নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে সরে আসছে বিএনপি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তবে দলটির এই অংশগ্রহণকে অনেকে ‘রাজনৈতিক শুভবার্তা’ হিসেবেই দেখছেন। এর মাধ্যমে একটি বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে সরে এসে দলকে এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে বিএনপি। এছাড়া সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা উৎসাহ পাবেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক আমেনা মহসিন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি প্রিয়.কম-কে টেলিফোনে বলেন, ‘শুধু জনসমর্থনের উপর ভর করেই বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। নির্বাচনে বিএনপি জিতে গেলে প্রমাণ হবে তাদের জনসমর্থন আছে, যার মাধ্যমে তাদের আগের ইমেজ ফিরে আসবে। এছাড়া এই জয় তাদেরকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতেও সাহায়্য করবে।’
তবে হেরে গেলেও বিএনপি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হবে না বলে মনে করেন আমেনা মহসিন।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম মনজুর আলম। এর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক মির্জা আব্বাসের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
যদিও বুধবার সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে যে তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা গোটা দেশবাসীর ইচ্ছার সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
তারপরও সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেয়া কেন? এমন প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন শুক্রবার টেলিফোনে প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘আমরা আশা প্রকাশ করি অতীতের মতো প্রহসনের নির্বাচন এবার হবে না। এই নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ হয় সেজন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আর প্রহসনের নির্বাচন হলে সরকারের যে নগ্ন চেহারা, তা জনগনের কাছে প্রকাশ পাবে এবং এজন্য একদিন সরকারকে জনগনের আদালতে জবাবদিহি করতে হবে।’
শুক্রবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছেন ‘শত নাগরিক কমিটি’। সাক্ষাত শেষে কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আগে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হলে ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেবে।
নির্বাচন কমিশন কী কী পদক্ষেপ নিলে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হয়েছে বলে আপনি মনে করেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে এমাজ উদ্দিন বলেন, প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না। যারা কারাগারে আছেন তাদের জামিনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচারের জন্য মিছিল-সমাবেশ করতে দিতে হবে। সব ভোটার যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে সে পরিবেশে তৈরি করতে হবে। তাহলেই বুঝা যাবে পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) ভাগ করে উত্তর ও দক্ষিণে আলাদা দুটি সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার। নির্বাচিত মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে দুই সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগের ৯০ দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কথা বলে তা এড়িয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন। এরপর চার বছর পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এর আগে নির্বাচন হয় ২০১০ সালের ১৭ জুন। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হতে যাচ্ছে চট্রগ্রামে। এই তিন সিটির প্রায় ৬১ লাখ ভোটার আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করছে নির্বাচন কমিশন।