চট্টগ্রামে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার, শিবির সন্দেহে আটক ৮৭
চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় শিবিরকর্মী সন্দেহে ৮৭ জনকে আটক করা হয়েছে।ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গোপনীয়তার স্বার্থে অভিযানে এবার অন্যান্যবারের মতো কোনো থানা পুলিশকে রাখা হয়নি। পুলিশ লাইনসের ৭০ পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় মঙ্গলবার রাত ২টায় শুরু হওয়া অভিযান বুধবার দুপর ১২টা পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে নগর পুলিশের কমিশনার মোহা. আব্দুল জলিল মণ্ডল বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি মুহসীন কলেজে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মজুদের ঘটনায় জড়িত শিক্ষক ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ কলেজের শ্রেণীকক্ষ ও ছাত্রাবাসে অস্ত্র মজুদ রাখার বিষয়টি শিক্ষকদের অজানা কিছু নয়। অস্ত্র মজুদের ঘটনায় শিক্ষকরাও জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘এ দুটি কলেজ ক্যাম্পাসকে তারা শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে রেখেছেন। তাদের কাছ থেকে যে রকেট ফ্লেয়ার উদ্ধার করা হয়েছে তা সেনাবাহিনীর কাছে থাকে। তাই মূল হোতাদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসে একযোগে অভিযান শুরু হয়। তবে রাতের অভিযানে কলেজ ঘিরে থাকা পুলিশের হাতে শিবিরের ৭২ নেতাকর্মী আটক হয়। সকালের অভিযানে আরও ১৫ জনসহ মোট ৮৭ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের যাচাই-বাচাই চলছে। তবে অভিযান অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ‘অভিযানে বুধবার দুপুর পর্যন্ত একটি একে-২২, একটি থ্রি নট থ্রি, তিনটি পিস্তল, তিনটি সিঙ্গেল ব্যারেল বন্দুক, তিনটি দেশী বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, পাঁচটি রকেট ফ্লেয়ার, ৬১ রাউন্ড কার্তুজ ও ২৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকালের অভিযানে উদ্ধার হরা হয়েছে ককটেল, পেট্রোলবোমা ও বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ অনেকগুলো দেশীয় ধারালো অস্ত্র। রাতে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি চেয়ে লেখা ব্যানারে মোড়ানো অবস্থায় তিন ফুট মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছিল।’
নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকর্মী সন্দেহে ৮৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের পাঁচলাইশ ও কোতয়ালী থানা হাজতে রাখা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ তারা কলেজে ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছিল। রাতভর অভিযানে শিবিরকর্মী সন্দেহে ৭২ জনকে আটক করা হয়েছে। সকালে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে অভিযান শেষ করে ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজে অভিযানকালে আরও ১৫ জনকে আটক করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে মুহসীন কলেজের মূল ভবনের পেছনে পাহাড়ে পরিত্যক্ত একটি ছাত্রাবাসের নালার স্ল্যাবের নিচ থেকে পাঁচটি কিরিচ ও গানপাউডার উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রাবাসের ভেতর থেকে পেরেক, জর্দার কৌটা, পাথরের টুকরা, পেট্রোল ও বিস্ফোরকসহ ককটেল তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজে ছাত্রলীগ দখলে যাবে- এমন গুজবের ভিত্তিতে গত দুই দিন ধরে কলেজ দুটিতে শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে ছাত্রলীগকে ঠেকাতে এবং নাশকতার উদ্দেশ্যে গত শনিবার থেকে শিবিরের নেতাকর্মীরা কলেজে অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম কলেজ ও মুহসীন কলেজে ছাত্রশিবির তিনটি একে-২২সহ ১৮টি মারণাস্ত্রের মজুদ গড়েছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশ এ অভিযান চালায়।’