেই তারা যোগাযোগ করে রাখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য।
ঢাকার নিউ ইস্কাটন এলাকার এক জুয়াড়ি জানান,‘ বাংলাদেশ-ভারতের বৃহস্পতিবারের ম্যাচের জুয়ার রেট ঠিক হয়ে গেছে। আর তা হল ১:৩ । দল হিসেবে বাংলাদেশ এখানে হট ফেভারিট হলেও জুয়ার রেটে পিছিয়ে আছে।’
জানা গেছে এলাকা হিসেবে পুরনো ঢাকায় ক্রিকেট জুয়া এখন তুঙ্গে। পুরনো ঢাকার একাংশ এই ক্রিকেট জুয়ায় লাখ লাখ টাকা উড়াচ্ছেন। আর কেউ দাও মারছেন লাখ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরনো ঢাকায় ম্যাচভেদে ন্যূনতম ৩ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হয় । গত আইপিএলের ফাইনালের শেষ ওভারে বল প্রতি নাকি ১০ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
পুরনো ঢাকার তাঁতীবাজার, লালবাগ, ইসলামপুর, চকবাজার, সূত্রাপুর, সদরঘাটসহ আশপাশের এলাকায় প্রধানত ব্যবসায়ীরা ক্রিকেট জুয়ায় মেতে উঠেছেন।। ব্যবসায়ীরা গ্রুপে ভাগ হয়ে বাজি ধরেন । একেকটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা থাকে ছয় থেকে সাত জন । চকবাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, ‘বাজি ধরা পুরান ঢাকায় রীতিতে পরিণত হয়েছে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রতিটি খেলায় বাজি ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমার গ্রুপের ৫০ লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের খেলার দিন গ্রুপ হেরেছে ২০ লাখ টাকার বাজিতে।’ তিনি বলেন,‘ বৃহস্পতিবারের বাংলাদেশ-ভারত খেলা নিয়ে নিয়ে ১২টি গ্রুপ প্রায় কোটি টাকার বাজি ধরেছে এরই মধ্যে । খেলা শুরুর এক ঘন্টা আগে পর্যন্ত দলের ওপর বাজি ধরা যাবে।’
এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান,‘ এ ধরণের বাজি বা জুয়ার কথা শোনা যায়। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। আর আমরাও কোন খোঁজ পাইনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে ঢাকার বাইরেও একইভাবে ক্রিকেট জুয়া চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পিরোজপুরের স্থনীয় এক সাংবাদিক জানান, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের খেলার দিন সেখানে জুয়ার টাকা নিয়ে হাতাহাতিও হয়েছে।