উত্তাল মার্চ ২৬, ১৯৭১; সারা দেশে আতঙ্ক, শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ
১৯৭১ সালের এই দিনে সারা দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ। এর আগের রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আতর্কিত হামলায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল।
শহর থেকে মানুষ গ্রামে ছুটতে শুরু করে। গ্রাম থেকে অনেকেই সীমান্তের ওপারে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করে। এই দিন থেকেই আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিপক্ষে দেশ প্রেম ও অসীম সাহসিকতা নিয়ে লড়েছিল বীর বাঙালী।
আগের রাতের ভয়াবহতার চিহ্ন নিয়ে সেদিনও রাঙা প্রভাত এসেছিল বাংলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কিন্তু কী বীভৎস, কী নির্মম প্রভাত ছিল! চারপাশে ধ্বংসস্তুপ আর লাখো মানুষের বিকৃত লাশ।
চোখের সামনে সারি সারি স্বজনের লাশ। এই ভয়াল চিত্রের মাঝেই অসীম সাহসী বাঙালী শপথ নিয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন করার। দেশকে শত্রুমুক্ত করে তবেই ঘরে ফিরবে তারা।
সাইমন ড্রিং-এ দিনের বর্ণনা দিলেন এভাবে-২৬ মার্চ সকাল ১০টায় গেলাম ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত ভুট্টোর স্যুটে। দেখলাম রাত জাগার ক্লান্তি তার চোখে মুখে। সামনে ছাইদানি বোঝাই সিগারেটের পোড়া টুকরো। বুঝতে চেষ্টা করলাম তিনি কিছু জানেন বা জানতেন কিনা। যাই হোক, কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম সৈন্যরা ভুট্টোকে হোটেল থেকে নিয়ে যাচ্ছে। খুব ভীত দেখাচ্ছিল তাকে।
দুপুরের দিকে আবার গুলির শব্দ পেলাম। এবার পুরনো ঢাকার দিক থেকে। তখন বিকেল ৫টা। জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকালাম। জনশূন্য রাস্তা। চারদিকে অদ্ভুত এক নীরবতা। মাঝে মাঝে হুঁসহাস সামরিক ট্রাক আর জিপের আনাগোনা। এ রকম অবস্থার মধ্যে হোটেলে ঢুকলেন সেনাবাহিনীর এক মেজর। নাম জানা গেল সালেক সিদ্দিক।
তিনি জানালেন, মুজিবের অনুগতরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করায় তাদের সঙ্গে সৈন্যদের লড়াই হয়েছে। পরে বুঝেছিলাম, কতো বড় মিথ্যা ভাষণ ছিল এটা। মেজরের কাছে আমাদের ভাগ্য জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, তোমরা যদি ঢাকা ত্যাগ না কর তাহলে তোমাদের জন্য এক বিশেষ পার্টির ব্যবস্থা করব। আমি জানি না, ওই পার্টি বলতে মেজর কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। সেসময় মেজরের কাছে এমন ভাব করলাম যে, ঢাকা ছাড়তে আমি প্রস্তুত। কিন্তু যখন সাংবাদিকদের ট্রাকে ওঠানোর জন্য জড়ো করা হচ্ছিল তখন আমি লুকিয়ে সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমের প্যাসেজ ধরে ছাদে আশ্রয় নিলাম।
সঙ্গে ছিলেন এসোসিয়েটেড প্রেসের ফটোগ্রাফার মাইকেল লরেন্ট। আধা ঘণ্টা পর যখন নিচে নেমে এলাম তখন হোটেলের রান্নাঘরের বাঙালী কর্মচারীরা আমাদের সবচেয়ে ভালোভাবে লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন।