‘আমরা সৃষ্টি করি, উনি ধ্বংস করেন’ -প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পেট্রোলবোমা-ককটেল মেরে মানুষ মারাই যেন তার কাজ। এ কাজে তিনি নিজ দলের সন্ত্রাসী বাহিনী ও জামায়াত-শিবিরকে ব্যবহার করছেন। মানুষের ওপর তার যেন অনেক ক্ষোভ। আমরা দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এটা ওনার সহ্য হয় না। আমরা সৃষ্টি করি, উনি ধ্বংস করেন।’
‘বিএনপি নেত্রীর অন্তরে পেয়ারে পাকিস্তান’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন হোক এটা তিনি চান না। তাই জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি করে যাচ্ছেন। বাড়ি থাকতে অফিসে বসে মানুষ হত্যার হুকুম দিচ্ছেন। মানুষকে পোড়ানো, মানুষ হত্যাই যেন ওনার কাজ।’
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দল মানুষ পুড়িয়ে মারে, সে দলকে মানুষ কিভাবে ভোট দেবে? রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য থাকবে দেশের উন্নয়ন। কিন্তু বিএনপির লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে ধ্বংস করা। তারা এ দেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেনি।’
‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জ্বালাও-পোড়াও করে দুর্নীতি মামলা থেকে রেহাই পেতে চান ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চান’ বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেই, তিনি সেই বই পুড়িয়ে ফেলেন। কেবল বই পোড়ান না, পেট্রোলবোমা-ককটেল মেরে নিষ্পাপ শিশুদেরও পুড়িয়ে মারেন। এসব ঘটনা দেখলে কোনো বাবা-মা চাইবেন তার ছেলে-মেয়েকে স্কুলে দিতে? এখানেই উনার সফলতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তিনি অবরোধ করছেন। যেই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে, তখন থেকেই তিনি হরতাল ডাকতে শুরু করলেন। পরীক্ষায় বাধা দেওয়াই যেন তার কাজ।’
‘এভাবে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে শেষ রক্ষা হবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের উন্নয়ন তার (খালেদা) সহ্য হয় না। উন্নয়ন ঠেকাতে জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসের রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তিনি কার্যালয়ে বসে থেকে এসব করছেন। কে আছে নিজের বাড়িঘর রেখে এতদিন অফিসে বসে থাকে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বর্তমান রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যেখানে বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনৈতিক দেশগুলো মন্দার সময় উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে পারেনি সেখানে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সার্বিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে যাচ্ছি। বিএনপি নেত্রীর এটা সহ্য হচ্ছে না।’
ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী মহিলা লীগসহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনা নৈরাজ্য, আগুন ও পেট্রোলবোমা হামলাকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদের স্থান হতে পারে না। জনগণকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে। আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। যারা বোমা মারবে, আগুন দেবে, তাদের পুলিশে ধরিয়ে দিন। কেউ দেশের ক্ষতি করলে তার কোনো ক্ষমা নাই। জঙ্গিবাদের শাস্তি অবশ্যই হবে।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘স্বাধীন দেশে নিরীহ ও খেটে খাওয়া মানুষের ওপর অমানবিক অত্যাচার করা হচ্ছে। গর্ভবতী নারীদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী, যারা দেশের মানুষকে হত্যা করেছিল, ধর্ষণ করেছিল, তাদের বিচার হচ্ছে। সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সঙ্গে নিয়ে একটি দল, যে দল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা এখন অযৌক্তিক আন্দোলন করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা জাতির পিতার জন্মদিন পালন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যার পর খুনীদের বিচার হয়নি। তাদের সে সময় বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান আমাদের দিয়েছিলেন, আমরা সেটা বহাল রেখেছি। শুধু এর চারটি নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি সংবিধানে নিষিদ্ধ ছিল। সেই যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছিল বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বানানো হয়েছিল তাদের।’