বাঘের ‘ঐতিহাসিক’ গর্জন!
প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলেই কি না, ৩২৯ রান করেও ভয়ে ছিলেন সাকিব-মুশফিকরা। এই দলটার বিপক্ষেই ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে জিতে বিশ্বের বুকে আগমনী বার্তা জানিয়েছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু, পরের ১৬ বছরটা যে কেবল হতাশার গল্প! এশিয়া কাপের ফাইনালে দুই রানে হার, আবার গত বছরে ৩২৬ রান করেও শহীদ আফ্রিদির ঝড়ের সামনে আত্মসমর্পন – সব মিলিয়ে চাপটা ছিল বাংলাদেশের উপরই।
কিন্তু, শেষটায় এসে সব ইতিহাস-পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিলো বাংলাদেশ; বাংলাদেশের ১১ জন বাঘ। বাঘের মতই মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসলো ৭৯ রানের জয়।
৩৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ব্যাটিংয়ের শুরুটা মন্দ হয়নি পাকিস্তানের। উদ্বোধনী জুটিতে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সরফরাজ আহমেদকে সাথে নিয়ে ১০ ওভার দুই বলে ৫৩ রান যোগ করেন অধিনায়ক আজহার আলী। এরপরেই শুরু হয় বাংলাদেশেরে ফিরে আসার পালা। ছয় রানের মধ্যে সরফরাজ ও মোহাম্মদ হাফিজ আউট হয়ে যান।
এরপরও অনেক বার মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। কখনও হারিস সোহেল কখনও বা অভিষিক্ত মোহাম্মদ রিজওয়ানরা হয়েছেন কান্ডারী। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। কখনও তাসকিন আহমেদের পেস, কখনও আরাফাত সানির ঘূর্ণী, কখনওবা রুবেল হোসেনের তাণ্ডবের শিকার হয়েছেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। আর সাথে তো গ্যালারি-ভরা দর্শকতো ছিলেনই।
এতো কিছুর পর পাকিস্তান জিতে কি করে?! সেটা হলও না! ১৬ বছর পর পাকিস্তানকে হারিয়ে দিলো বাংলাদেশ। ২৫ ম্যাচ পর আসলো অধরা সেই জয়!
শুরুর হাসিটা ছিল বাংলাদেশেরই। মাশরাফি বিন মুর্তজার নিষেধাজ্ঞায় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ছিল সাকিব আল হাসানের কাঁধে। টসে জিতেই ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দেন দলকে। সেই সিদ্ধান্তটা আদৌ বাংলাদেশের পক্ষে ছিল কিনা প্রথম ২০ ওভারে সেটা বোঝার কোন উপায়ই ছিল না। কারণ, ২০ ওভার শেষে ৬৭ রান করতে না করতেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন দুই ব্যাটসম্যান।
তবে, বদলে যাওয়ার গল্পটা শুরু হয় এরপর থেকেই। বদলে দেন তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম। ইতিহাস গড়ে দু’জনই পেয়ে গেছেন সেঞ্চুরি। ২৫ মাস পর সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবাল। ১৩৫ বলে ১৩২ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
তবে, এর চেয়েও বিধ্বংসী ছিলেন মুশফিক। তার ১০৬ রান করতে বল লাগে মাত্র ৭৭ রান। আর এই দু’জন মিলে ১৭৮ রান যোগ করার পর আর পিছনে ফিরে তাকানোর কিছু ছিল না বাংলাদেশের। বড় স্কোর গড়ার পিছনে সাকিব আল হাসানের ২৭ বলে ৩১ ও সাব্বির রহমান রুম্মানের ৭ বলে ১৫ রানেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রানটাও হয়ে যায় আকাশচু্ম্বি। ৩২৯ রান করে বাংলাদেশ নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করে ফেললো বাংলাদেশ।
জবাবে পাকিস্তান থেমেছে ৭৯ রান বাকি থাকতেই!