কলেরাপ্রবণ হয়ে উঠছে ঢাকা

pic-16.1_206398_0এককালে গ্রামে গ্রামে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও এখন আর সে পরিস্থিতি নেই। তবে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থার ঘাটতির মুখে কলেরাপ্রবণ নগরী হয়ে উঠছে খোদ দেশের রাজধানী ঢাকা। বিশেষ করে ঘন বসতির কারণে এখন দেশের যেকোনো গ্রাম ও মফস্বল শহরের চেয়ে ঢাকা অনেকটাই অনিরাপদ সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি বড় কিছু শহরেও কলেরার দেখা মিলেছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ঢাকায় যেমন ডায়রিয়ার প্রবণতা বেশি, তেমনি ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে কলেরার জীবাণুবাহী মানুষের সংখ্যাও ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ঢাকায় ডায়রিয়া রোগীর মধ্যে গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশই কলেরার জীবাণু বহন করছে বলেও বেরিয়ে এসেছে গবেষণার ফলাফলে।

সর্বশেষ ঢাকায় চলমান ওয়ান হেলথ সম্মেলনেও রাজধানীতে কলেরা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষকরা। সম্মেলনে উপস্থাপিত একাধিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধেও উঠে এসেছে ঢাকা কলেরাপ্রবণ হয়ে ওঠার চিত্র।

সম্মেলনের বৈজ্ঞানিক উপকমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের চেয়ে নগরীতে কলেরার প্রবণতা বেশি। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় কলেরার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। তবে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বড় শহরেও এর উপস্থিতি রয়েছে।

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ঢাকায় নিরাপদ পানির পর্যাপ্ত জোগান না থাকা এবং বস্তিসহ ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে ঢাকায় ডায়রিয়া ও কলেরার প্রবণতাও বেশি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, কমলাপুরসহ আরো কিছু এলাকার পরিস্থিতি বেশি খরাপ।

আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতাল জরিপ থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে ঢাকা হাসপাতালে (মহাখালী) গত সাত-আট বছরে আসা প্রতি চারজন রোগীর মধ্যে একজন থাকে কলেরায় আক্রান্ত। এসব রোগীর মধ্যে দেখা গেছে, সর্বাধিক ব্যাকটেরিয়া-জাতীয় জীবাণু ছিল ‘ভিব্রিও কলেরি ০১’।

আইসিডিডিআরবি বিজ্ঞানী ড.ফেরদৌসী কাদরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা তথ্য পেয়েছি, বাংলাদেশে মোট ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ শতাংশই কলেরার জীবাণুবাহী। বিশেষ করে চারটি ক্যাটাগরিতে কলেরা জীবাণুবাহীদের ভাগ করা হয়। এতে দেখা গেছে, একজন মানুষের শরীর কলেরায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে আরো তিনজন সংক্রামিত হতে পারে। এমন হিসাবকে ভিত্তি করেই বাংলাদেশে বছরে কলেরা জীবাণুবাহী মানুষের সংখ্যা আনুমানিক ১২ লাখের বেশি ধরা হয়েছে। তবে এদের সবাইকে কলেরা রোগী বলা যাবে না।

ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেন, সারা দেশেই কমবেশি কলেরা থাকলেও ঘনবসতি বেশি এবং সে অনুসারে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের উপায় না থাকায় ঢাকা ও এর আশপাশে কলেরার প্রকোপ বেশি থাকে। তবে এটা ডায়রিয়ার সিজনে বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে এখন গরম শুরু হওয়ায় ঢাকায় ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপও বেড়ে যাবে।

এদিকে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে পরিসংখ্যান পেয়েছি, বাংলাদেশে বছরে আনুমানিক চার লাখ ৫০ হাজার মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।’

সম্প্রতি আইসিডিডিআরবির আরেক গবেষণার তথ্য মতে, ঢাকা হাসপাতালের আওতাভুক্ত এলাকার প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় ২৮০ এবং মিরপুর চিকিৎসাকেন্দ্রের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় ৪৭৪ জন ভিব্রিও কলেরিতে আক্রান্ত হয়েছে। আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা জানান, তাঁদের ঢাকা হাসপাতাল এবং মিরপুর চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রতিবছর দেড় লাখেরও বেশি ডায়রিয়া রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালভিত্তিক ডায়রিয়া রোগের সার্ভিলেন্স কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই হাসপাতাল দুটিতে ভর্তি হওয়া রোগীর একটি নির্দিষ্ট অংশকে ভিব্রিও কলেরি এবং অন্যান্য আন্ত্রিক রোগ পরীক্ষার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend