কৃষ্ণাকে খুনের পর দিনই অফিস করেন সন্দেহভাজন জহিরুল
রাজধানীর মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাসকে (৩৪) সোমবার রাতে খুন করে পরদিনই অফিস করেছিলেন সন্দেহভাজন এ কে এম জহিরুল ইসলাম। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে নিজের কর্মস্থল গুলশান ১ নম্বরে হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডে যান তিনি।
কিন্তু কৃষ্ণা খুনের ঘটনা মঙ্গলবার প্রকাশিত হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থেকে দেখা করার জন্য জহিরুলের ডাক পড়ে। আনুমানিক সকাল পৌনে ১০টার দিকে জহুরুল গুলশানের অফিস থেকে বেরিয়ে বনানীতে প্রধান কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। এরপর তিনি বনানীতে না গিয়ে লাপাত্তা হন বলে দ্য রিপোর্টের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
এ কে এম জহিরুল ইসলাম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (ট্রেক হোল্ডার নম্বর- ০৪১) গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক। তিনি গত ৮ মাস ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশের ধারণা, কৃষ্ণা কাবেরীর স্বামী সিতাংশু শেখর বিশ্বাসের পূর্বপরিচিত জহিরুল ইসলাম। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রকৌশল বিভাগের উপ-পরিচালক সিতাংশু। এ চাকরির পাশাপাশি তিনি হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডে শেয়ার ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসায়ের মাধ্যমেই জহিরুল ও সিতাংশুর পরিচয় এবং এটিই একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে খুন হন কৃষ্ণা।
হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজের গুলশান শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, মঙ্গলবার অফিসে থাকাকালীন জহিরুল ইসলাম বেশ হাসিখুশি ছিলেন। তার চেহারায় কোনো হতাশা-দুশ্চিন্তার ছাপ ছিল না। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান কার্যালয় থেকে ফোন এলে তিনি বেশ ঘাবড়ে যান। তারপর দেরি না করেই অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের বনানী যাচ্ছি বলে বেড়িয়ে যান। এরপর সকাল অনুমানিক ১০টা থেকে সোয়া ১০টার মধ্যে অফিসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (পুলিশ) আসে। তার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে যায়। তবে অফিস থেকে বের হওয়ার পর জহিরুল ইসলামকে আর দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশান অফিসের এক কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম সম্পর্কে বলেন, ‘খুব বেশিদিন হয়নি আমরা একসঙ্গে চাকরি করছি। উনাকে দেখে ভালো মানুষই মনে হতো। কীভাবে তিনি এ কাজ করলেন, বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। কেউই ঘটনাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। অনেকের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, খুন কি জহির ভাই আদৌ করেছিলেন? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা লুকিয়ে আছে?’
এদিকে বনানী প্রধান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম সম্পর্কে বলেন, ‘উনাকে আমি জানি, তবে খুব ঘনিষ্ঠভাবে নয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় থেকে এমবিএ পাশ করেছেন। এ সব হিসাব করলে তাকে উচ্চশিক্ষিত মনে হয়। কিন্তু তিনি কেন এ কাজটি করতে গেলেন বুঝতে পারছি না। কৃষ্ণা কাবেরী খুন হওয়ার ঘটনা মঙ্গলবার সকালে জানাজানি হলে তাকে দেখা করতে অফিসে ডাকা হয়। তিনি আসছেন বলেও অফিসকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ এবং তিনি লাপাত্তা। এতে স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছে, তিনি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত।’
কৃষ্ণা খুনের ঘটনায় ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘হত্যাকরী একজনই। আর্থিক লেনদেনের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারিনি কে কার কাছে টাকা পাবে? এ ছাড়া ভিকটিকম তিনজনই (বাবা ও দুই মেয়ে) এখন গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন, তাই তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে না। যেহেতু আসামি পলাতক তাই ভিকটিমদের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত কোনোকিছুই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।’
পরিবার সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুসারে জানা গেছে, স্বামীর পূর্বপরিচিত ব্যক্তির হাতেই খুন হন সিতাংশু শেখর বিশ্বাসের স্ত্রী কৃষ্ণা কাবেরী মণ্ডল।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ৩/১২ নম্বর বাসায় সোমবার রাত ১০টার দিকে ঢুকে কৃষ্ণাকে পিটিয়ে-কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় আহত হন কৃষ্ণার স্বামী সিতাংশু শেখর বিশ্বাস, বড় মেয়ে শ্রবণী বিশ্বাস শ্রুতি (১৪) ও ছোট মেয়ে অত্রি বিশ্বাস (৮)।
তারা রাজধানীর মহাখালীর মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কৃষ্ণা কাবেরীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।