তিন সিটি নির্বাচনে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলবে
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুসারে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অস্ত্রধারীদের ঠেকাতে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে দুটি সিটির নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এলাকায় বিশেষ অভিযানের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে স্ব-স্ব এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন থেকেই বিশেষ অভিযান পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তফসিল ঘোষণার ডিএমপির নির্দেশনা সকল উপ-পুলিশ কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বুধবার পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী এলাকার উপ-পুলিশ কমিশনার, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং মহানগর গোয়েন্দাদের সমন্বয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা করা হয়। কর্মপরিকল্পনার মধ্যে সন্ত্রাসীদের আটক, অস্ত্র উদ্ধার ও কারাবন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওযা হয়। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি অনুসারে প্রার্থীদের চলাচলে পুলিশ সহায়তা করবে। নিরপেক্ষতা বজায় না রাখলে এবং প্রার্থীদের কাছ থেকে উপহার সামগ্রী গ্রহণ করা হলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত পদস্থ এক পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। ঢাকা সিটির মধ্যে ইতোমধ্যে কিছু আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই কারাবন্দি। কারাগার থেকে তারা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে— কেন্দ্রীয় কারাগারে যারা আছে তাদের ঢাকার বাইরের কারাগারে স্থানান্তর করা হবে। এ ছাড়াও কারাবন্দিদের সঙ্গে বাইরের যেসকল সন্ত্রাসীর সখ্য রয়েছে তাদের তালিকা হালনাগাদ করে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারদলীয় কিছু ব্যক্তি। সরকার দলীয় অনেক কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীদের অনেক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী-সমর্থক রয়েছে। তারা নির্বাচনের সময় পেশিশক্তির পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবহার করার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। তাদের মধ্যে যে সকল প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সম্ভাব্য প্রতিটি প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত এবং অতিথি কর্মকাণ্ডের তথ্য আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে সংগ্রহ করার জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দার এক পদস্থ কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অনেক এলাকার নেতাকর্মীদের কাছে বৈধ-অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ওই সকল নেতার একটি তালিকা তৈরির কাজ করতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ (এসবি) একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরীর শেষে বৈধ অস্ত্র থানায় জমা দেয়ার একটা সিদ্ধান্ত আসবে। সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রধান কিংবা ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে নির্বাচনী এলাকার বৈধ অস্ত্র বহনকারীদের থানায় অস্ত্র জমা দেয়ার কথা বলা হতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচনী এলাকার অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করার দায়িত্বও গোয়েন্দাদের দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের বৈঠকে নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তাকে তিন স্তরে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচনের আগের দিনের নিরাপত্তা প্রথম স্তর, ভোটগ্রহণের দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপত্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকে পরবর্তী সময়ের নিরাপত্তা তৃতীয় স্তরে রাখা হয়েছে।
নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেছেন, যে কোনো নির্বাচনের সময় কিছু অপরাধী সক্রিয় হওয়ার অপচেষ্টা করে। সেসব বিষয় মাথায় রেখে ঢাকা সিটি নির্বাচনের বিশেষ কিছু উদ্যোগ ডিএমপি গ্রহণ করছে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।