চলছে কামারুজ্জামানের কবর তৈরির কাজ
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে দাফনের প্রস্তুতি নিয়েছে তাঁর পরিবার। আজ বুধবার বিকেলে তাঁর গ্রামের বাড়ি শেরপুরের বাজিতখিলা ইউনিয়নের কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার সামনে শুরু হয়েছে কবর তৈরির কাজ। কামারুজ্জামানের প্রতিষ্ঠা করা এই এতিমখানার সামনেই তাঁকে দাফন করা হবে জানিয়েছেন তাঁর বড় ভাই কফিল উদ্দিন।
আজ বিকেলে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ট্রাকে করে মাটি এনে এতিমখানার সামনের জায়গাটি সমান করা হচ্ছে। আশপাশের খানাখন্দেও মাটি ফেলা হচ্ছে।
কামারুজ্জামানের ভাই কফিল উদ্দিন জানান, কবর খোঁড়ার কাজও প্রায় শুরু হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে ঢাকা থেকে জানানো হয়, আজ কবর খোঁড়া নাও লাগতে পারে। তাই খোঁড়ার কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
কামারুজ্জামানের বড় ভাই বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমার ভাই নির্দোষী। আমার ভাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আইজকা প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, আমরা যেন পারিবারিকভাবে জানাজাটা সুষ্ঠুভাবে করতে পারি। প্রশাসন যেন আমাদের ভাইকে আইনা সেই সুযোগটা দেয়।’ তিনি বলেন, ‘১০০ পার্সেন্ট (শতভাগ) আমার ভাই নির্দোষী।
আমার ভাইয়ের সুষ্ঠু বিচার পাই নাই। আমার ভাই, আমার ছোট ভাই, সে কোনোদিনই সোহাগপুর চিনে না। আদৌ সে কোনোদিন সোহাগপুর যায় নাই। বানানো সাক্ষী দিয়া আমার ভাইয়ের ফাঁসি দেওয়া হইছে। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না।’
কামারুজ্জামানের ফুফাতো ভাই ফজলুল করিম বলেন, ‘আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আমরা শান্তিমতো তাঁকে দাফন করতে চাই।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম সোহাগপুর গণহত্যা। ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুরে একসাথে ১৮৬ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। এতে সহযোগিতা করেছিল কামারুজ্জামানের আলবদর বাহিনী। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে ১৭৮ জন নারী বিধবা হন। পরে সোহাগপুরের ওই অংশটি পরিচিতি পায় বিধবাপল্লী নামে।
এদিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর বিধবাপল্লীর বিধবাদের অনেককেই আজ বিকেলে তাঁদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। যাঁদের পাওয়া গেছে, তাঁদের অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। দু-একজন যাঁরা ক্যামেরার সামনে মুখ খুলেছেন, তাঁদের ভাষ্য, ‘যারা অন্যায় করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই। তাদের শাস্তি হোক।’
গোলাম মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের দায়েও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে কামারুজ্জামানকে। মোস্তফার ছোট ভাই মোশারফ হোসেন তালুকদার মানিক ট্রাইবুনালের অন্যতম সাক্ষী। তিনি এনটিভিকে বলেন, ‘এই রায়ে আমি খুশি।’
২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর সোহাগপুরে গণহত্যার দায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। সর্বশেষ গত সোমবার হাইকোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন। আজ বুধবার বিকেলে সেই রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় সেখান থেকে অনুলিপি পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এখন চলছে রায় বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া।