তিন মাসে দু’পক্ষের ৭০ জন নিহত
সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও দুর্বৃত্তদের হাতে গত ৩ মাসে ৭০ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের ৫৩ জন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১৭ জন নেতাকর্মী রয়েছেন।
আর খোদ রাজধানীতে ২০ দলের ১৩ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের ১ জন নেতা নিহত হয়েছেন।
এর বাইরে দেশের কয়েকটি স্থানে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এ বছরের ৫ জানুয়ারির পর শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনো দূর হয়নি। এ পরিস্থিতিতে সারাদেশে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তারা কেউ নিজ ইচ্ছায় আহত কিংবা নিহত হননি। নাশকতাকারীদের হামলায় কেউ মারা যাচ্ছেন, কেউ আহত হচ্ছেন। ২০ দলের অনেক নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গিয়েছেন। এ পরিস্থিতির মধ্যে নিরাপদে নেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রায় দেড় হাজার এবং এ মামলাগুলোতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ২১ হাজার নেতাকর্মী।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাগুলোর সবই যে প্রতিহিংসামূলক তা বলা যাবে না। সারাদেশে নাশকতাকারীদের প্রতিরোধে কাজ করছে পুলিশ। অনেক নাশকতাকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তবে এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্র-যুবলীগ নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার সম্পর্ক আছে কিনা, বলতে পারছি না। তবে দুর্বৃত্তদের হাতে খুনের ঘটনাগুলোর তদন্ত চলছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হোক আর দুর্বৃত্তদের হাতে খুন, এ সবই আইনবহির্ভূত। এ ধরনের অপরাধ গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো ফৌজদারি অপরাধ। ফৌজদারি অপরাধ মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করবে, তখন অপরাধীরাও প্রশ্রয় পাবে। অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে এ সকল খুনের ঘটনা ঘটে না। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনলে সবদিক দিয়েই অপরাধ কমে আসবে। ফৌজদারি অপরাধ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা দুর্বৃত্ত যেই করুক না কেন তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দুর্বৃত্তরা তো হামলা করবেই। তবে আওয়ামী লীগ, ছাত্র-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা খুবই অল্প। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারাদেশে নাশকতা প্রতিরোধের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। আগের থেকে এখন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ছাড়া দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনাগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
একনজরে কিছু পরিসংখ্যান
ঢাকা : রাজধানী ঢাকায় গত ১৪ মার্চ শনিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে বনানীতে গলায় ডিশের তার পেঁচানো অবস্থায় শামিম ভূইয়া (৪৫) নামে একজনের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। পরে ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে শামিমের লাশ শনাক্ত করতে এসে তার স্ত্রী বেবি বেগম জানান, তার স্বামী যুবলীগকর্মী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন শ্রমিক দল নেতা আব্দুল ওয়াদুদ। ১৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর থেকে মিরপুর থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরী আলমের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় বিএনপি সমর্থক রাসেল সরদার। ৮ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় জসিম উদ্দিন নামে এক শিবির নেতা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মনির হোসেন নামে ২০ দলীয় এক সমর্থক নিহত হন। ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন সাখাওয়াত হোসেন রাহাত নামে ২০ দলীয় এক সমর্থক। একই স্থানে নিহত হন মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ নামে আরও একজন। একই দিন ভাষানটেক থানা এলাকা থেকে আল আমিন (৩০) ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ভাগ্নে গাজী মোহাম্মদ নাহিদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ছাত্রশিবিরের শাহআলী থানার সভাপতি এমদাদ উল্লাহ পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। ২৯ জানুয়ারি সদরঘাটের লঞ্চ থেকে সাদা পোশাকের লোকজন নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ছাত্রদল নেতা আরিফুল ইসলাম মুকুলকে তুলে নিয়ে যায়। পর দিন ৩০ জানুয়ারি তার লাশ পাওয়া যায় রূপনগর এলাকায়।
২০ জানুয়ারি খিলগাঁও জোড়পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করা হয় খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনির (৩০) লাশ। মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় ১৭ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ইমরুল কায়েস (৩৪)। তিনি ওই ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ছিলেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ১৪ জানুয়ারি কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হন জোবায়ের নামে এক শিবিরকর্মী। ২২ জানুয়ারি রাঙ্গুনিয়ায় যুবদলকর্মী জিল্লুর রহমান ভাণ্ডারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শিবিরকর্মী সাকিবুল ইসলামকে পুলিশ আটক করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়। ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যুবদল নেতা ইমাম হোসেন রুবেলকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
রাজশাহী : রাজশাহী নগরীর নলখোলা আশরাফ মোড়ে ২৮ জানুয়ারি রাত সোয়া ২টার দিকে ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩০ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের (পূর্ব) সেক্রেটারি ও মতিহার থানা এলাকার ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মুন্সী নিহত হন। এ ঘটনায় দু’জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
যশোর : যশোর শহরের শংকরপুর ইসহাক সড়ক এলাকায় ২০ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে জয় নামে বিএনপির এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মণিরামপুরে ৩ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ‘ট্রাকচাপায়’ তাহেরপুর গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে ইউসুফ আলী ও দুর্গাপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে লিটন মারা যান বলে দাবি করে পুলিশ। মণিরামপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল নিহত দু’জনকেই যুবদলকর্মী বলে দাবি করেন।
যশোরে ৬ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ২টার দিকে পুলিশের ওপর ‘হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শিবির নেতা শহিদুল ইসলাম নিহত হন। তিনি জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল খালেকের ভাগ্নে। মণিরামপুরের বেগারিতলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবু সাইদ (৪৮) ও বজলুর রহমান (৪২) নামে দুই জামায়াত-শিবিরকর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে পুলিশ। তবে বিএনপির থেকে তাদের কর্মী বলে দাবি করা হয়।
যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য সকাল ১০টার দিকে নিজ মোটরসাইকেলে রওনা দেন সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন (৬০)।
বাড়ি থেকে বেরুনোর পর স্বামীর সঙ্গে এটাই যে শেষ দেখা তা কল্পনাও করতে পারেননি মোশাররফের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। পথেই দুর্বৃত্তদের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মোশাররফ হোসেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার দিকে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাঁচবাড়িয়া গ্রামে সিনজেনটা ডিপোর কাছে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। নিমিষেই একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। মুমূর্ষু মোশাররফ হোসেনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। তিনি সদর উপজেলার কিসমত রাজাপুর গ্রামের মোকাম মণ্ডলের ছেলে। কারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত পুলিশ তা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন দাবি করেছেন, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
নিহত মোশাররফের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম দ্য রিপোর্টকে জানান, শহরের পুরাতন কসবা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য তার স্বামী সকাল ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে রওনা দেন। কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে কে বা কারা তাকে খুন করেছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘খুনের সঙ্গে কারা জড়িত তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করছি ক্লু উদ্ঘাটনের। পেয়ে যাব।’
খুলনা : খুলনা বিএল কলেজের ছাত্রাবাস থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার করা হয় ছাত্রদল নেতা আবু সাইদের লাশ।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ১ ফেব্রুয়ারি সাইদুল ইসলাম নামে এক জামায়াত নেতা পুলিশের গুলিতে আহত হন। পর দিন তিনি মারা যান।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের নান্দাইলে ২৮ জানুয়ারি ছাত্রদল নেতা আসিফ পারভেজ টুকুনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন রফিকুল ইসলাম খোকন নামে এক ব্যক্তি।
মাগুরা : মাগুরা মহাসড়কের পাঁচবাড়িয়া গ্রামে সিনজেনটা ডিপোর কাছে সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনকে (৬০) ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে গুলি করে খুন করে দুর্বৃত্তরা।
বগুড়া : বগুড়ায় তিন যুবলীগ ও এক জাতীয় পাটির (জাপা) নেতাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জাতীয় পাটির গাবতলী উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলীকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৮ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে কলমা চারমাথা মোড় এলাকায় শাজাহানপুর উপজেলা ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মোজাহিদুর রহমান দুখুকে (২৮) উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাজাহানপুর উপজেলার ফুলতলায় নিজ বাড়ির সামনে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওই উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক রঞ্জু মিয়া প্রমানিক (৩৫)। ৫ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা যুবলীগ সদস্য মনিরুজ্জামান মানিককে (৩০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘বন্দুকযুদ্ধে’, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ও আটক হওয়ার পর পালাতে গিয়ে ২০ দলীয় জোটের তিন কর্মী নিহত হন।
শিবগঞ্জের কানসাটে ৫ জানুয়ারি বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষে বিএনপির কর্মী জমসেদ আলী নিহত হন। শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মতিউর রহমান (২২) শিবগঞ্জে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক হওয়ার পর র্যাবের গাড়ি থেকে ‘পালাতে গিয়ে’ নবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি আসাদুল্লাহ তুহিন (২২) ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে র্যাব।
অন্যদিকে ২২ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মী আবুল কালাম আজাদ নিহত হন। একই এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা মুকুলকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
কুমিল্লা : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী (২৬) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলিতে নিহত হন। ৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় ৮ জন নিহতের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমানে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সোহেল (৩২) গাড়িচাপায় নিহত হন বলে পুলিশ দাবি করে।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটপাড়া এলাকায় ৮ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বপন (৩৮) নামে এক যুবলীগকর্মী নিহত হন। কুমিল্লার সদর দক্ষিণে ৯ মার্চ সকালে চৌয়ারা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী মো. আবদুল্লাহ আল-ফরহাদকে (২০) গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
দিনাজপুর : দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের চিরিরবন্দরে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নশরতপুর ইউনিয়নের ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি মতিউর রহমান মতির বড় ভাই পল্লী চিকিৎসক মো. খোদা বখসকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে মতিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখান থেকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে আসামী ধরতে গিয়ে পুলিশ-গ্রামবাসীর সংঘর্ষে যুবদলকর্মী মো. রেজওয়ান (২৫) নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক এজিএস আব্দুল হামিদ প্রধান হিরু মিয়াকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা গ্রামের একটি সরিষা ক্ষেত থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অন্যদিকে পলাশবাড়ী উপজেলায় ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ সদর থানার শিবিরের সভাপতি মোস্তফা মঞ্জিল (৩৩) নিহত হন।
বরিশাল : গৌরনদী-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের বাইপাস সড়কের বুধার নামক স্থানে ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ২টায় পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ উপজেলা যুবদল নেতা কবির হোসেন মোল্লা (৩৩) ও উপজেলা ছাত্রদলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক টিপু হাওলাদার (৩৫) নিহত হন।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরলরেঞ্চ এলাকায় ১ মার্চ রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবদলকর্মী আরিফ হোসেন (২৪) নিহত হন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বালাইশপুর গ্রামে ৬ মার্চ রাতে মো. সোহেল রানা (৩০) নামে এক বিএনপিকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জেলার সদর উপজেলার ভাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইন উদ্দিন চৌধুরী বাবলুকে (৩২) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর সদরের মিরিকপুরে ৩ মার্চ রাতে ভাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনকে (৩০) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৭টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের উত্তর দুর্গাপুর গ্রামে মো. বাবর (২৪) নামে এক যুবলীগকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। লক্ষ্মীপুর শহরের বাঞ্চানগর গ্রামের আলিয়া মাদ্রাসা এলাকায় ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে মো. রাসেল (১৮) নামে এক ছাত্রলীগকর্মীকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বরপাড়া গ্রামের ঠাকুরবাড়ির পাশ থেকে ২ ফেব্রুয়ারি রাতে দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল (২৬) ওরফে ছোট রুবেলকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের পশ্চিম নন্দনপুর গ্রামে ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ফারুক হোসেন টিটু (২৮) নামে এক যুবলীগকর্মীকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা।
নাটোর : শহরের তেবাড়িয়া এলাকায় ৫ জানুয়ারি সকালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে এনএস কলেজ শাখা ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক রাকিব আলী ও সিংড়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রচার সম্পাদক রায়হান নিহত হন।
নোয়াখালী : বেগমগঞ্জের চৌমুহনী বাজারে ৭ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে পুলিশে সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপিকর্মী মিজানুর রহমান রুবেল (২৫) ও মহিন উদ্দিন (৩০) নিহত হন। ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে পিচ্চি সোহেল (৩০) নামে এক বিএনপিকর্মী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। ১২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কাশিপুর থেকে অপহৃত ইস্রাফিল (২৬) নামে এক যুবদল নেতার লাশ নোয়াখালীর চাটখিলের খিলপাড়া থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৫ জানুয়ারি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় যুবলীগ সমর্থকদের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা মোরশেদ আলম পারভেজ।
অন্যদিকে নোয়াখালীর সদরে ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ১নং চরমটুয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতা মো. বাবুল মিয়াকে খুন করে দুর্বৃত্তরা।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডেফোলবাড়িয়া গ্রামের মাঠে ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে পলাশ হোসেন (২৮) ও দেলোয়ার হোসেন দুলাল (৩০) নামে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা রাজনীতি না করলেও তাদের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে স্বজনদের অভিযোগ, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আগেই তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ফেনী : ফেনীতে ৪ মার্চ যৌথবাহিনীর অভিযানকালে আরিফ ফরায়েজী নামে এক ছাত্রদল নেতার পিতা মফিজ উদ্দিন মারা যান। যৌথবাহিনীর সদস্যরা ছেলেকে ধরতে এলে তাকে না পেয়ে মফিজ উদ্দিনকে চড়-থাপ্পড় মারে। এ সময় বৃদ্ধ মফিজ উদ্দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে দাবি করে পরিবার।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা সদরে ১৮ জানুয়ারি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় সাবেক ইউপি মেম্বার ও বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলামকে।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার তালায় ২৭ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম নামে একজনকে ডাকাত সন্দেহে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে ‘ক্রসফায়ারে’ তার মৃত্যু হয়। ২৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।
ভোলা : ভোলার চরফ্যাশন ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি হারুন অর রশিদ ২৭ জানুয়ারি মারা যান। ২৬ জানুয়ারি দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে আহত করে।
বরগুনা : বরগুনার আমতলীতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মো. মোজাম্মেল নামে এক বিএনপি সমর্থক।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : সীতাকুণ্ডে ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন মো. আরিফ নামে এক যুবদল নেতা। হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার হয়।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : কেরানীগঞ্জে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সমর্থক মোহাম্মদ ইয়াছিরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
টেকনাফ (কক্সবাজার) : টেকনাফে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন হোসেন আহমদ নামে এক যুবক।
২০ দলীয় নেতাকর্মীরা যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন, তেমনি দুর্বৃত্তদের হাতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও নিহত হয়েছেন।