‘গুম–খুনের প্রতিবাদে’ নতুন কর্মসূচি ভাবছে বিএনপি
টানা হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ‘গুম-খুনের প্রতিবাদে’ নতুন কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। দলটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। বিএনপি মনে করে, এ বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার না হলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
গত ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা সালাহ উদ্দিনকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় বলে তাঁর পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো অবশ্য এর দায় নিচ্ছে না। তারা আদালতকে জানিয়েছে, সালাহ উদ্দিনের খোঁজ তাদের কাছে নেই।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বলেন, সালাহ উদ্দিনকে ‘গ্রেপ্তার’ করে সাতদিনেও তাঁকে মুক্তি বা আদালতে হাজির করা হয়নি। ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদারসহ সারা দেশে আরও অনেক নেতা-কর্মীর ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
সালাহ উদ্দিনকে ‘তুলে নেওয়ার’ প্রতিবাদে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ৭২ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হরতালের পাশাপাশি আরও কর্মসূচির দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে গুম-খুনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ বা বড় ধরনের সমাবেশ, অবস্থান বা সেমিনার করা যায় কি না-তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিএনপি আশা করেছিল, সালাহ উদ্দিনকে ‘তুলে নেওয়ার’ পর মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো দু-এক দিনের মধ্যে থানায় বা আদালতে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু ছয় দিনেও তা না হওয়ায় বিএনপির আশঙ্কা বাড়ছে। বিএনপি এ বিষয়টি নিয়ে সরকারকে চাপে রাখতে চায়। এ জন্য নতুন কী কর্মসূচি দেওয়া যায় তা চিন্তা করা হচ্ছে। অবশ্য এখনো কোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুম-খুনের প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তাই তিনি কিছু বলতে পারছেন না। অবশ্য এরই মধ্যে সালাহ উদ্দিনকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হরতাল আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানোর পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এর আগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে ‘গুম’ করা হয়েছিল। গত বছর ছাত্রদলের ২০-২২ জনকে ‘গুম’ করা হয়েছে। এবারও ছাত্রদলের অনেক নেতাকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদারকে ‘গুম’ করা হয়েছে। সর্বশেষ বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবকে ‘নিয়ে যাওয়ার’ পর অস্বীকার করা হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতার ঘটনার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়ছে।
বরকত উল্লাহ বিবৃতিতে বলেন, ‘সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করার কথা আমরা বলেছি। কিন্তু তাঁর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকে উধাও করে ফেলার মতো ধৃষ্টতাকে কোনো ক্রমেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা সকলের জন্য অনিরাপদ এক অসভ্য পরিবেশেই কেবল সম্ভব।’
এর আগে ২০১৩ সালের আন্দোলনেও ‘গুম-খুন’ ছিল বিএনপির কাছে একটি বড় আতঙ্ক। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলন শেষে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি করেছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি এই এক মাসের মধ্যে বিরোধী দলের ২৪২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা ও ৬০ জনকে গুম করা হয়েছে। প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ। পরে অবশ্য ‘নিখোঁজ’ বেশ কয়েকজন ছাত্রদল কর্মী ফিরে এসেছিলেন।
২০১৩ সালের ২ মে গুম-খুনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এর আগে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানীর একটি রাস্তা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। এখনো তাঁর সন্ধান মেলেনি। তারও আগে নিখোঁজ হন রাজধানীর একটি ওয়ার্ডের কমিশনার বিএনপির নেতা চৌধুরী আলম, তাঁর এখন পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া যায়নি।