ইসি সচিবালয়ের নিরাপত্তা বাড়াতে চিঠি, সচিবের অস্বীকার
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নিরাপত্তা বাড়াতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ভোট গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ রাখতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
তবে নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইসির উপ-সচিব মোহা. ইসরাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইসি কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়াতে এখনও কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি চিঠি পাঠানো হবে।’
ইসির উপ-সচিব মোহা. ইসরাইল হোসেন স্বাক্ষারিত চিঠিটি কাছে সংরক্ষিত আছে। একই সঙ্গে ইসি সচিবালয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইসরাইল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিগুলো মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে ইসরাইল হোসেন ডিএমপি কমিশনারকে জানান, ‘ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসির প্রধান কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্ধারিত সময়ের পর এবং ছুটির দিনও অফিসে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইসি সচিবালয়ে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী ব্যক্তি, বিদেশী পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আসছেন। ফলে বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। বিদ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।’
ভোটগ্রহণের আগ থেকে ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে ইসি কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক সহিংসতা এখন কম হলেও ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে নাশকতা-সহিংসতা বাড়তে পরে। যেহেতু কর্মকর্তারা রাত অবধি ইসিতে কাজ করেন, তাই তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দরকার। মূলত এসব কারণেই কমিশন নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এটা সত্যি; তাই বলে নাশকতা একেবারে শেষ হয়ে গেছে, এটা বলা যাবে না। যেকোন সময় যেকোন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণেই বাড়তি নিরাপত্তা চাওয়া। এ ছাড়া দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল এখনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে মত দেয়নি। তাই কি হবে বলা মুশকিল।’
চিঠি পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করে ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘এমন কোনো নির্দেশনা কমিশন থেকে আমরা পাঠায়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে চিঠি পাঠাবো। এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ১৯ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে ইসির বৈঠক হবে। ওই দিন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। ওই দিনই নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে ইসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। কারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের মানুষ ইসিতে আসে। কখন কি হয় সেটাতো বলা যায় না।’ তবে তিনি ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
ফায়ার সার্ভিসে চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য আমরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রস্তুত রাখতে বলেছি। যাতে যেকোন পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক মোকাবেলা করা যায়।’
ইসির চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনকালীন নিরাপত্তার বিষয় নির্বাচন কমিশন দেখে। আর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশ পালন করে। এ ধরনের নির্দেশনা আসলে ডিএমপি অবশ্যই সেটা পালন করবে।’
ডিসি (হেডকোয়ার্টার্স) আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন যেসব চিঠি ইস্যু করে তা ডিএমপির একজন জয়েন্ট কমিশনার বারাবর যায়। তবে চিঠি এসেছে কীনা- বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
চিটির অনুলিপি মহাপুলিশ পরিদর্শক, তেজগাঁও উপ-পুলিশ কমিশনার, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একান্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব ও শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ এপ্রিল ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১ ও ২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে, তা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র দাখিলে শেষ দিন ছিল ২৯ মার্চ।