ঢাকা সিটিতে টাকায় সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ; আ’লীগে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর ছড়াছড়ি
একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে প্রতি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সে নির্দেশকে তোয়াক্কা করেননি বেশিরভাগ প্রার্থী। ফলে আসছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়িতে কিছুটা বেকায়দায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার তোড়জোড়ও চলছিল দলের পক্ষ থেকে। এতে কেউ কেউ স্বাক্ষর করলেও বেশিরভাগই বিষয়টি আমলে নেননি।
বরং বিক্ষুব্ধ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কার্যালয়ে গিয়ে ‘জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার’ অভিযোগ করেছেন।
দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের বলেন, ‘এ ব্যাপারে আপনারা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।’
বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, নিষ্ক্রিয়, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে এমন নেতা, এমনকি সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। দলের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন এ্যাডভোকেট এম এ হামিদ খান। একই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি আসাদুজ্জামান আসাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
আসাদুজ্জামান দাবি করেন, ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ— এম এ হামিদ বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। আসাদুজ্জামান প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মী। তাই আওয়ামী লীগের সমর্থন তারই প্রাপ্য।
ছাত্রলীগ নেতারা জানান, ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যমে এম এ হামিদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুর অসংখ্য ছবিই প্রমাণ করে তার আসল পরিচয়।
এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন ছাত্রলীগ, আমার আবেগের স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। ইনশাআল্লাহ ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদটি আমি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেব।’
ঢাকা দক্ষিণে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ইয়ার মোহাম্মদ ইয়ারু। একই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ফয়সাল আহমেদ নাছির। তিনি সূত্রাপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
বিদ্রোহী প্রার্থী ফয়সাল আহমেদ নাছির বলেন, ‘ইয়ারু বিএনপি না আওয়ামী লীগ এটাই এলাকার মানুষ জানে না। সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ। এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সবাই আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলছে। আমি নির্বাচনে অংশ নেব।’
১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী হলেন— মোহাম্মদ সেলিম ও ইলিয়াসুর রহমান (বাবুল)। একক প্রার্থী দিতে না পারায় দুইজনের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
২২ নম্বর ওয়ার্ডেও একক প্রার্থী দিতে না পারায় পাঁচজনকেই সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন— ফ ক ম ইকবাল, আব্দুল মোহাইমেন, মো. মনিরুল হক বাবু, হাজী তারিকুল ইসলাম সজীব ও মো. আবেদ আলী।
ব্যাপক আপত্তির মুখে বুধবার প্রার্থী চূড়ান্ত করেও বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মো. আফছার উদ্দিনের পরিবর্তে মাকসুদ হোসেন মহসিন ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মো. কামরুজ্জামান বাবলুর পরিবর্তে মো. হামিদুল হক শামীমের নাম ঘোষণা করেছেন দক্ষিণে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক।
একই অবস্থা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনেও। উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন গাজী অলিয়ুর রহমান বাবুল। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান আব্দুল মান্নান।
দেওয়ান আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এলাকাবাসীর অনুরোধ আমি ফেলতে পারি না। এ এলাকায় আমার জন্ম। এ এলাকায় আমার বেড়ে উঠা। আমি নির্বাচন করব।’
১২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন শিরিন রোখসানা। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তিতু।
মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তিতু বলেন, ‘এলাকার জনগণ আমাকে চায়। আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। ইনশাল্লাহ আমি নির্বাচন করব।’
ঢাকা উত্তরের সংরক্ষিত ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে ঝর্না বেগমকে। একই ওয়ার্ডে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী নিলুফার ইয়াসমিন। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ১৯টা মামলা। র্যাব-পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। জনগণ আমাকে চায়, আমি নির্বাচন করব। যুব মহিলা লীগ আমার পাশে আছে।’
এ বিষয়ে দক্ষিণে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের তালিকা আপনাদের পাঠিয়েছি এর বাইরে অন্য কেউ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নন। কেউ দাবি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে আমাদের কোনো প্রার্থী নেই। কেউ দাবি করলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে। মহানগর কমিটি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’