নতুন ইতিহাস গড়ার লড়াই মঙ্গলবার
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে খেলতে কমেন লাগে, সেই অনুভূতি কখনোই পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি নিউজিল্যান্ডের; দক্ষিণ আফ্রিকাও কখনোই পায়নি সেই স্বাদ। তবে এবার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে কোনো এক দলের। নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা-কোনো এক দল নিশ্চিতভাবেই এবারে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে স্বাদ পাবেই পাবে। তবে কোন দলের ভাগ্যে রয়েছে তা, উত্তর মিলবে মঙ্গলবার ইডেন পার্কের মাঠে।
চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচটি মাঠে গড়াচ্ছে মঙ্গলবার। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায়। ম্যাচের দুই প্রতিপক্ষের নাম নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনাল খেলছে নিউজিল্যান্ড। তবে আগের ৬টি সেমিফাইনালেই হারতে হয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপসদের; ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ এবং ২০১১-এই ৬ বিশ্বকাপেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে।
বর্ণবৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরেছে দেশটি। ওই আসরের সেমিফাইনালেও খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকানরা। এরপর ১৯৯৯ ও ২০০৭ সালের আসরেও সেমিফাইনালে খেলেছিল প্রোটিয়াসরা। তবে ফাইনালের সূর্য দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের।
ইডেন পার্কে সেমিফাইনাল ম্যাচটি তাই দুই দলের জন্যই বিশ্বকাপের ইতিহাস পাল্টানোর লড়াই। সেই লড়াইয়ে কে হারবে আর কে হাসবে শেষ হাসি, উত্তর জানার জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ইডেন পার্কের দিকে।
সেমিফাইনাল ম্যাচ মানেই হ্যাভিওয়েটদের লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে কে ফেভারিট তা বলা মুশকিল। নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালেও এর ব্যতয় ঘটছে না। শক্তিমত্তা আর পারফরম্যান্সের বিচারে এটি হতে যাচ্ছে ‘সমানে সমান’ দুই দলের লড়াই।
নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককুলাম যেমন, তেমিন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স ব্যাট হাতে ভয়ঙ্কর। দু’জনই বোলারদের জন্য সাক্ষাত যমদূত! সামন্য বল খেলেই তারা সংগ্রহ করে নিতে পারেন বড় অঙ্কের রান। দু’জনই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, আক্রমণাত্মক মনোভাবে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে পারেন; আবার দলের প্রয়োজনে বল হাতেও খানিকটা ভূমিকা রাখার সামার্থ্য রয়েছে তাদের। ইডেন পার্কের সেমিফাইনালটি তাই যেমন নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার, তেমনি ম্যাককুলাম ও ডি ভিলিয়ার্সের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইও বটে।
ব্যাটিংয়ে দুই অধিনায়কের পাশাপাশি এক ঝাঁক তারকা ব্যাটসম্যানের লড়াই এটি। একদিকে নিউজিল্যান্ডে যেমন রয়েছে মার্টিন গুপ্তিল, রস টেইলর, কেইন উইলিয়ামসন, কোরে অ্যান্ডারসন, গ্র্যান্ট ইলিয়ট, লিউক রোঞ্চির মতো ব্যাটসম্যানরা; অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, ফাফ ডু প্লেসিস, রিলি রাসউ, ডেভিড মিলার ও জেপি ডুমিনির মতো ব্যাটসম্যানরা। নিজেদের দিনে দুই দলের এই ব্যাটসম্যানদের কোনো একজনই গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য।
একই কথা প্রযোজ্য দুই দলের বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেমন রয়েছে ডেল স্টেইন, মোরনে মর্কেল, কেইল অ্যাবোটদের মতো পেসাররা; তেমনি আবার নিউজিল্যান্ডের রয়েছে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদির মতো পেসার। তবে দলের তৃতীয় পেসার অ্যাডাম মিলনের আকস্মিক ইনজুরি এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের জন্য ক্ষতির কারণ হলেও হতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে যে তার জায়গায় দলে আসা ম্যাট হেনরেই হয়ে উঠতে পারেন ম্যাচের হিরো।
স্পিন বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরির প্রতিপক্ষ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে থাকছেন ইমরান তাহির। চলতি আসরে এই দুই স্পিনারই নিয়েছেন ১৫টি করে উইকেট।
ফিল্ডিংয়েও দুই দলে রয়েছে দুর্দান্ত সব পারফরমার। ক্যাচিং-থ্রোয়িং-বাউন্ডারি স্টপিং-রান আউটের সুযোগ কাজে লাগানো; দুই দলের ফিল্ডিংই এ সব বিষয়ে ১০০-তে ১০০।
সব দিক বিবেচনায় তাই নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটি হতে যাচ্ছে দুই সম শক্তির হেভিওয়েট লড়াই। যেখানে কোনো এক দলের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন ইতিহাস গড়ার মহা উৎসব।