রাতে ফাঁসি হচ্ছে না কামারুজ্জামানের
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি সোমবার রাতে কার্যকর হচ্ছে না।
সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী রাত পৌনে ৮টার দিকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মহামান্য আদালতের রায়ের কপি পাইনি। আমি এখন অফিস থেকে চলে যাচ্ছি। আমার আর কোনো কার্যক্রম নেই।’
এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তাহলে কি আজ (রাতে) রায় কার্যকর হচ্ছে না? জবাবে কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেছার আলম বলেন, ‘নিশ্চিত, আজ (সোমবার) কার্যকর হচ্ছে না।’
মঙ্গলবার বা শুক্রবার রায় কার্যকর করা যাবে না এমন কোনো বিধান আছে কিনা— জানতে চাইলে ফরমান আলী বলেন, ‘না, এমন কোনো বিধান নেই।’
সোমবার দুপুর থেকেই রিভিউয়ের রায়ের শর্ট অর্ডারের কপি কেন্দ্রীয় কারাগারে যাবে বলে গুঞ্জন শোনা যায়। রাত ৮টার দিকে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার নিকট রায়ের স্বাক্ষরিত কপি পৌঁছায়নি।’ নিয়মানুযায়ী, সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের মাধ্যমে কপিটি কারাগার কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়।
জানা গেছে, রায়ের কপিতে সংশ্লিষ্ট বিচারপতিগণ এখনো স্বাক্ষর করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার বলেন, ‘বিচারপতিদের স্বাক্ষর করা হলে আমার নিকট পাঠানো হতো। কিন্তু যেহেতু পাঠানো হয়নি, সেহেতু স্বাক্ষর হয়েছে বলে সম্ভাবনা কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি সবাই আদালত অঙ্গন ত্যাগ করে চলে গেছেন। সুতরাং আজ (সোমবার) সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না।’
সুপ্রীম কোর্টের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের রায়টি পূর্ণাঙ্গ আকারে লেখা হচ্ছে। একজন বিচারপতি রায়টি লিখছেন। সম্ভবত সোমবার রাতে অথবা মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখা সম্পন্ন হবে। এরপর সকল বিচারপতিরা স্বাক্ষর করে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে জেল কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাবেন।
এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন তার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, বড় ছেলে হাসান ইকবাল, ছেলে হাসান ইমাম, মেয়ে আতিয়া নূর, ভাগ্নি রুখসানা জেবিনসহ পরিবারের ১২ জন সদস্য।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে ফরমান আলী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারের লোকজন দেখা করতে এসেছেন। তারা দেখা করেছেন।’
সোমবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন— বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল মামলার চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। মোট ৭০৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বাতিল ও তার খালাস চেয়েছিল আসামিপক্ষ।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন। এরপর রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছালে ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ তিন বিচারপতি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। অন্য দুই বিচারপতি হচ্ছেন— বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।
এরপর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মুস্তাফিজুর রহমান মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আইজি (প্রিজন) বরাবর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠান। পরে কারাগারে কামারুজ্জামানকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে আনা তিন নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।