দীর্ঘ প্রতিক্ষিত বিশ্বকাপে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড
এর আগে কখনো ফাইনালে খেলারই সুযোগ হয়নি নিউজিল্যান্ডের। তবে এবার এমন একটি সময়ে আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনালে দলটি চুড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যখন তারা নিজেরাই গোটা টুর্ণামেন্টের যৌথ আয়োজক। প্রতিপক্ষ দলটিও টুর্নামেন্ট আয়োজনের আরেক স্বাগতিক দেশ। তবে পার্থক্য হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া এর আগে ৪ বার বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছে। পাশাপাশি এইবার নিয়ে সপ্তমবারের মত ফাইনাল ম্যাচে লড়তে যাচ্ছে অসিরা । তাও আবার নিজেদের মাটিতে।
রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় মোলবোর্নে শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভি, মাছরাঙ্গা এবং গাজী টেলিভিশন।
নিউজিল্যান্ডের জন্য এই ম্যাচের বড় সার্থকতা হচ্ছে প্রথমবারের মত ফাইনালের টিকিট পাওয়া দলটি চলতি টুর্ণামেন্টে এখনো হারের মুখ দেখেনি। টানা আট ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ফোইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ব্ল্যাক ক্যাপস’রা। ওই জয়ের মধ্যে একটি আবার ফাইনালের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের লো স্কোরিং ম্যাচে তারা এক উইকেটে হারিয়েছিল অস্ট্রেলীয়দের। তবে জয়ের জন্য ১৫২ রানের টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে রিতিমত ঘাম ঝড়েছে কিউইদের। শেষ পর্যন্ত এক উইকেটে জয়লাভ করে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দলটি। ওই একই ভেন্যুতেই আরো একটি রোমঞ্চর জয় পেয়েছে কিউইরা। উত্তেজনাপূর্ণ সেমিফাইনালে তারা শেষ দুই বলের ¯œায়ুক্ষয়ি এক অভিযান থেকে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে গ্রান্ট এলিয়েটের ছক্কার কারণে। কারণ শেষ দুই বলে ম্যাচ জয়ের জন্য স্বাগতিক কিউইদের প্রয়োজন ছিল ৫ রান। তবে ওই ছয় হাকানোর কারণে শেষ বলটি হাতে রেখেই চার উইকেটের জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড। এই নিয়ে সপ্তমবারের প্রচেস্টায় সেমিফাইনাল বাঁধা পেরুতে সক্ষম হয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপস’রা। ৪০ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে রাগবি পাগল জাতিটি প্রথমবারের মত এখন দাঁড়িয়ে আছে শিরোপা থেকে মাত্র এক ম্যাচের দূরত্বে।
নিউজিল্যান্ডের যতই আশা ভরসা থাকুকনা কেন এই ম্যাচে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে ওডিআই ক্রিকেটের বিশ্ব র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়া। বাড়তি সুবিধা হিসেবে তাদের রয়েছে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) সুবিধা। ঐতিহাসিক এই মাঠে নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ ওডিআই ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল ৬ বছর আগে, ২০০৯ সালে।
অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বলেছেন যে এমসিজির কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিউইদের বেশ বেগ পেতে হবে। কারণ চলতি আসরে বিগত ৮ ম্যাচের সবগুলো ম্যাচই তারা খেলেছে তাসমান সাগর তীরবর্তী নিজ দেশের ভেন্যুতে।
ক্লার্ক বলেন,‘ নিউজিল্যান্ড তাদের যে সব ভেন্যুগুলোতে খেলেছে, সে তুলনায় এখানকার কন্ডিশনের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। তবে আমরা জয়ের জন্য সামর্থ্যের পুরোটাই উজাড় করে খেলব। চলতি টুর্ণামেন্টে সেরা ফর্ম প্রদর্শন করেছে নিউজিল্যান্ড। যোগ্য দল হিসেবেই তারা ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে দারুন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা পুর্ন পরিবেশ রয়েছে। ম্যাচের অন্যতম একটি দিক হচ্ছে দু’টি আয়োজক দেশ ফাইনাল খেলছে, যা খুবই স্পেশাল একটি বিষয়।
রোববার ফাইনাল ম্যাচে কিউই একাদশে যে দলটি খেলবে তাদের মধ্যে অন্তত চারজন খেলোয়াড়ের এর আগে এমসিজিতে খেলার কোন অভিজ্ঞতা নেই। এরা হলেন ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসন ও কোরি এন্ডারসন এবং ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হ্যানরি। যদিও ৯০ হাজার দর্শক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন বিশাল স্টেডিয়ামের দর্শকদের সামনে নিজেদের মানিয়ে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হবেনা কিউইদের। কারণ সেখানে সর্বশেষ ৫ ম্যাচের তিনটিতেই অসিদের হারিয়ে দেবার অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে নিউজিল্যান্ডের। ছয় বছর আগে সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও জয়লাভ করেছে নিউজিল্যান্ড।
ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেটে ২২৫ রানের পুজিকে ৭ বল হাতে রেখেই টপকে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ফলে ৬ উইকেটে জয়রাভ করে সফরকারী নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটিতেও জয়ের নায়ক ছিলেন তারকা ব্যাটসম্যান এলিয়ট, যিনি সেমিফাইনালে চাপের মধ্যেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ৬১ রান করে জয়ের নায়ক বনে গেছেন।
এদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ২৩৭ রান সংগ্রহ করে বিশ্ব রেকর্ড গড়া কিউই ব্যাটসম্যান গাপটিল এখন টুর্ণামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীরর আসন থেকে মাত্র ১০ রান দূরত্বে অপেক্ষা করছেন। বর্তমানে ৫৪১ রানের সংগ্রহ নিয়ে আসনটি দখল করে রেখেছেন লংকান ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা।
আসর থেকে ২১ উইকেট তুলে নিয়ে এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর আসনে অবস্থান করছেন বাঁহাতি কিউই বোলার ট্রেন্ট বোল্ট। তার চেয়ে এক উইকেটে পিছিয়ে আছেন অস্ট্রেলিয় পেসার মিশেল স্টার্ক। এছাড়া সমান সংখ্যক ১৫ টি করে উইকেট সংগ্রহ করেছেন সিমার টিম সাউদি ও স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। রোববারের ফাইনাল ম্যাচের পর সম্ভবত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছেন ৩৬ বছর বয়সী কিউই অল রাউন্ডার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। এ কারণে বড় জয় পাইয়ে দেয়ার জন্য দলকে উজ্জিবীত করে রাখবেন তিনি।
এই ম্যাচে অসি দলের জন্য যে বিষয়টি বেশী গুরুত্বপূর্ণ, তা হল তাদের বিশ্রামে ঘটতি। সেমি ফাইনাল খেলার পর ফাইনালের প্রস্তুতির জন্য মাত্র ২দিন হাতে পেয়েছে টিম অস্ট্রেলিয়া। তবে ‘ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ শিখরে’ পৌঁছানোর মিশনে জয়ের জন্য দল প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন অসি অধিনায়ক ক্লার্ক।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছানোর সুযোগ গ্রহনের জন্য গোটা টুর্ণামেন্ট জুড়েই আমরা নিজেদের গড়ে তুলেছি। এটি আমাদের কাছে অতিমাত্রায় স্পেশাল। এটি নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন সংশয় নেই।
আমাদের এটি নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে প্রস্তত। এখন আমাদের লক্ষ্যস্থির বিষয়ে যদি আচরণের কোন পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে এই আত্মবিশ্বাস আছে যে আমরা বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করতে পারব।’
অস্ট্রেলিয়া দল:
মাইকেল ক্লার্ক (অধিনায়ক), জর্জ বেইলি, প্যাট কামিন্স, জেভিয়ার ডোহার্তি, জেমস ফকনার, এ্যারন ফিঞ্চ, ব্র্যাড হাডিন, জস হ্যাজেলউড, মিচেল জনসন, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, ডেভিড ওয়ার্নার, শেন ওয়াটসন।
নিউজিল্যান্ড দল :
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (অধিনায়ক), কোরি এন্ডারসন, ট্রেন্ট বোল্ট, গ্রান্ট ইলিয়ট, মার্টিন গাপটিল, টম লাথাম, মিচেল ম্যাকক্লেনাঘান, নাথান ম্যাককালাম, কাইল মিলস, লুক রঞ্চি, টিম সাউদি, রস টেইলর, ড্যানিয়েল ভেট্টরি, কেন উইলিয়ামসন।