ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে; প্রশ্ন স্বামীর পূর্বপরিচিতের হাতেই কৃষ্ণা খুন

Krishna-kabery-স্বামীর পূর্বপরিচিত ব্যক্তির আঘাতেই খুন হন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) উপ-পরিচালক শীতাংসু শেখর বিশ্বাসের স্ত্রী কলেজ শিক্ষিকা কৃষ্ণা কাবেরি মণ্ডল (৩৪)।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় সিকিউরিটি গার্ডের কাছে কৃষ্ণার স্বামীর পরিচিত বলে খুনি সোমবার রাতে ভেতরে ঢোকেন।
সরেজমিনে মঙ্গলবার ঘুরে ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
এ দিকে ওই ভবনের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাবের আহমেদ চৌধুরী।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসায় ঢুকে সোমবার রাতে কৃষ্ণাকে পিটিয়ে-কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন কৃষ্ণার স্বামী শীতাংসু শেখর বিশ্বাস, বড় মেয়ে শ্রবণী বিশ্বাস শ্রুতি (১৪) ও ছোট মেয়ে অত্রি বিশ্বাস (৮)।
মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডের ৩/১২ নম্বর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আব্দুর রহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে পরিবারসহ ভাড়ায় থাকেন শীতাংসু বিশ্বাস। ঘটনার সময় একজন গার্ড কর্তব্যরত ছিলেন। তবে রাত ১০টার দিকে এসে জহিরুল ইসলাম পরিচয়দানকারী একজন দ্বিতীয় তলায় শীতাংসুর ফ্ল্যাটে যেতে চান। এ সময় ইন্টারকমের মাধ্যমে ফারুক শীতাংসুর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি (শীতাংসু) ওই ব্যক্তিকে চিনতে পেরে উপরে আসতে বলেন। ফলে রেজিস্ট্রার খাতায় ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় এন্ট্রি করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
রাতে ওই ভবনে আতিকুর রহমান নামের একজন গার্ড ছিলেন বলে জানান ফ্ল্যাটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাবের আহমেদ। তার মোবাইল নম্বরও জানান তিনি।
পরে গার্ড আতিকুরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বললে তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, ওই ভবনে রেজিস্ট্রার খাতায় এন্ট্রি করার কোনো নিয়ম নেই। ওই ব্যক্তি (জহির) কখন উপরে গিয়েছে তাও বলতে পারেন না বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরে মোবাইলে তার সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ভবনের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাবের আহমেদ বলেন, ‘যে সিকিউরিটি কোম্পানির লোকজন এখানে দায়িত্ব পালন করে তারা অতটা কড়া নয়। রেজিস্টার খাতার এন্ট্রির বিষয়টিও মানা হয় না। এ সুযোগ নিয়েছে কৃষ্ণার খুনি। নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করার জন্য ফ্ল্যাট মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করব।’
এ দিকে শীতাংসুর বড় মেয়ে শ্রবণীর বরাত দিয়ে তার ফুফু করুণাময়ী বিশ্বাস সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক ব্যক্তি যে শীতাংসুর পূর্বপরিচিত সে জুস ও জন্মদিনের কেক নিয়ে বাড়িতে ঢোকে। ওই কেক খাওয়ার পর শীতাংসু সোফা থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় রান্না ঘরে থাকা তার স্ত্রী বিষয়টি শুনতে পায় ও দৌড়ে স্বামীর কাছে আসেন। এ সময় কৃষ্ণার স্বামীকে দুর্বৃত্ত ব্যক্তি কোনো একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তু শীতাংসু তাতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। এ সময় হাতুড়ি দিয়ে শীতাংসুর মাথায় আঘাত করে। এতে কৃষ্ণা মাথায় ও বড় মেয়ে হাতে আঘাত পায়।
শীতাংসুর আহত পরিবার সদস্যদের উদ্ধারকারী ও পাশের ফ্ল্যাটে থাকা রাসেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ওই ভবনের ১/সি এ জাতীয় ত্রিশাল কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লিয়াজোঁ অফিস। আমরা ওখানে কাজ করছিলাম। ঘটনার সময় আমি ও ত্রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়িচালক মনিরুল ইসলাম আক্রান্ত ফ্ল্যাট থেকে চিৎকার শুনতে পাই। পরে বের হয়ে দেখি শীতাংসু সাহেবের ছোট মেয়ে আগুন বলে চিৎকার করছেন।’
এর পরে তারা ওই ভবনের কোনো এক বাসিন্দার গাড়িতে আহতদের কলেজ গেটের কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানান।
নিহত কৃষ্ণা মোহাম্মদপুরের মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজে শিক্ষকতা করতেন। তার স্বামী শীতাংসুর বাড়ি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানার গওহরপুর গ্রামে।
রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আক্রান্তদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি বলে জানান মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, ‘কোনো পূর্বপরিচিত ব্যক্তি এটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend