ডিসিসি নির্বাচন আ’লীগের কাছে অসহায় জাপা প্রার্থীরা
ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। জাপার অনেক প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকির পাশাপাশি এক নেতার গাড়িচালকের ছেলেকে অপহরণের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এমনকি জাপার বহিষ্কৃত নেতা ববি হাজ্জাজকেও হুমকি দিয়ে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
হুমকি-ধামকির ব্যাপারে ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘এ সব বিষয় নিয়ে আমি আসলে আর কিছু বলতে চাই না। এবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে জনগণের যে সমর্থন পেয়েছি, আগামীতে এই সমর্থনই ইনশাআল্লাহ আমাকে জয়ী করবে।’
জাপা নেতাদের অভিযোগ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রূপনগরের ৭ নং ওয়ার্ডে জাপা সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ মো. নাসের উদ্দিনকে (ঠেলাগাড়ী মার্কা) আওয়ামী লীগের নেতারা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি শেখ নাসেরের গাড়িচালক শরীফুল হকের ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে রবিবার রাতে তাকে উদ্ধার করা হয়।
শেখ নাসের অভিযোগ করেন, ‘এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের আমাকে ও আমার কর্মীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। আমি জীবনের হুমকিতে আছি। আমার গাড়িচালকের ছেলেকে পর্যন্ত অপহরণ করা হয়েছিল। আমি আপনাদের কাছে সাহায্য চাই।’
অভিযোগের জবাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হাজী মোবাশ্বের চৌধুরী বলেন, ‘আমি হুমকি দেব কেন?’
‘শেখ নাসের একটা পাগল। ওর সঙ্গে তো ওর দলের (জাপা) লোকই নাই। আমাদের ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির যারা কর্মী আছেন উনারা সবাই আমার সঙ্গে কাজ করছেন। আমি জনগণের প্রার্থী। ইনশাআল্লাহ জনগণই আমাকে বিজয়ী করবে,’ মন্তব্য করেন তিনি।
উত্তরের ৯নং ওয়ার্ডের জাপার প্রার্থী আলমাসকেও হুমকি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাপার ঢাকা মহানগরের নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন শীর্ষ নেতা।
তবে, এসব নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ মো. আলমাস।
তিনি বলেন, ‘ভাই, আমি কিছুই বলতে চাই না। আমি স্বেচ্ছায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’
একই অবস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জাতীয় পার্টি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের। সেখানে বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতীক পাওয়া জাপা নেতাদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে নানাভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জাপার অভিযোগ, দক্ষিণের ৫১ নং ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী কাওছার আহমেদকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হুমকি দিচ্ছেন একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী কাজী হাবিবুর রহমান। রবিবার কাওছার আহমেদের দুইজন কর্মীকে মারধরও করেছে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী হাবিবেব ভাই কাজী ওয়াজেদ আলী দাদনের লোকেরা।
হুমকি পেয়ে জাপা নেতা কাওছার আহমেদ নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সোমবার নির্বাচন কমিশন ও ওয়ারী জোনের উপপুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
কাওসার আহমেদ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বিজয়ী হবো জেনেই হাবিব ও তার লোকেরা আমায় হুমকি দিচ্ছেন। আমার লোকদের মারধর করছেন। আমরা জীবন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি।’
অভিযোগের জবাবে কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। কাউকে মারধরের প্রশ্নই আসে না।’
দক্ষিণ সিটির শাজাহানপুর এলাকার ১১ নং ওয়ার্ডের জাপা সমর্থিত প্রার্থী সেলিম আহমেদ অভিযোগ করেন, একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হামিদুল হক তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দিচ্ছেন।
সেলিম আহমেদ বলেন, ‘আমি জাপার শীর্ষ নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছি। নির্বাচন কমিশনেও শীর্ষ নেতারা অভিযোগ জানাবেন।’
জাপা প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হামিদুল হক বলেন, ‘সেলিম তো একসময় আমাদের পার্টিই করতো। ছাত্রলীগ করেছে। ও যদি এসব বলে থাকে তাহলে ডাথা মিথ্যা কথা বলেছে।’
নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন ৭ নং ওয়ার্ডের জাপা সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ভাই, কি আর বলবো। সবই তো বুঝেন। এসব বিষয় নিয়ে আর কাউকে কিছু বলতেও মন চায় না।’
আসছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল ও হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন মেয়র পদে নির্বাচন করছেন।
দক্ষিণে জাপা সমর্থিত ৩৩ জন কাউন্সিলর ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।
এছাড়া, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ২২ জন কাউন্সিলর পদে ও ছয়জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।