এ্যাসিডিটি থেকে মুক্তির উপায়

Man with stomachacheডা. শাহজাদা সেলিম
এই মুহূর্তে যারা এ লেখাটি পড়ছেন, হলফ করে বলতে পারি, তাদের অনেকেই বহু বছর আগেই এ্যান্টাসিডের দাসত্ব স্বীকার করেছেন। এ্যান্টাসিড না থাকলে যে কি হত, ভাবলেই নিশ্চয় গায়ে জ্বর আসে। সত্যি তো গলার কাছে যদি সব সময় পোঁটলা পাকিয়ে থাকে বা বুক জ্বালা করে, তা হলে কি আর ভাল লাগে? ঠাণ্ডা জল খেলে সাময়িক আরাম হয় ঠিকই, কিন্তু তারপর যে সেই। শুনলে মনে হয় এ্যাসিডিটি আর এমন কি সমস্যা। আদতে এ্যাসিডিটি কিন্তু বেশ গুরুতর বিষয়। খাওয়ার পর যখন আংশিক হজম করা খাবার আর হাইড্রোক্লোরিক এ্যাসিড পেট থেকে উঠে ফুড পাইপে চলে আসে, তখনই হয় এ্যাসিডিটি। ফুড পাইপ এ্যাসিড হ্যান্ডেল করতে সক্ষম নয়, ফলে ইনফ্লেমেশন হতে বাধ্য। আর এখান থেকেই শুরু হয় বুক জ্বালা, চোয়া ঢেঁকুর ইত্যাদি। কিছু কিছু মানুষের মধ্যে আবার এ্যাসিডিটির প্রবণতা বেশি-
অতিরিক্ত মোটা মানুষ বা যারা ওবিসিটিতে ভুগছেন
যাদের হায়াটাস হার্নিয়া আছে
গর্ভবতী মহিলা
যারা বেশি খান
যারা অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান করেন
এবার বলতেই পারেন অল্পবিস্তর এ্যাসিডিটি হলে কি আর এমন ব্যাপার। ব্যাপার অবশ্যই আছে। প্রথমত, ক্রমাগত এ্যাসিডিটি হতে থাকলে ‘কোয়ালিটি অফ লাইফ’ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক বেশি নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। ইচ্ছেমাফিক খাওয়া-দাওয়া করা যায় না। দ্বিতীয়ত, ওষুধের উপর সারা জীবন নির্ভর করতে হয় আর তার একটা নিজস্ব খরচ আর কমপ্লিকেশন তো আছেই। এখানেই শেষ নয়। দীর্ঘদিন এ্যাসিড রিফ্ল্যাক্স হলে ফুড পাইপের ক্ষতি হয়। ব্যারেটস ডিজিজ বা ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এতক্ষণে নিশ্চয় ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন এ্যাসিডিটি কতটা ক্ষতিকর। সুতরাং আজ থেকেই সচেতন হোন।acidity
প্রথমেই ডাক্তার দেখিয়ে আপনার অবস্থাটা জেনে নিন।
ধূমপান ছেড়ে দিন।
যতক্ষণ না সুস্থ হচ্ছেন, একেবারেই মদ্যপান করবেন না।
বেশি খাবেন না, বিশেষ করে তেল মশলা যুক্ত খাবার তো নয়ই (যেমন- লুচি, বিরিয়ানি, চাপ, জিলাপি ইত্যাদি)।
ডিনার করেই ঘুমবেন না।
গলস্টোন বা হার্টের সমস্যা আছে কি না ডাক্তার দেখিয়ে জেনে নিন। থাকলে আরও সতর্ক হতে হবে।
অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন।
আর এত কিছু করেও যদি সমস্যা না কমে, তা হলে বুঝতে হবে ‘ইউ নিড সিরিয়াস হেল্প’। সেক্ষেত্রে-
আপনার যদি হায়াটাস হার্নিয়া থেকে থাকে, তা হলে ল্যাপ সার্জারি করাতে পারেন। আধাঘণ্টা সময় লাগবে মাত্র।
গ্যাসট্রিক বাইপাস সার্জারি করাতে পারেন। এ্যাসিডিটি তো সারবেই। সঙ্গে ওজনও কমবে। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কোলেস্টেরল, আর্থ্রাইটিস, নাক ডাকার মতো সমস্যাও থাকবে না।
আজেবাজে খাওয়া, ধূমপান, মদ্যপানের মতো খারাপ অভ্যাস একটা সময়ের পর নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আপনার ডাক্তার আপনাকে তা ছাড়তে সাহায্য করবে। ডাক্তারকে নিজের গাইড ভেবে অক্ষরে অক্ষরে তার কথা মেনে চলুন। তা হলে সুফল পাবেন।
প্রতিবেদন পড়ে যদি বুঝতে পেরে থাকেন এ্যাসিডিটি কতটা মারাত্মক, তা হলে আজ থেকেই জীবনে পরিবর্তন আনুন।
লেখক
এমবিবিএস, এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম), এমএসিই (ইউএসএ)
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার
১৬৫-১৬৬, গ্রীনরোড, ঢাকা।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend