ম্যাককুলামের ঝড়, ব্যর্থতার একই চক্রে আমলারা
চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রথম সেমিফাইনালে ঐতিহাসিক এক জয় পেয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। আর মঙ্গলবার ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে আরেকবার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় নীল হতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এই প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে খেলবে নিউজিল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যও ছিল একই সুযোগ। কিন্তু দুর্ভাগ্য কিংবা নিজ অযোগ্যতায় দেশে ফিরতে হচ্ছে প্রোটিয়াসদের। রোমাঞ্চকর এই ম্যাচে বরাবরের মতোই ওপেনিং জুটিতে দুর্বলতা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। অন্যদিকে, ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককুলাম। নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটির কিছু বিশেষ ঘটনা ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হল দ্য রিপোর্ট পাঠকদের জন্য—
দক্ষিণ আফ্রিকা এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ওপেনিং জুটিতে কোনো ম্যাচেই ৫০ রান করতে পারেনি। অথচ শেষ ৬টি বিশ্বকাপে কমপক্ষে ৩ বার ৫০ রানের বেশী ওপেনিং জুটি ছিল তাদের। এবারে আসরে তাদের ওপেনিং জুটির রানের গড় মাত্র ১৬.২৫। যেখানে ২০১১ বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটিতে তাদের রান তোলার গড় ছিল ৪২.৮৫।
এই ম্যাচে জয়ের জন্য ২৯৮ রানের লক্ষ্য (বৃষ্টি আইনে) তাড়া করতে নেমে প্রথম ৫ ওভারে নিউজিল্যান্ড ৭১ রান করেছে। ২০০১ সালের (এর আগে বল বাই বল কোনো পরিনসংখ্যান সংরক্ষিত নেই) পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫ ওভারে দলীয় রানের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওয়ানডেতে প্রথম ৫ ওভারে সেরা ৫টি স্কোরই নিউজিল্যান্ডের। এর মধ্যে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা করেছিল ৭৮ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স এই আসরে ৪৮২ রান করেছেন। বিশ্বকাপের কোনো একটি আসরে এটি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের রেকর্ড। এর আগে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে জ্যাক ক্যালিস ৪৮৫ রান করেছিলেন।
নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককুলাম দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২২ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। চলতি বিশ্বকাপে চতুর্থবারের মতো ২২ কিংবা এর চেয়ে কম বলে হাফসেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
২১ উইকেট নিয়ে ট্রেন্ট বোল্ট বিশ্বকাপের এই আসরে এখন অবধি সেরা উইকেট শিকারী বোলার। বিশ্বকাপের এক আসরে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকও তিনি। এর আগে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে একই দেশের পেসার জেফ অ্যালোট নিয়েছিলেন ২০টি উইকেট।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এটি ছিল ৩০০তম ওয়ানডে ম্যাচ। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৮ দলের মধ্যে বর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা বাদে বাকি ৫টি দলই ৩০০টি ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই ম্যাচে জয়ের জন্য ২৯৮ রান (বৃষ্টি আইনে) তাড়া করে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই অস্ট্রেলিয়া ২৮৯ রান সফলভাবে তাড়া করেছিল।
এই ম্যাচে ব্যক্তিগত একটি মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন ব্র্যান্ডন ম্যাককুলাম। দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩০০০ ওয়ানডে রান করেছেন তিনি (৩০১৪ রান)। এর আগে যিনি এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি নিউজিল্যান্ডের সাবেক ওপেনার নাথান অ্যাস্টল (৩৪৪৮ রান)।
দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইনের করা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মোট ২৫ রান (৩টি চার ও ২ ছক্কাসহ) নিয়েছেন ব্র্যান্ডন ম্যাককুলাম। স্টেইনের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটিই সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভার। তার আগের ব্যয়বহুল (২৪ রান) ওভারটি ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।