আইনের দৃষ্টিতে মির্জা আব্বাস ‘পলাতক’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আইনের দৃষ্টিতে এখন ‘পলাতক’।
আইনের চোখে পলাতক হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে আব্বাসের কোনো বাধা নেই বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির না হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আইনের দৃষ্টিতে নির্বাচনে অংশ নিতে মির্জা আব্বাসের কোনো বাধা নেই। শিগগিরই তিনি আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করবেন এবং আমরা আশা করি আদালত তাকে জামিন দেবেন।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মির্জা আব্বাস আইনের দৃষ্টিতে ‘পলাতক’ হলেও নিবার্চন করতে পারবেন। তবে নির্বাচন কমিশনের কোনো আইন থাকলে তা আমি বলতে পারি না। মোশাররফ হোসেন কাজল আরও বলেন, মির্জা আব্বাসকে আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মীর সরোয়ার মোরশেদ এ বিষয় কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইমরুল কায়েস ২৪ ফেব্রুয়ারি মির্জা আব্বাসসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার জন্য ওই দিনই শুনানির দিন ধার্য ছিল। মির্জা আব্বাসসহ পাঁচজন হাজির না হওয়ায় আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
বর্তমানে মামলাটি গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, মির্জা আব্বাস গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৬ সালে আলমগীর কবিরের হস্তক্ষেপে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডকে বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে প্লট বরাদ্দ দেন। ১৮ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যের সরকারি সাত একর সম্পত্তি তিন কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যে বরাদ্দ দিয়ে সরকারের ১৫ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ টাকা ক্ষতিসাধনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৪ সালে ৬ মার্চ শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক।
চলতি বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম তসরুজ্জামানের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হামিদুল হাসান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মির্জা আব্বাসসহ পরোয়ানাভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আলমগীর কবির, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) বিজন কান্তি সরকার, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ক্যাশিয়ার মো. মনছুর আলম ও হিসাব সহকারী মতিয়ার রহমান।
নির্বাচন কমিশনে মির্জা আব্বাসের দেওয়া হলফনামা থেকে কিছু তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে ফৌজদারি মামলা : ৩৭টি, অতীতে ফৌজদারি মামলা ছিল ২৪টি।
পেশা : ব্যবসা, মির্জা এন্টারপ্রাইজ।
শিক্ষাগত যোগ্যতা : স্নাতক।
বাৎসরিক আয় : বাড়িভাড়া, এ্যাপার্টমেন্ট ও দোকানসহ অন্যান্য ভাড়া বাবদ বাৎসরিক আয় ১ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৩ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক আয় ৬ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার ২৯০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২৫০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ : নগদ টাকা ৫০ লাখ, ব্যাংকে জমা ১০ লাখ ৬২ হাজার ১২৩ টাকা; বন্ড ৩৫ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ১০০ ও ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৫ টাকা।
স্থায়ী আমানত : ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৯ টাকা; গাড়ি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণ ২ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১০ লাখ টাকা, আসবাবপত্র ৭ লাখ টাকা ও অন্যান্য ৯০ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে মির্জা আব্বাস প্রায় ১০০ কোটি টাকার মালিক বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থাবর সম্পদ : অকৃষি জমি ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা; দালান (৮৭১, দক্ষিণ শাহজাহানপুর) ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ১২৩ টাকা ও (৯২৫/বি, দক্ষিণ শাহজাহানপুর) ২ কোটি ৬২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪৫ টাকা। জমি বায়না বাবদ অগ্রিম ৪ কোটি টাকা।
দায়-দেনার পরিমাণ : ৭৫ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৯০৩ টাকা।