যশোরে ‘পুলিশ হেফাজতে’ যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগ
জেলার সদর উপজেলার মানিকদিহি গ্রামের রেললাইনের ধার থেকে বৃহস্পতিবার সকালে যুবদল নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মেজবাহউদ্দিন চন্টুর (৪০) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত যুবদল নেতার ভাই রুহুল কুদ্দুস মন্টু দাবি করেন, মৃত্যুর দু’দিন আগ থেকে তার ভাই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে চলন্ত ট্রেনের নীচে ফেলে দিয়েছে।
তবে পুলিশ দাবি করেছে চন্টু তাদের হেফাজতে ছিল না।
নিহত চন্টু মণিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের রাশেদ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বর ও ওই ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘চন্টুকে হত্যা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। চন্টু শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, ছিলেন একজন জনপ্রতিনিধিও। এভাবে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধি খুন করে পুলিশ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে মানিকদিহি গ্রামে রেললাইনের ধারে এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে তারা পুলিশে খবর দেন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। রেলপুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মার্গে পাঠায়। নিহত চন্টুর ভাই মন্টু লাশ শনাক্ত করেন।
নিহত চন্টুর ভাই মন্টুর দাবি এর আগে মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তার ভাইকে আটক করে পুলিশ। বুধবার সকাল আটটার দিকে যশোর ডিবি পুলিশ চন্টুকে হেফাজতে নেয় বলে ওইদিন দুপুরে নিশ্চিত হন তিনি। কিন্তু পুলিশের কোনো কর্মকর্তা চন্টুকে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করেনি।
বুধবার দুপুরে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফয়েজ আহমেদ, জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রেশমা শারমিন, ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সবাই চন্টু নামে কাউকে আটকের কথা অস্বীকার করেন।
অথচ ভাই মন্টু বুধবার দিনভর এবং বৃহস্পতিবার সকাল দশটা পর্যন্ত চন্টুকে যাতে ডিবি আদালতে হাজির করে সে তদবির করে বেড়ান। সরকারি দলের বেশ কয়েকজন নেতার মাধ্যমে তারা খানিকটা আশ্বস্তও হন যে, ডিবি তাকে আদালতে হাজির করবে।
এরই মধ্যে বেলা সাড়ে দশটার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানতে পারেন, সদর উপজেলার মানিকদিহি রেললাইনের ধারে চন্টুর লাশ পড়ে আছে। এর পর যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ফোন ধরেননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) কেএম আরিফুল হক ফোন ধরে বলেন, ‘ভাই আইজিপি মহোদয় যশোর আসছেন। আমরা সবাই প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। কোথাও কোনো লাশ পাওয়া গেছে বলে শুনিনি। জানতে পারলে জানাব।’
পুলিশের মুখপাত্র বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের কোনো খবর আমার কাছে নেই।’
অন্যদিকে, বুধবার দুপুরে চন্টুর ভাই মন্টু দ্য রিপোর্টকে জানান, যে মাইক্রোবাসে করে চন্টুকে ঢাকা থেকে যশোর আনা হয়েছে, সেটির চালকের বাড়ি মণিরামপুর। মণিরামপুর থানার ওসি মাইক্রোবাসচালককে ডেকে শাসিয়েছেন, ঘটনার ব্যাপারে কাউকে কিছু জানালে চন্টুর সঙ্গে তোমাকেও ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। ভয়ে মাইক্রোবাসচালক কাউকে কিছু বলতে চাইছে না।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট শহিদ ইকবাল বলেন, ‘দুই দিন আগে ঢাকা থেকে চন্টুকে আটক করা হয়। বুধবার সকাল আটটার দিকে তাকে যশোর ডিবি পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়। এখন শুনছি তার লাশ পাওয়া গেছে যশোর সদরের কোনো এক গ্রামে রেললাইনের ধারে।’
তিনি জানান, নিহত মেজবাহউদ্দিন চন্টু ছিলেন মণিরামপুরের খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বর ও ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি খেদাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি। পুলিশই যে তাকে খুন করেছে, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত।
মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্যা খবির আহমেদ বলেন, ‘নিহত চন্টু মেম্বারের বিরুদ্ধে কৃষকলীগ নেতা শফি কামাল ও যুবলীগ নেতা শাহীন হত্যাসহ মোট ১৫টি মামলা আছে। আমরা তাকে খুঁজছিলাম। শুনলাম তার লাশ পাওয়া গেছে রেললাইনের ধারে।’
মামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘গ্রাম্য দলাদলির কারণে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নামে অনেক মামলা হয়। মামলার আসামী হিসেবে তাকে আইনের আওতায় আনা যেত। কিন্তু এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
নিহত মেম্বারের ভাই মন্টু বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বেশিরভাগ সময় চন্টু আত্মগোপনে ছিল। অথচ সম্প্রতি কৃষকলীগ ও যুবলীগের দুই নেতা হত্যাকাণ্ডে তার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ সব মিথ্যা মামলার কারণে আমার ভাইয়ের জীবন গেল। তার ছোট ছোট তিনটি সন্তান। এখন তাদের কী হবে!’