অকার্যকর হরতালের বিকল্প খুঁজছে ২০ দল
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ঘোষিত টানা কর্মসূচিতে জনজীবনে একঘেয়েমি এসেছে। এ কারণে আন্দোলনে বৈচিত্র্য আনার কথা ভাবছে এ জোট। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে এ বৈচিত্র্য আনা হতে পারে বলে দলটির সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে এমনটি করা হচ্ছে। তবে আন্দোলনের ধরন কেমন হবে সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলন চলছে, চলবে। তবে টানা আন্দোলনে কিছুটা একঘেয়েমি আসতে পারে। যে কারণে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আন্দোলন কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য আনার কথা ভাবছেন।’
সাবেক এ সেনাপ্রধান জানান, খালেদা জিয়া ২৬ মার্চ উপলক্ষে একটি আহ্বান জানিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি ভেবেচিন্তে বলেছেন। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে এ দিবসকে কেন্দ্র করে কোনো বৈচিত্র্য আসতে পারে। তিনি (খালেদা জিয়া) সময় মতোই তা জানাবেন।’
নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ২০ দলীয় জোট। পাশাপাশি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচিও চলছে।
প্রথমদিকে এ সব কর্মসূচি সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে কিছুটা চাপ সৃষ্টি ও জনজীবনে প্রভাব ফেললেও ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি আপাতত অকার্যকর হয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
অবরোধ-হরতালেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আতঙ্ক ও অস্বস্তি থাকলেও লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। জীবনের তাগিদেই স্বাভাবিক কাজকর্মে তারা ফিরতে শুরু করেছেন। খুলতে শুরু করেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল ও গণপরিবহনের যাতায়াতও বাড়ছে। গত কয়েক দিনে রাজধানীর চিত্র দেখে বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে। তার পরও হরতালের মতো কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে ২০ দলীয় জোট।
বিএনপি ও জোট সূত্রে জানা গেছে, জোট ঘোষিত হরতাল কর্মসূচির দীর্ঘমেয়াদের কারণে তা ধীরে ধীরে ব্যর্থতার দিকে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতারা আমলে নিয়েছেন। এ জন্য হরতালের বিকল্প কার্যকর কী কী কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়, তা নিয়েও জোটের নেতারা চিন্তাভাবনা করছেন। জোট নেতাদের চিন্তা-উপলব্ধিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে জোটের প্রধান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছেও পৌঁছানো হয়েছে। একই সঙ্গে জনমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি দিতেও নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন নেতারা।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক পথে দেশে বিরোধী দলের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রেখেছে। তারা বিরোধী দলকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয় না। ন্যায্য গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতেও রাজপথে নামলে সরকারদলীয় অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা চালায়। নেতাকর্মীদের ওপর সরাসরি গুলি করে। গণগ্রেফতার চালায়। সরকারের বাধায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারেন না। যে কারণে ইচ্ছে না থাকলেও আন্দোলন চলমান রাখতে বিরোধী দলকে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট লাগাতার কর্মসূচি থেকে বের হয়ে নতুন কার্যকর বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে। যার ইঙ্গিত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে দেওয়া ২০ দলীয় জোটের মুখপাত্র বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলুর বিবৃতিতে পাওয়া যায়।
ওইদিন অন্যসব দাবির কথা বাদ রেখে শুধুমাত্র ‘নিখোঁজ’ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান দাবিতে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন বুলু।
বিবৃতিতে বুলু বলেন, ‘দেশবাসী জানেন দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন করতে ও জনগণের ভোটের অধিকারসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন ২০ দলীয় জোটের প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। সিভিল সমাজ ও পেশাজীবীসহ দেশের প্রায় সকল গণতান্ত্রিক মহল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আলোচনার পথে সংকট নিরসনের অব্যাহত আহ্বান জানিয়ে আসছেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার অধীনে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের দাবি আদায়ে ২০ দল ঘোষিত কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থন রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন এ কর্মসূচি চলার কারণে হয়ত তা কিছুটা অকার্যকর মনে হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি দেশ ও জনগণের জন্য। তাই আমাদের হাইকমান্ড সবসময় জনগণের সুবিধা-অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই কর্মসূচির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে। টানা কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় নিয়েই হাইকমান্ড নতুন কার্যকর কর্মসূচির কথা বিবেচনা করছেন। এ সব কর্মসূচি কবে ঘোষণা করা হবে এখনই বলতে না পারলেও তা শিগগিরিই আসবে বলে মনে করি।’
এ্যাডভোকেট আযম আরও বলেন, ‘হরতাল সারাবিশ্বেই গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে একটি কার্যকর মাধ্যম। অতীতেও আমাদের দেশে অনেক গণদাবি হরতালের মাধ্যমেই পূরণ হয়েছে। আশা করি, আমাদের দাবিও জনভিত্তিহীন এ সরকার মেনে নিয়ে নিজের বিদায়ের পথ সুগম করবে। কেননা, আমাদের এ দাবিতে জনগণের পূর্ণ সমর্থন ও অংশগ্রহণ রয়েছে।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘হরতালসহ আমাদের সকল কর্মসূচিতেই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। হরতাল অকার্যকর হয়ে পড়েছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘এটিও মনে রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগের মতো আমরা ২০ দল কর্মসূচি বাস্তবায়ন বা সফলে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে বাধ্য করছি না। সে কারণে জনগণ একান্তই জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন। গাড়ি-ঘোড়া চালাতেও বাধ্য হচ্ছেন। তাই কিছুটা গাড়ি-ঘোড়া চললেই হরতাল কর্মসূচি অকার্যকর হয়ে পড়েছে তা মনে করি না।’
ন্যাপ মহাসচিব আরও বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের নেত্রী অবশ্যই নতুন কর্মসূচির বিষয় বিবেচনা করছেন। শিগগিরই কার্যকর কর্মসূচি দেখতে পারব।’