৯২ দিন পর বাসায় ফিরলেন খালেদা
৯২ দিন পর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বাসা ফিরোজায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় হাজিরা দিতে রবিবার ঢাকার বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতে যান তিনি। সেখান থেকে জামিন পেয়ে রবিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে তিনি গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোড ১ নম্বর বাসায় প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া।
এ সময় তার সঙ্গে বাসায় প্রবেশ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা। বাসায় আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) জামিন আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন। তিনি গুলশানের বাসায় পৌঁছেছেন।’
গত ৩ জানুয়ারি রাত সোয়া ৮টার দিকে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের উদ্দেশে বাসা ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। ওই রাতেই পুলিশের অবরোধেরে মুখে কার্যালয়ে অবস্থান নেন তিনি। পরবর্তীতে পুলিশ অবরোধ তুলে নিলেও তিনি আর কার্যালয় ছাড়েননি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় রবিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
ঢাকার বকশিবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন শুনানিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে পারেননি। আজ (রবিবার) তিনি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে আদালতে জামিন আবেদন করেছেন। তাই সবদিক বিবেচনা করে তার জামিন মঞ্জুর করতে আদালতকে অনুরোধ করছি।’
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি জামিন পাওয়ার হকদার। তাই তিনি জামিন পেতে পারেন।’
এর আগে সকালে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও জয়নুল আবেদীন মেজবা জামিনের আবেদন করেন। বেগম খালেদা জিয়া সকালে আদালতে হাজির হন।
এ দিন মামলা দুটির সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
ওইদিন আদালতে হাজির না হওয়ায় কাজী সালিমুল হক কামাল ও সরফুদ্দিন আহমেদেরও জামিন বাতিল করা হয়। আদালত জামিন বাতিলের সময় বিচারক বলেন, ‘এ মামলার ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে খালেদা জিয়া সাত দিন উপস্থিত ছিলেন। তাই সবদিক বিবেচনা করে তার জামিন বাতিল করা হল।’
এ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া তিনবার বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা দিতে উপস্থিত হন। ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ও ৯ নভেম্বর তিনি বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়েছিলেন।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ নয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন— খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন— মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।