২০ কবির স্বাধীনতার পদাবলি

Home_আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার
ঢেউ এর সঙ্গে মনোকথন-১

ঢেউ : মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় আপনার ওপর।
সমুদ্র : মাঝে মাঝে? সবসময় নয় তাহলে? কথাটা বলে কিন্তু ভালো করলে না। নিজের অজান্তেই বেশ খানিকটা সাহস দিয়ে ফেললে আমাকে। তা রাগের কারণ?
ঢেউ : আপনি আমার অনেক বড় ক্ষতি করছেন।
সমুদ্র : ছোট বড় ব্যাপারটা আপেক্ষিক, তবে ক্ষতি একটু করছি বৈকি। তোমার চিন্তার সুঁতো কাটছি, তাতে মাঝে মাঝে মনসংযোগ বিঘ্নিত হতে পারে- পড়াশোনোর ক্ষতি হওয়াও অসম্ভব নয়। তা কোন ক্ষতির কথা বলছো বলতো?
ঢেউ : আপনি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও আমার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছেন।
সমুদ্র : ঠিক বুঝলাম না।দাঁড়াও, একটু ভাবতে দাও। তিনজন মানুষের পারস্পারিক অবস্থানের জ্যামিতিটা একটু বুঝতে চেষ্টা করি। তোমার বক্তব্যের মানে কি এই দাঁড়ায় না যে এখন আমি তোমার সবচাইতে কাছের বন্ধুর চাইতেও কাছে? মানে সহজ জ্যামিতির হিসেবে যদি বলি…
ঢেউ : হ্যাঁ, দাঁড়ায় এবং মহাশয়! উহা একটি ক্ষতি!
সমুদ্র : অস্বীকার করছি না, তবে দূরত্বের এই জ্যামিতি যদি সত্যি হয়, তাহলে তো আমার জন্য সে এক উদযাপনের উপলক্ষ্য!
ঢেউ : আপনার একটা বড় সমস্যা কী জানেন?
সমুদ্র : আমার সমস্যা অনেক।শুধু একটা সমস্যার কথা বললে আমাকে গৌরব দেয়া হয়- সেটা আমার পাওনা নয়। তার চাইতে তুমি বরং আমার একটা গুণের কথা বলো। তোমার মুখে আমার গুণের কথা-ভাবতেই দেখো গায়ে কীরকম কাঁটা দিয়ে উঠছে!
ঢেউ : ওহ্! আপনি না- অসম্ভব!
সমুদ্র : সত্যিই। আমি এখনো অসম্ভব। তবে সম্ভব হয়ে উঠবার চেষ্টায় ক্লান্তি নেই।
ঢেউ : গতকাল আপনি একটা খাম দিয়েছিলেন…
সমুদ্র : কিন্তু তাতে কোন চিঠি ছিল না! এমনকি কবিতাও না! এই তো?
ঢেউ : হ্যাঁ।ছিল অনেকগুলো টাকা!
সমুদ্র : ছিল।
ঢেউ : কেন ছিল? আশা করি আপনার পাগলামী এখনো এই পর্যায়ে পৌঁছেনি যে আপনি টাকা দিয়ে কোন অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবার কথা ভাবতে শুরু করেছেন…
সমুদ্র : অর্থের ব্যবহার আলোচনা করবার সঠিক সময় এ নয়, তবু বলি ওটা
ঠিক অর্থ নয়, হয়তো অনর্থই ওর সঠিকতর নাম। হয়তো ও তোমার আসন্ন মুক্তির পথে আমার ওড়ানো পতাকা। ও কিছু কিনবে না। ও তুলবে একটা দেয়াল- প্রতিদিন আমার দিকে ধাবমান শক্তিমান তোমার বিস্মৃতিকে রুখে দেবে- এমনি এক স্মৃতির দেয়াল।

আল হাফিজ
ঝুলে থাকা সম্প্রীতি

 

সৌহার্দে্যর কাঁটাতারে ঝুলে আছে প্রিয় বাংলাদেশ
ঝুলে আছে হৃদয়ে রাঙানো লাল পতাকা সবুজ
স্বপ্ন সমান এই স্বাধীনতা, মা-মাটি-মানবিক প্রেম
কুসুম কুসুম রোদ, হেসে ওঠা ধানতে
শস্য শ্যামল ভূমি, মধুময় আমের বাগান।

ঝুলে আছে সম্প্রীতির ভাজি ভোনা রূপালি ইলিশ
কতিপয় মানুষের লৌকিক বোধ।

নদীর পোয়াতি বুকে-
অনাহুত নীল যুবতি শরীর
চরে চরে ছেয়ে গেছে যমুনার মন
কুমারী মায়ের মতো গাঙের মরণ
বাঁধে বাঁধে বধ হয়ে ঝুলে আছে জল
অবিরল ছলোছল চোখের বয়ম।

পানি পানি হাহাকারে বাতাশের ভারি মুখ
ঝুলে আছে শর বেঁধা পাখির মতোন
তবু তুমি সাদা সাদা কবুতর-পায়রা ওড়াও
বিধবার থান শাড়ি পতাকা ওড়াও
বিবেকের শেষ দ্যুতি, বিবেচনাবোধ-
ওড়াও পালের মতো মানুষের ঠিকানা অসীম !
মায়া খুলে সায়া খুলে শাড়ি খুলে খুলে
বাড়িঘর বাজারের তালা খুলে দাও,
খুলে দাও আকাশ, বাতাশ, বউ, নদীর সুনাম।

সীমানার পার খুলে দিয়ে-
অহেতুক মানুষের জীবনী উড়াও।
আর নয় কাঁটাতারে ঝুলে থাকা, আর নয় ভুল
এবার উশুল হোক যাবতীয় লোভের মাশুল।
মামুন রশীদ
মুক্ত
পাখি বলতেই মুক্ত, স্বাধীন, ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যাবে,

উড়ে যাবে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছেড়ে। এ নিয়ম খাটে না,
হোঁচট খাবে, যে পাখি উড়তে জানে না। কোন
কায়েদাকানুনই তাকে টানে না সবুজ বনানীতে।
সব স্মৃতি অস্বীকার করে, নিঃশ্বাস আটকে যার জন্ম খাঁচায়-
মরা পাতা আর দাউদাউ পলাশের আগুন- সবই তো
স্বেচ্ছায় ছেড়ে আসা অধিকারহীন অশ্রুকণা।
তুমি কি অভিশাপ দাও? নির্দেশ করো প্রেমের গতি?
পাল্টে যাও নি? বদলাও নি কিছুই?
মানুষ মাত্রেই মিথ্যেবাদী- যাদুবিদ্যায় পারদর্শী।
তাই খাঁচা আর মুক্তাকাশ যে অশ্লীল পার্থক্যে
গলি-অলিতে বিভেদের দেয়ালে আঁকে স্লোগান,
তাকে পরিত্যাগ করা এতো সহজ? যে কোন রাতের
শেষ প্রহরে প্রবল তৃষ্ণায় শুকিয়ে আসা কণ্ঠনালী
কোন জলের চিহ্নে ভেজাবে বলো?
জেবুননেসা হেলেন
সবাই বৈষয়িক নয়, অনেকেই দেশপ্রেমিক

পলিস করা বোধ নিয়েই আমরা অনেক মেঘ সাতরে চলি।
বাইরে থেকে দেখতে রোদ ঝকঝকে বলেই মনে হয়
ভেতর যে বরফ হয়ে গেছে তা কী দেখা যায়!

ঝকঝকে চকচকে ভাবটা যে বরফ ছলকেই পড়ে
তা অনেকেই এড়িয়ে গেলেও অজানা নয়…

স্বাধীনতা শব্দটি নাকানি চুবানি খেয়ে বেকারত্ব-কাঁধে থমকে আছে।
বিলাস এখন ক্ষমতা হাতে পেলেই স্বেচ্ছাচারী স্বৈরী রূপ ধরে।

মেঘ থেকে এই দিবসী-মাসে একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র নেমে আসবে আশায়
দিনগুনে ষোলকোটি জনসমুদ্রের বেশিভাগ

গাধার মূলা পছন্দ জেনেও মূলা হাতে গাধার পেছনে হাঁটে ওরা
বুদ্ধিমান হাঁটে সম্মুখে…
স্বাধীনতা দিবসে বুদ্ধিমান হচ্ছো তো!
মিলি সুলতানা
শাণিত চেতনায় দেশপ্রম

বাহুভরে ভরে সুখ আনে অতৃপ্ত জীবনে
গোধূলি লগ্নে অজস্র ফুলের খিলখিল হাসি
কাঁকনের রিনিঝিনি বদলে দেয় সমস্ত পৃথিবী
নিখাদ প্রেম ভালোবাসার সঙ্গে
দুর্দমনীয় ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ খিঁচে আসে
বাঙালীর চেতনায় দেশপ্রেম হবে জাগরূক।

পাশাপাশি থাকবে যুদ্ধাপরাধীর প্রতি আজন্ম ঘৃণা
সহজাত রক্তাক্ষর হয়ে থাকবে
কিন্তু যখন দেখি কেউ সেই চিরায়ত পথ
রুদ্ধ করে দিয়েছে তার ভেতরের
অমানবিকতা আর পশুত্বের খোলসে।
বাঙালীর রক্তের ধারার সঙ্গে স্বাধীনতা
বিপক্ষের রক্তের ধারা কিভাবে মিশতে পারে?
নিজের চেতনাকে যারা কলঙ্কিত করছে
তাদেরকে বুক ফাটিয়ে ধিক্কার জানাই।

পিয়াস মজিদ
তারারুদ্ধ

চলে যায়
বসন্তের পুষ্পদিন
আর আমার মালঞ্চ
এক গোছা অশ্রুগান্ধার।
হাঁস-চলার নদীপথ
আজ অগ্নিবলাকা এক,
সূর্যসিক্ত শাপে
এই
তারারুদ্ধ রাত্রিবাস্তবে
অতঃপর
স্বপ্নের মহড়া শুরু…
ভূমিপাতাল ছাপিয়ে
মেঘের মাঠেও চলছে লড়াই
আবহমান সুন্দ-উপসুন্দের।

নওশাদ জামিল
শেষ ট্রেন
বিবর্ণ স্টেশনে জেগে ওঠে
ভোরের দোয়েল। শিস দিয়ে
বলে যায়, শোনো, হে অতিথি
দূরে যাবে? নাকি সরে যাবে?
ঝরে পড়বার আগে-শোনো
চোখের মণিতে লেগে আছে
কুয়াশাঝলক, ঠোঁটে ঠোঁটে
ছুঁয়ে আছে শ্রমণের ভাষা।

হুইসেলে ভাঙবে কি ধ্যান?
স্টেশনের চায়ের দোকানে
টুংটং শব্দ করে জেগে ওঠে
কোলাহল, শিকারী কুকুর।
রাতজাগা ভোরের দোয়েল
বলে যায়- সরে যাবি নাকি?

সৈয়দ আহসান কবীর
মধ্যরাতের ঝিঁঝিঁ ও জোনাকিরা
মধ্যরাতের মাদকতা ডাকে না আর
ভর করে মায়াবিনী চাঁদ, জোনাক
মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকাও।

ঝিঁঝিঁরা বেশ ভালো-
চরম স্বরে জাগিয়ে রাখে আমায়।
জেগে জেগে উপভোগ করি চাঁদ, চাঁদের আলো-
আলোর মাঝে ফুটে থাকা জ্বলজ্বলে তারা।

ক’বছর হয় জোনাক পাই না।
দুর্লভ পোকার তালিকায় ওদের নাম আছে।
ঢাকা শহরের ইট, বালি, বহুতল ভবন
বোধ হয় পছন্দ না ওদের,
চলে গেছে,
পৌঁছে গেছে পুরানো আবাসে-
নদীর তীরে, পুকুর ঘাটে
অথবা কোনো বটের ছায়ায়।
আমিও যাবো করে ভাবি;
কিন্তু মায়াচ্ছন্ন সেই তীর, ঘাট, ছায়া
সব কেমন যেন ঝাপসা এখন।
অচেনা লাগে সব, যাওয়াও হয় না।
জোনাকের সাথে দেখা হলেই জেনে নেবো করে ভাবি
পথের দিশা
অথচ দেখা হয় না ।

কাটছে রাত, চলছে সময়।
চলুক, থেমেতো নেই।
ক্ষয়ের মাঝে জয়ের ধ্বনি বেশ লাগে।
জোনাক না থাকলেও ঝিঁঝিঁ উপভোগ করি,
কণ্ঠ মিলিয়ে বলি-
জয় জীবনের জয়
জয় সময়ের জয়…

হায়! জোনাকির ক্ষয়ে
জয় হোক আমার চাঁদের।
ফাহাদ চৌধুরী
গোলাপঝড়

দ্বীপের চুলে বিলি কেটে দেয়ার সময় নীলার প্রজাপতির ঝলমলে ডানার মত চোখের গভীরটা কেমন নির্লিপ্ত, নিষণ্ন লাগছিল । বিষন্নপুকুরে ডুব দেয় দ্বীপ । ম্লানালোকে মুখোমুখি দু’জন । ফুঁটে উঠে পাজরের হাঁড়ে নির্মীলিত গোলাপ ।

সাধারণত নীলবর্ষায় গোলাপহৃদয় বৃষ্টিপ্রবণ । হঠাৎ অলকমেঘ উড়ে আসে কণ্টকিত গহন বনে বুকের কার্নিশে, আর মনে । মন্দানিল অভিসারে মেঘের ফেরিওয়ালারা ক্রশম বাজপাখি হয়ে উঠে । ফুল আর পাখিরা বাতাসে ছড়িয়ে দেয় গোলাপঝড়ের সতর্কসংকেত । আদ্রবাতাসের নাওয়ে অজস্র গোলাপ জলজবিহারে মেতে উঠে । বাজপাখির ডানারা ভিজে আসে । গোলাপঝড়ের চোখে প্রণয়াকুল হয়ে উঠে মেঘডম্বর রাত, পাতাদের মন্দ্রস্বর । গোলাপের কলি, পাতা আর পাপড়িগুলো মগ্ন হয় জলকেলীতে, ডুবজলে রচিত হয় জলতৃঞ্চার পদ্য ।

ঝড় শেষে গোলাপের বিভায় আলোকিত নীলা নবম মেঘে বসে জ্যোৎস্না দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে
আহমদ সাইফ
অধরা রাতের ঘুম : আকাশ তোকে বলছি

হৃদয় কাননে প্রস্ফুটিত সৌরভ ছড়িয়ে তবে
হাহাকারে কেঁদে মরি হারিয়ে গেলে কবে?

সুখ সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে রঙিন সুতার নায়
হারিয়ে গেলাম সুদূর কোন হীরা মতির গাঁয়!

হঠাৎ আমি হারিয়ে গেলাম কষ্ট বিহীন
সুখের বীণে দুখের বাঁশি বাজে সারাদিন।

হৃদয় আমার কেঁদে মরে সুদিন খুঁজে
দৃষ্টি হারায় অশ্রুজলে দু’চোখ বুজে।

কষ্টে পাথর হৃদয় আমার যায় হারিয়ে
জীবন নামের কষ্টটাকে যাই মাড়িয়ে।

সুখের খোঁজে অচিন পাখি ধরতে গিয়ে
ধুসর কালো দিনের আলো সঙ্গে নিয়ে
হারিয়ে গেলাম আলোর খোঁজে একা
হলো না হায় কোন্‌ সে পাখির দেখা।

রাত্রি কালো দিনের আলো সঙ্গে করে
হেসে হেসে যাবো শেষে আমি মরে।

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়
পলাতক

আজ যদি সোনাঝুরি চলে যাওয়া যায়
আজ যদি… পথে পথে… জ্যোৎস্নায়…
সোনাঝুরি হয়ে যাওয়া যায়
হাওয়াতেই ঘর বাধি, হাওয়াতেই থাকি
হাওয়ার মধ্যে থেকে চাঁদকেও ডাকি
দেখা হলে, আজও যদি ঢেউ বেড়ে যায়
কথা হলে, ধরো যদি নদী বেড়ে ওঠে
নদী ভরা ঢেউ থেকে কেউ কি বাঁচায়!

এ রকম রাত নামে কে জানে কোথায়
আজ কেউ আসেনি তো, কাল কেউ আসবে না জানি
গতকাল এসেছিল, গতকাল…কতকাল, কোথায় আগামী
হাওয়াতেই দিন সব ভেসে চলে যায়
আজ যদি লাল মাটি আমাকে ফেরায়
শহরের মাথা থেকে আমিও লাফিয়ে নামি নিচে
এ রকম মার্চ মাসে কার কাছে যাব
দেখা হলে আজ যদি স্রোত বেড়ে যায়
কথা যদি পুঁতে রাখি তথা কি হারায়?
হাওয়ার মধ্যে থেকে চাঁদ ডেকে আনি
পলাশকে চিঠি লিখে, ভুল করে শিমুলের কাছে চলে যাই
তোমাকে খায় না জানি এই জ্যোৎস্নায়
আগুনের ফাগুন আমাকে খায়
যদিও জানে না কেউ আছি কোনখানে
ফাগুন আমাকে যে খেয়ে পলাতক-
লজ্জার এই কথা সোনাঝুরি জানে।

মিলন রহমান
আমার স্বাধীনতা

শ্বেত কপোতের উচ্ছ্বল অবগাহন
কার না ভাল লাগে!
তাই ছোট বোনটির পায়রা পোষার শখ।

সুনিপুণ হাতে গড়ে তোলা নীড়ে
ঠাঁই মিলল দু’টি কবুতরের।
পোষ মানা পাখি দু’টির
খাবার-পানির কমতি ছিল না।
তবুও অজ্ঞাত শিকারির
হিংস্র নখের আচঁড় থেকে
তাদের বাঁচানো গেল না!

নতুন এক জোড়া পায়রা
ঠাঁই পেল সেই পুরনো নীড়ে।
সবকিছু ঠিকই ছিল-
তবু শান্তির দূত উজাড় উড়াল
দিল অজানায়।

ফের আনা হলো আরও
এক জোড়া কপোত কপোতীকে।
পুরানো ঘরটিকে ঘিরে
গড়ে তোলা হলো
নতুন নিরাপত্তাবেষ্টনি।
সেই আবদ্ধ ঘরে মুক্তি মিলল
অবশেষে শান্তির দূত দু’টির।

এই শ্বেত কপোত আজ
আমার স্বাধীনতার বিমূর্ত প্রতীক।
হাবীবাহ্ নাসরীন
তুই কি আমার মা

তোর জন্য বুকের ভিতর ভীষণ রকম মায়া
সাঁঝ-প্রভাতে, মধ্যরাতে দুইচোখে তোর ছায়া।

তোর কারণেই বাঁচিয়ে রাখি খামখেয়ালি মন,
তুই রয়েছিস তাইতো মধুর একলা থাকার ক্ষণ।

তুই কি আমার মায়ের আঁচল, শীতল করে রাখিস?
বাবার মত ভরাট সুরে নামটি ধরে ডাকিস!

ভাত মাখিয়ে মুখে ধরিস, তুই কি আমার মা?
ভালোবাসার এমন ভাষা কেউ তো জানে না!

গভীর কালো রাত্রি শেষে রক্তরাঙা ভোর
বাংলা মা তোর হাসিটুকুই বেঁচে থাকার জোর।

হাসি ইকবাল
অন্য কোন গ্রহ

বুঝতে পারছি না
আর কত রক্ত দিলে বাংলার মাটি উর্বর হবে?
ষোল কোটি জনতা আজ প্রস্তুত রক্ত দিতে
তোমাদের তো মানুষ চাইনা
চাই মাটি !
চাই মাটি ! চাই মানচিত্র !
আমার দুঃখিনী বর্ণমালা কাঁদে
কাঁদে স্বাধীনতা ছিন্নভিন্ন পুষ্পের মত
বিষণ্ন বরষায়।
তোমাদের মধ্যে আজ খিস্তি-খেউড়ের পৌষ মাস
বিষাক্ত বাতাস
পোড়া লাশের গন্ধ
জল্লাদের উল্লাস নৃত্য অথচ
জনতার মঞ্চ কাঁপিয়ে
তোমাদের আবেগি বক্তৃতা
চায়ের কাপে বুদ্ধিজীবীর টকশো ঝড়
রাজপথে লোক দেখানো সম্মেলন
হিংসা আর লালসার
প্রলয় মহাপ্রলয় চারিদিকে
আমাকে ভাবায় ।
ভাবায় আমার মত শত শত দেশপ্রেমিক জনতাকে
আমরা ভালো নেই
জীবনের তীর্থতা আজ ব্যর্থ
চারিদিকে ধ্বংসের আহ্বান
যেন জন্মই আমার আজন্ম পাপ ।
আমায় ক্ষমা কর বাংলা আমি আর বলতে পারিনা –
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে –
বরং আজ আমি নিজেই আছি দ্বিধাদ্বন্দ্বে
এই মৃত্যু উপত্যকার দেশ আমার হতে পারেনা
এটা অন্য কোন গ্রহ
অন্য কোন জগৎ ।

মুকুল মজুমদার
অংশিদার

একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস পড়ে
গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়।
একই দিনের ঘটনা প্রবাহ শুনে
দেহের রক্ত টগবগ করে ওঠে।
আর যদি নিজেই জন্মিত
থাকতাম সেদিন বাংলার মাটিতে।
বাধা দেয়ার সাধ্য ছিলনা কারো
অস্ত্র তুলে নিতাম শক্ত হাতে।
কিশোর বয়সও হতো যদি
সেইদিন মাত্র ষোল কিংবা সতের।
ফিরে কি আর দাঁড়াতাম আমি
মাও যদি পিছন থেকে ডাকতো।
আমার একটি মাকে কষ্ট দিয়ে
শত মায়ের চোখে স্বপ্ন বুনতাম।
ঐ লাল সবুজের পতাকা বিজয়ের
তিল পরিমাণ অংশিদার আমিও হতাম।
বিন আরফান
আমার স্বাধীনতা
ভীষণ কাঁদতে মন চাইছে
সেভাবে যেভাবে বাংলার বিজয়ে
উল্লাস করেছিলাম ।
কান্না পায়, কাঁদতে পারি না,
বুক ফেটে ফেটে যায় ।
স্প্রিন্টার, পটাশ আর কার্বনের মিশ্রণে
বিস্ফোরক জমাট বেধেছে বুকে ।
কাউকে দেখাতে পারি না,
বয়েও বেড়াতে পারছি না ।
একটু ভালোবাসার পরশ পেলে হয়তো
গর্জে ঝড় বেগে স্প্রিন্টার বেরুবে
কিন্তু বুকের ক্ষত হয়তো আর শুকাবে না ।

হায়রে জীবন, শুধু বেঁচে থাকার জন্য !
স্বাধীন দেশে, সমাজে, সংসারে আমি
কতইনা পরাধীন
কেউ বুঝে না, বুঝতে চায়ও না ।
স্বাধীন হয়েও পরাধীন সৈনিকের বীর বেশে
নির্লজ্জের মতো বেঁচে আছি ।

যখন কেউ জানতে চায়, কেমন আছো?
কতইনা মিথ্যুক আমি, বলি-
ভালো আছি, বেশ ভালো…
নাফে নজরুল
রক্তের বিনিময়
এই আকাশ এই রোদ ফুল ফল মাঠ
মানুষের মুখে মারা ভয়ের কপাট।
নেই কারো সুখ মনে, নেই মনোবল
চারদিকে চেয়ে থাকা হায়েনার দল।

ঘরহীন মানুষের চোখে নেই ঘুম
মন খুলে কথা বলা আকাশ কুসুম।
মানবতা ভেসে থাকে নদী আর ঝিলে
সময়ের হাত ধরে এক সাথে মিলে।
মানুষের মুখে আসে ভেসে এক সুর
বাংলাকে স্বাধীন করো, হায়েনাকে দূর।

এই ভাবে নয় মাস দিয়ে গেল প্রাণ
রক্তের বিনিময় পেলো সম্মান।
এনাম রেজা
বদলে যাওয়া

সৌরজগতের আবর্তিত নক্ষত্র-গ্রহ
সময় ক্ষেপণে বদলে যায় মহাকাল।
বিবর্তন ঘটে জীবজগতে।
পরিবর্তনও ঘটে কোথাও কোথাও
আমূল বদলে যাওয়াও দেখেছে এই পৃথিবী।
মহাকালের সাক্ষী হয় একলা কালপুরুষ।
পাহাড় সমতলে, সাগর-মহাসাগরে বদলে যায়।
বদলে যায় ভাটা-জোয়ারে আর দিন-রাতে।
মানুষগুলোও বদলে যায় ক্ষণে ক্ষণে।
শিশু বদলে যায় মহাকালে ভর করে বৃদ্ধ বয়সে।
এমন বহু বদলে যাওয়া দেখেছি।
আমি আর আমার মা বেশ খানিকটা বদলে গেছি।
মা’র কালো চুলে সাদা পাক ধরেছে।
সেই সাথে একটু একটু করে বদলে যেতে দেখেছি প্রিয়াকেও।
শুধুমাত্র অপরিবর্তিত রয়ে যেতে দেখেছি পুরনো সকল স্মৃতি।
বদলে যাওয়া মানুষগুলোর সাদা-কালো স্মৃতি লোনা জলে ভরে ওঠে বদলে যাওয়া চোখ। মহাকাল এবং কালপুরুষের সাক্ষী হয় একমাত্র ফেলে আসা পুরনো সব স্মৃতি।
ইকবাল মাহফুজ
যারা এসেছিল রাতে

এখানে যারা এসেছিল আগে
রেখে গিয়েছিল পায়ের ছাপ
অনেক গোলাপ ফুটেছিল বাগে
মুছে গিয়েছিল নগ্ন পাপ।
এখানে আগে হেঁটেছিল যারা
তাদের চরণে রাগ ছিল
তাদের চলনে মেতেছিল পাড়া
নতুন আওয়াজ ডাকছিল।

এখানে যখন এসেছিল কেউ
সাথে এনেছিল ভোরের তান
তাদের বক্ষে উঠেছিল ঢেউ
রেখে গিয়েছিল ফুলবাগান।

এখানে যারা এসেছিল কোন রাতে
একটি গোলাপ দিয়েছিল এই হাতে।
অতশী বর্ণা পোদ্দার
শূন্য মন

আজ মরা রোদে এমনি করে দিনটি কেন ঢাকা?
কালো মেঘে ঢেকে আসে রঙিন স্বপ্ন আঁকা!
নতুন পাতা হয় মলিন,
চলছে কোন হতাশ দিন।
যেন মনের কালোয় আকাশ ঢেকে রাখা,
যেমনি করে স্বপ্ন মরে তেমনি স্বপ্ন আঁকা।
হয়তো বলতে পার মনের থাকতে হবে ভালো,
কেমন করে হবে নেই যেখানে সত্যের আলো?
সত্য এখানে মুখ লুকিয়ে থাকে,
সত্যকে সব মিথ্যা দিয়ে ঢাকে।
এখানে দিনের আলো নদীর ঘোলা জলে হয় ছাঁকা,
তাইতো মনে নেই আলো, সব শূন্য আর ফাঁকা…

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend