সালমান শাহ’র সিনেমা দেখতে দর্শকের ভিড়
চিরদিনের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সালমান শাহ চলে গেছেন ১৮ বছর হল। তবুও ভক্তদের মাঝে তিনি আজও রয়েছেন চির অমলিন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সালমান শাহ’র মতো তারকাখ্যাতি আর কেউ পায়নি। এখনো সালমান ভক্তরা খুঁজে বেড়ান প্রিয় নায়ককে। মৃত্যুর ১৮ বছর পরও প্রেক্ষাগৃহে সালমান শাহ’র সিনেমা দেখতে ভিড় করেন ভক্তরা।
গেলো শুক্রবার থেকে ঢাকার পদ্মা সিনেমা হলে প্রদর্শিত হচ্ছে সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্র ‘দেনমোহর’। এ ছবিতে সালমানের সহশিল্পী হিসেবে রয়েছেন মৌসুমী। সোমবার বিকেলে পদ্মা সিনেমা হলে কথা হল কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল থেকে সিনেমাটি দেখতে এসেছেন রণজিৎ, দীপংকর। রণজিৎ বলেন, ‘টিভিতে এই ছবিটি অনেকবার দেখেছি। কিন্তু হলে বসে দেখা হয়নি। পদ্মা হলে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে জেনে দেখতে এলাম।’
দেনমোহর সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শফী বিক্রমপুরী। পদ্মা সিনেমা হলের মালিকও তিনি। হলটির নিরাপত্তারক্ষীরা জানালেন অন্য সব সিনেমার মতোই ‘দেনমোহর’ সিনেমাটি দেখতে দর্শকরা আসছেন। সন্ধ্যার প্রদর্শনীতে তুলনামূলকভাবে একটু বেশী দর্শক হচ্ছে।’
পদ্মা সিনেমা হলে মালিক ও দেনমোহর চলচ্চিত্রের পরিচালক শফী বিক্রমপুরী বলেন, ‘বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে নয়, সালমান ভক্তদের চাহিদার জন্যই ছবিটি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এত বছর পর ছবিটি দেখতে দর্শকরা ভিড় করবেন এটা ভাবিনি। সালমান শাহ দর্শকের মনে চিরস্থায়ী আসন তৈরি করে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছবিটি প্রদর্শিত হবে।’
সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ইমন। এরপর সাবলীল অভিনয় নৈপুণ্যে তিনি হয়ে উঠেন সালমান শাহ। খুবই অল্প সময় রাজত্ব করেছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ভুবনে। অভিনয় করেছেন মাত্র ২৭টির মতো চলচ্চিত্রে।
সালমান শাহ প্রয়াত হয়েছেন ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। সালমান শাহ’র প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ হাসান সজিবের হাত ধরে তার অভিনয় জগতে প্রবেশ। সালমান শাহ চলচ্চিত্র ছাড়াও বেশকিছু টিভি নাটকে অভিনয় করেন। এর মধ্যে পাথর সময়, ইতিকথা, আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকত সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী উল্লেখযোগ্য।
সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় কেয়ামত থেকে কেয়ামত, দেনমোহর, তোমাকে চাই। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় বিক্ষোভ ও আনন্দ অশ্রু, চাওয়া থেকে পাওয়া, বিচার হবে। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় জীবন সংসার, মহামিলন, স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নের ঠিকানা, এই ঘর এই সংসার। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় কন্যা দান, মায়ের অধিকার, প্রেম যুদ্ধ, সত্যের মৃত্যু নাই, সুজন সাথী, স্বপ্নের নায়ক, তুমি আমার প্রভৃতি। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় বুকের ভেতর আগুন ও প্রেম পিয়াসী চলচ্চিত্রগুলো।
সালমান শাহ তার অভিনয় জীবনে বেশ কিছু গুণী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে সোহানুর রহমান সোহান, জহিরুল হক, মুহম্মদ হান্নান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জীবন রহমান, শিবলী সাদিক, শফি বিক্রমপুরী, শাহ আলম কিরণ, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, নুরুল ইসলাম পারভেজ, হাফিজ উদ্দিন, তমিজ উদ্দিন রিজভী, মালেক আফসারী, বাদল সরকার, মতিন রহমান, দিলীপ সোম, রানা নাসের, ছটকু আহমেদ, জাকির হোসেন রাজু অন্যতম।
তার সঙ্গে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন শাবনূর, মৌসুমী ছাড়াও শাবনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, দৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি। সালমান শাহ মৃত্যুর আগে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, পরে কাজ করতে পারেননি। এগুলো হচ্ছে শেষ ঠিকানা, প্রেমের বাজী, আগুন শুধু আগুন, কে অপরাধী, মন মানে না, ঋণ শোধ, তুমি শুধু তুমি।