সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি বিএনপির
ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া, নেতাকর্মীদের হয়রানি বন্ধ করতেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাছে দাবি জানানো হয়।
বুধবার বিকালে শেরেবাংলা নগর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
হান্নান শাহ বলেন, ‘সিইসি আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন আইনের মধ্য থেকে তিন সিটির নির্বাচন সফল করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তিনি করবেন।
তিনি জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে দলের পক্ষ থেকে কতগুলো পয়েন্ট ইসির সামনে তুলে ধরেছি। যদিও এটি স্থানীয় নির্বাচন। তার পর সব দলের অংশগ্রহণ থাকে। কিন্তু সরকার আমাদের ম্যাডাম, জেলা-উপজেলার দলীয় কার্যালয়গুলো তালাবদ্ধ করে রেখেছে। এটা যাতে সরকার না করে।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কোনো দলের কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকবে, আবার অন্য দলের কার্যালয় খুলে প্রচারণা চালাবেন, এটা তো হয় না। এতে নির্বাচন প্রভাবিত করে। নির্বাচন করতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার।
হান্নান শাহ বলেন, ‘আমরা যেন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারি। সে ব্যবস্থা ইসির করা উচিত।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠু পরিবেশে যাতে নির্বাচন হয় তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাতে না হয়, সে বিষয়ে ইসি যেন আরও কঠোর হয়।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সম্পর্কে সকল প্রার্থীরা যেন জানতে পারেন। কোনো বিশেষ দলের নেতাকর্মী ও সরকারের বিতর্কিত ব্যক্তিকে যেন পোলিং এজেন্ট নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়া হয়।
হান্নান শাহ বলেন, ‘প্রার্থী ও ভোটারা যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে দাবি জানিয়েছি, সিইসি আশ্বস্ত করেছেন, বিষয়টি বিশেষভাবে দেখবেন। সন্ত্রাসীরা যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে তাই তিনি ম্যাজিস্ট্রেট বাড়িয়ে দেবেন বলেও জানিয়েছেন।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ক্লাসিক্যাল (করণিক) ও পিন্টিং ভুলের কারণে কিছু এলাকায় ভাল ভাল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
তিনি জানান, ‘আমরা উত্তরের প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিষয়টি উঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, আমরা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল করি তাহলে তারা বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন।
মিন্টু বাদ পড়লে তার ছেলে তাবিথ আউয়াল নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওয়েট এ্যান্ড সি।’
এক প্রশ্নের জবাবে হান্নান শাহ বলেন, ‘সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে যেটা বুঝেছি, উনার ক্ষমতার মধ্যে যেগুলো আছে, সেগুলো করবেন। যেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয় সেগুলোও নিয়ে তিনি আলাপ করবেন।
জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘সংবিধানের কথা উল্লেখ করে তাদের দায়িত্বের বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছি। রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশের অধিকার সবার রয়েছে।
অজ্ঞাত নামে আসামি আটক করার সমালোচনা করে সাবেক এ স্পিকার বলেন, এজহারে নাম দেওয়া থাকে ১০টা। অজ্ঞাত আসামি করে দুই হাজার। যখন নির্বাচনে ওদের (ক্ষমতাসীন) ভোট না দেওয়া হয়, তখন আটক করে, এটা ঠিক নয়। তিনি জামিনে থাকা ব্যক্তিদের আটক না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
জমিরউদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনীর মোতায়েনের দাবিতে সিইসি জানিয়েছেন, ১৯ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
লেভেল প্লেয়িং ফিন্ডের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সিইসির সঙ্গে কথা বলে যেটা মনে হয়েছে, উনি মোটামুটিভাবে ইনডাইরেটকলি আশ্বস্ত করেছেন।
এর আগে বিকাল ৩টায় আ স ম হান্নান শাহর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন— স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান, এএসএম আবদুল হালিম, সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, ইসির সাবেক সচিব আবদুল রশিদ সরকার ও সাবেক যুগ্ম-সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।