সিডনিতে সংখ্যাটা ‘২’ করার স্বপ্নে ধোনিরা
চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল মাঠে গড়াচ্ছে বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টার এই ম্যাচে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। ম্যাচের ভেন্যু সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, যে মাঠে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলাটা ভারতের জন্য মোটেও সুখকর নয়। গত ৩৫ বছরে এই মাঠে মাত্র একবারই অস্ট্রেলিয়ানদের হারাতে পেরেছে ভারতীয়রা। তবে বৃহস্পতিবার এই পরিসংখ্যানে জয়ের সংখ্যাটা ‘২’ করার স্বপ্নে ভাসছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। যা করতে দেওয়া হবে না বলে অস্ট্রেলিয়ানরা আবার হুমকি দিয়ে রেখেছে। আরেকটি ক্রিকেটযুদ্ধে জয়ের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই সিডনিতে খেলতে নামছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
নিজ মাটিতে অস্ট্রেলিয়ানরা অপ্রতিরোধ্য হবে, এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। কেননা, স্বাগতিকরা সব সময়ই ‘কন্ডিশন’ নামক বিষয়টির কারণে প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে থাকে। সেই হিসেবে সেমিফাইনাল ম্যাচটিতে ভারতের চেয়ে এগিয়েই থাকছে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপ পর্বের খেলায় নিজ মাটিতে কোনো ম্যাচ না হেরে সেই সত্যকে আরও বেশি ভিত্তি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ানরা। যদিও ধোনির ভারতও গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রতিটি ম্যাচ এবং কোয়ার্টার ফাইনালের পারফরম্যান্স দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তারাও কম নয়। এই কন্ডিশনে কঠিন প্রতিপক্ষকেও ঘায়েল করার ক্ষমতা রয়েছে তাদের। এরপরও ম্যাচটা সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হচ্ছে এবং সেখানে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলেই ধোনিদের খানিকটা শঙ্কায় থাকতেই হচ্ছে। বিশ্বকাপ শুরুর দুই মাসে আগের স্মৃতি আর সিডনির মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের অতীত পরিসংখ্যানই ধোনিদের জন্য খানিকটা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বকাপ শুরুর দুই মাস আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। আসর শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ও ত্রিদেশীয় (ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড) ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে তারা। কিন্তু ফল খুব একটা সুখকর ছিল না সেখানে। অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে টেস্ট সিরিজ হারার পর ত্রিদেশীয় সিরিজেও হারতে হয়েছে ভারতীয়দের। এদিকে, ১৯৮০ সাল থেকে সিডনির মাঠে এখন অবধি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোট ১৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে ভারত। এর মধ্যে ১২টিতেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। একটি পরিত্যক্ত হয়েছে। আর একটিতে জিতেছে ভারত (২০০৮ সালের ২ মার্চ)। এসসিজির মাঠে তাই অনেক দিক থেকেই মানসিকভাবে এগিয়ে থাকছে অস্ট্রেলিয়া।
যদিও এই মাঠে বলের চেয়ে ব্যাটের আধিপত্য বেশি দেখা যাচ্ছে বলে ধোনিরা খুশি হতে পারেন। কারণ, ভারতের ব্যাটিং লাইন যে দুর্দান্ত রকমের শক্তিশালী তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও দু্’টি কারণে অবশ্য মুখে হাসি নিয়ে সেমিফাইনালের এই লড়াইয়ে নামতে পারে ভারত। এর একটি স্পিন জাদুর সম্ভাবনা, অন্যটি দর্শক।
সিডনির মাঠে স্পিনাররা দারুণ সাফল্য পেয়েছে চলতি বিশ্বকাপে। এই তো ক’দিন আগেই কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার ইমরান তাহির ও জেপি ডুমিনি নিজেদের মধ্যে ৭ উইকেট ভাগাভাগি করে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ১৩৩ রানে গুটিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সুবাদে সহজেই ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃহস্পতিবারও যদিও এসসিজি তার চরিত্র ধরে রাখে তাহলে শেষ হাসি ভারতের মুখেই শোভা পেতে পারে। কেননা, রবিচন্দ্রন আশ্বিন ও রবিন্দ্র জাদেজার মতো দু’জন কোয়ালিটি স্পিনার রয়েছে ভারতের। চলতি আসরে যারা মোট ২১ উইকেট (আশ্বিন ১২, জাদেজা ৯) নিয়েছেন। এখানে পিছিয়ে থাকছে মাইকেল ক্লার্করা। কেননা, অস্ট্রেলিয়ান দলটিতে ঠিক তেমন আহামরি কোনো স্পিনার নেই।
এদিকে, সেমিফাইনাল ম্যাচটি জন্য যে পরিমাণ টিকেট ছাড়া হয়েছিল এর ৭০ ভাগই কিনেছে ভারতীয় সমর্থকরা। ফলে মাঠের খেলা চলাকালে মাইকেল ক্লার্করা নিজেদের ‘নিজ গৃহে পরবাসী’ মনে করলেও করতে পারেন।
ব্যাটিং শক্তি ও পেস বোলিং আক্রমণের দৃষ্টিকোণ থেকে দুই দলের লড়াইটা বেশ জমজমাট হতে পারে। কেননা, দুই দলেই যেমন বড় ইনিংস খেলার মতো একাধিক ব্যাটসম্যান রয়েছে, তেমনি রয়েছে গতির বলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মতো একাধিক বোলারও। তবে স্পিনারের উপস্থিতির তারতম্যই এ ম্যাচে গড়ে দিতে পারে জয়-পরাজয়ের ভাগ্য।
১৯৭৫ সাল থেকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে নেমে কখনই হারেনি অস্ট্রেলিয়া। সিডনির মাঠেও ক্লার্করা সেই রেকর্ড অক্ষুন্ন রাখবেন নাকি ধোনিরা এই মাঠে ভারতের দ্বিতীয় জয়ের ইতিহাস রচনা করবেন তা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকে।
তবে যেই দলই জিতুক কিংবা হারুক, এসসিজির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে যে বৃহস্পতিবার একটি হাইস্কোরিং ম্যাচ দেখতে পারেন ক্রিকেট ভক্তরা। কেননা, এই মাঠে চলতি আসরে গ্রুপ পর্বের দু’টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর কোয়ার্টার ফাইনালের একটি খেলা হয়েছে। আফগানিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচটি লো স্কোরিং হলেও গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে দুই দলই নিজ নিজ ইনিংসে ৩০০-এর উপরে (অস্ট্রেলিয়া ৩৭৬, শ্রীলঙ্কা ৩১২) রান করেছিল। আর কোয়ার্টার ফাইনালে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪০৮ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এ দু’টি ম্যাচেই কিন্তু জয় পেয়েছে আগে ব্যাটিং করা দল।