নায়করাজ রাজ্জাকের অর্থের উৎস খুঁজছে এনবিআর
এবার রূপালী পর্দার কিংবদন্তী অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের (আব্দুর রাজ্জাক) অর্থের উৎস খুঁজতে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
তার বিরুদ্ধে প্রায় এক কোটি ২৯ লাখ টাকার আয়কর পরিশোধ না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, রাজ্জাকের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করে বকেয়া কর আদায়ের চিন্তাভাবনা করছে কর বিভাগ।
‘কর অঞ্চল-১২’ এর কমিশনার শাহীন আক্তার বলেন, করদাতাদের নিয়মিত নোটিশ দিয়ে বকেয়া কর পরিশোধ করতে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ বকেয়া কর পরিশোধ না করেন তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘কর অঞ্চল-১২’ এর ২৬২ সার্কেলের করদাতা রূপালী পর্দার সাড়া জাগানো অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক, যার কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন হচ্ছে ২৬৫১০০০২১।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর অঞ্চল-১২ এর একজন কর্মকর্তা বলেন, চলচ্চিত্র জগতের অন্যান্য তারকার চাইতে রাজ্জাকের বকেয়া করের পরিমাণ বেশি। তাকে অনুসরণ করে যেখানে অন্য সব তারকার শেখার কথা, তখন তিনি নিজেই ঠিকমতো কর পরিশোধ করছেন না।
তিনি আরও জানান, সম্মানিত ব্যক্তি হওয়ায় রাজ্জাককে বার বার নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তিনি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। উল্টো কর বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ সব বকেয়া কর আদায়ে একাধিকবার তার ব্যাংক হিসাব তল্লাশী করা হয়। কিন্তু তার নামে কোনো ব্যাংক হিসাবের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এনবিআর সূত্র জানায়, ১৯৮৮-৯৯ থেকে ২০০৬-০৭ করবর্ষ পর্যন্ত নায়করাজ রাজ্জাকের বকেয়া কর রয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অথচ দুই দফায় ৫০ হাজার করে মাত্র এক লাখ টাকা বকেয়া কর পরিশোধ করেছেন এই অভিনেতা।
১৯৮৮-৮৯ করবর্ষে রাজ্জাকের বকেয়া কর ছিল ৩৩ হাজার টাকা, ১৯৯০-৯১ করবর্ষে ২৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ১৯৯৪-৯৫ করবর্ষে ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা, ১৯৯৬-৯৭ করবর্ষে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, ১৯৯৭-৯৮ করবর্ষে ৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, ১৯৯৮-৯৯ করবর্ষে ৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও ১৯৯৯-২০০০ করবর্ষে ১২ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ২০০০-০১ করবর্ষে ৩০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, ২০০১-০২ করবর্ষে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, ২০০২-০৩ করবর্ষে ১৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা, ২০০৩-০৪ করবর্ষে ২ লাখ ২২ হাজার টাকা, ২০০৪-০৫ করবর্ষে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা, ২০০৫-০৬ করবর্ষে ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং ২০০৬-০৭ করবর্ষে ২৪৪ টাকা কর বকেয়া ছিল।
সূত্র আরও জানায়, ব্যাংক হিসাব খুঁজে না পাওয়ার ফলে বিকল্প পথে বকেয়া কর আদায়ের চিন্তা চলছে। নায়করাজের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। উত্তরায় রাজলক্ষ্মী প্লাজার মালিকানা রাজ্জাকের নামে রয়েছে বলে জানতে পেরেছে কর বিভাগ। এখন ওই মার্কেটের দোকান ভাড়ার মাধ্যমে কর আদায় করা হবে। যতদিন পর্যন্ত বকেয়া কর পরিশোধ না হবে ততদিন পর্যন্ত ওই মার্কেটের দোকান ভাড়া আদায় করবে কর বিভাগ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ করবর্ষে রাজ্জাক তার সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছে ৬২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এ সময় তার আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যার বিপরীতে আয়কর দিয়েছেন ৯ হাজার ৭ শ’ টাকা।
এ প্রসঙ্গে নায়করাজ রাজ্জাকের ছোট ছেলে সম্রাটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আব্বা অসুস্থ। তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না।’
তিনি রাজ্জাকের সহকারী নজরুল ইসলামের নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
এরপর নজরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজ্জাকের কর আইনজীবীর মোবাইল নম্বর চাইলে প্রথমে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও চলচ্চিত্র অভিনেতারা তাদের আয়-ব্যয়, পরিশোধিত আয়করের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ তারকা তাদের আয়কর পরিশোধের বিষয়টি গোপন করতে চান।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো ঢালিউড তারকাকে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার কারণে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর সার্কেল দু-একবার ব্যাংক হিসাব জব্দ করলেও পরবর্তী সময়ে তা অবমুক্ত করে দিয়েছে। এটিও তারকাদের আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অন্যতম কারণ।