বগুড়া কি বাংলাদেশে না আফগানিস্তানে?

wanderlandঘটনাটি ২০১৩ সালের। কিন্তু কয়েকদিন হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবারো আলোচনায় চলে এসেছে। ওয়ান্ডারল্যান্ড নামে বগুড়ার একটি পার্কের ঘটনা। পার্কের সামনে এসে দাঁড়ালো একটি গাড়ি। নেমে এলেন ক’জন পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট । এদিকে, পার্কের ভেতরের রাস্তায় আগেই লাইন ধরে বসানো হয়েছে ৭২ জোড়া তরুণ তরুণীকে। তাদের জন্য অপেক্ষা করছে শাস্তি। ম্যাজিস্ট্রেট এসে মাইকে ঘোষণা করলেন, জরিমানা দিলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি বললেন, ‘সবার বাবাকে ফোন দেন, যার বাবা আসবে না তাকে আমি জেল দেব আর যার বাবা আসবে তাকে আমি জরিমানা করে ছেড়ে দেব’।

ঘটনা ২০১৩ সালের। কী করেছিলো ওই ৭২ জোড়া ছেলে-মেয়ে? না চুরি কিংবা ছিনতাই নয়, রাজনীতিবিদদের মতোন ঘুষ-দুর্নীতিও নয়, কিংবা বিকৃত যৌনাচারীর মতো ধর্ষণও নয়। ওই ঘটনার ধারণকৃত এক ভিডিও সম্প্রতি হাজির হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে। এতে দেখা যায়; পার্কে প্রেম করতে যাওয়ার অপরাধে এই ছেলেমেয়েগুলোকে এক জায়গায় করা হয়েছে । ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি তিনশ টাকা আদায় করলেন। ভিডিওটিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে বলতে শোনা যায়, ‘এটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি অভিযান । অসামাজিক কর্মকাণ্ডের দায়ে তাদের জরিমানা করা হয়’।

ক’দিন আগে মো. আলী নামে একজন ফেসবুকে ঘটনার ভিডিওটি প্রকাশ করেন। তারপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটিতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অসংখ্য শেয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওটি। সমালোচনায় অনেকেই এই তরুণদের সম্মানহানি করে জরিমানা করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অনেকেই আবার কোন আইনের বলে এ ধরণের অভিযান চালানো হয়েছিল তা জানতে চান।

চলচিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভিডিও দেখে তার ফেসবুক ওয়ালে এই ঘটনাকে অবিশ্বাস্য, লজ্জাজনক অভিহিত করে লিখেছেন-

‘এই ভিডিও দেখে আমি শিউরে উঠেছি। আমি জানতে চাই বগুড়া কি বাংলাদেশে না আফগানিস্তানে? এই ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব কোন রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করছেন? কোন আইনের বলে এই ছেলে মেয়েগুলোকে এভাবে অপদস্থ করা হয়েছে? কোন আইনের বলে জরিমানা করা হয়েছে? আমাদের রাষ্ট্রে কি ছেলে মেয়ে একসাথে পার্কে যাওয়া নিষেধ?’
ফারুকীসহ তরুণদের অনেকেই এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন । মন্তব্য করেও অনেকে এর সমালোচনা করেছেন । আসিফ এন্তাজ নামে একজন লিখেছেন –

‘বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, এটা বাংলাদেশের ভিডিও’।
ফেসবুকে পিনাকী ভট্টাচার্য্য লিখেছেন –

একটা ভিডিও নজরে এসেছে, আমার ফেইসবুক বন্ধুরা কেউ কেউ শেয়ার করেছেন। বগুড়ার কোন এক পার্কে কিছু তরুণ তরুণী যুগলকে পুলিশ সহযোগে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ধরে ধরে জরিমানা করছেন। সাথে সাংবাদিক আছেন, ক্যামেরা আছে, লাউড স্পিকার আছে, জরিমানার রশিদ আছে, ম্যজিস্ট্রেট সাহেবের আস্ফালন আছে, পুলিশের থাপ্পড় আছে।
ম্যাজিস্ট্রেট আবার উল্লেখ করলেন তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একবার কাউকে ধমকে বললেন, ‘কী বিয়ে পড়িয়ে দেবো”?
আমি ভিডিওটা দেখে হতাশ। তরুণ তরুণীদের কেউ কেউ মুখ লুকাচ্ছে, কেউ কেউ অনুনয় বিনয় করছে। আরে বাবা কেন? কেউ একজন বুক চিতিয়ে কেন বলল না, “প্রেম করছি, আপনার অসুবিধা আছে কোন”? প্রেম করা কোন অপরাধ নয়, আইনে নিষিদ্ধ কোন প্রপঞ্চ নয়। মুখ না লুকিয়ে তরুণীরা গেয়ে উঠলো না কেন “বেশ করেছি, প্রেম করেছি করবোই তো”। কেউ বুক চিতিয়ে প্রেমিকার হাত ধরে বলল না কেন, “দিন বিয়ে পড়িয়ে এখুনি।“
ধিক এই তারুণ্যকে। এই অপমান তোমাদের প্রাপ্য ছিল।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend