এক নজরে বিশ্বকাপজয়ীরা
সেরার মুকুটটা মাথায় তুলতে চান সবাই। শেষ পর্যন্ত তা একজনের মাথায়ই ওঠে। এগারোতম বিশ্বকাপের সেরার মুকুটটা কার মাথায় উঠবে তার অপেক্ষায় এখন পুরো ক্রিকেটবিশ্ব।
বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই সমান পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে বিশ্বকাপের এবারের আসরের ফাইনালিস্ট স্বাগতিক দুই দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আসরের সর্বাধিক উইকেট শিকারির প্রথম দু’জনই দু’দলের পেসার।
অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ফাইনাল, তাই এ সুবিধার পাশাপাশি সার্বিক বিচারে শিরোপার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়াকেই এগিয়ে রাখছে সবাই। তাদের চারবার বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা যেমন রয়েছে, তেমনি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠলেও কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় পিছিয়ে নেই কিউইরাও।
এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দশটি বিশ্বকাপের মধ্যে সর্বাধিক চারটি জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। দু’টি করে জিতেছে ভারত ও ওয়েস্ট ইডিন্জ। আর একবার করে বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব রয়েছে এশিয়ার দুই দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার।
১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপী জয় করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠলেও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানে হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে প্রথমবারই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেয় ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবিয়ান যোদ্ধারা।
১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্বকাপের আয়োজকও ইংল্যান্ড। যোগ্যতা প্রমাণ করে ফাইনালে উঠলেও ব্যর্থ হয় ইংলিশরা। ৯২ রানে ইংলিশদের হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা অক্ষুন্ন রাখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৮৩’র বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে উপমহাদেশে প্রথম বিশ্বকাপ আনে ভারত। হ্যাটট্রিক শিরোপা অর্জনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন দলটি। আর তৃতীয়বারের মতো আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠতে সেবারও ব্যর্থ হয়।
৮৭’তে ভারত-পাকিস্তানের যৌথ আয়োজনে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলেও শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি ভারত। ইডেন গার্ডেনের ওই ম্যাচে ইংলিশদের ৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ৯২’র বিশ্বকাপ। স্বাগতিকদের হারিয়ে দিয়ে ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। আর মেলবোর্নের ফাইনালে ইংলিশদের ২২ রানে পরাজিত করে এশিয়ায় শিরোপা ফিরিয়ে আনে পাকিস্তান।
৯৬’র বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো আয়োজক দেশকে শিরোপা জিততে দেখেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজনে সেবার প্রতিপক্ষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে পায় লঙ্কান সিংহরা। আর লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উপমহাদেশীয় সুবিধা সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৭ উইকেটে জয় করে উপমহাদেশেরই রাজত্ব ধরে রাখে প্রথম শিরোপাজয়ী শ্রীলঙ্কা।
তবে পরের বিশ্বকাপে ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। ৯৯’র ওই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে পরের বিশ্বকাপ অর্জনেরই ইঙ্গিত দেন স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্বাধীন দলটি।
ওই বিশ্বকাপে সাফল্যের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ বিশ্বকাপে ৯৯’র বিশ্বকাপ জয়ী বেভান, লেহম্যান, গিলক্রিস্টদের পায় অস্ট্রেলিয়া। আর তাদের হাত ধরে টানা দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে অজিরা। দলের কাণ্ডারি হিসেবে সেবার রিকি পন্টিংই নেতৃত্ব দেন অজিদের।
আর ২০০৭ সালে সেই রিকি পন্টিংয়ের হাত ধরেই হ্যাটট্রিক শিরোপা অর্জন করে অজি বাহিনী। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপে ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে শ্রীলঙ্কাকে ৫৩ রানে হারায় অস্ট্রেলিয়া।
সর্বশেষ ২০১১ সালে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেয় ভারত। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারায় মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন বাহিনী। এর মাধ্যমে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান ক্রিকেটের বরপুত্র শচীন টেন্ডুলকার।
এবার সবার অপেক্ষা- কে হচ্ছে এগারোতম বিশ্বকাপ বিজয়ী? পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জিতে অনন্য উচ্চতায় চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া, নাকি বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটপ্রেমীরা নতুন কোনো চ্যাম্পিয়নের হাসি দেখবে?