ডিসিসি নিবার্চন : কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহ দমনে ‘কৌশলী’ বিএনপি
ক’দিন আগেও রাজধানীতে একটি ছোট্ট মিছিল করতেই বেশ বেগ পেতে হতো বিএনপিকে। কর্মসূচিগুলোতে কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল একদমই কম। সেই দলটিই কিনা আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থীভারে কাবু!
এখনো বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দিতে পারেনি দলটি। দলীয় সমর্থন না পেয়ে এ সব ওয়ার্ডে অনেকেই ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হয়েছেন। কাউন্সিলর পদে একই দলের একাধিক প্রার্থীর ঠোকাঠুকি আর টক্কর সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দলটিকে। যেহেতু নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি, তাই এ সব বিদ্রোহী প্রার্থীকে সামলাতে বেশ ‘কৌশলী’ হতে হচ্ছে বিএনপিকে।
বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথম কৌশল হিসেবে চেষ্টা করা হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া। যদিও দৃশ্যত তা খুব একটা কাজে আসছে না। বিদ্রোহীরা প্রতিযোগিতার দৌড়ে শেষতক থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। দিনরাত প্রচারণায় সরব তারা, ভোট চাচ্ছেন নিজেদের মতো করে।
বিদ্রোহীদের বসাতে ‘শেষ অস্ত্র’ হিসেবে দল থেকে বহিষ্কারের কথাও আলোচিত হচ্ছে জোরেশোরে। তবে এ ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতিতে চলছে দলটি।
বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতারা জানান, কাউন্সিলর পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা কাজ করছেন। এলাকাভিত্তিক স্থানীয় নেতারাও সঙ্গে আছেন। একক প্রার্থী ঠিক করতে তারা শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। বিদ্রোহীদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বসাতে না পারলে প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকিও দেওয়া হতে পারে। তবে যেহেতু নির্বাচন একদম নাকের ডগায়, তাই রয়ে-সয়েই কাজ করছে দলের হাইকমান্ড।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দেওয়ার জন্য। এলাকাভিত্তিক নেতারাও স্থানীয়ভাবে চেষ্টা করছেন। তা ছাড়া এখন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তাদের বুঝিয়ে বলা আর কী, যাতে দলসমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন।’
সাংগঠনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। যারা দীর্ঘদিন দল করেন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তারা নিশ্চয়ই জানেন। তারা বুঝে নিবেন।’
দল থেকে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা সময়-মতো জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলের একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে একটা আপসের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যদি না হয় তাহলে তো একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে। এটা পরে দেখা যাবে।’
ঢাকা সিটি উত্তর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ ছাত্রদল ও যুবদল নেতা সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আছি। দল যদি জনপ্রিয়তা দেখে সমর্থন দিত তাহলে কোনো আপত্তি থাকত না। টাকা খেয়ে সমর্থন দিলে তো আর কিছু করার নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিটি নিবার্চনের নিয়মে কোথাও লেখা নেই দলীয় সমর্থন লাগবে। আল্লাহ যদি সহায়তা করেন, আমি নিবার্চনে আছি, থাকব— ইনশাআল্লাহ।’
ঢাকা উত্তরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী মো. মিজানুর রহমান। তিনি রবিবার দুপুরে বলেন, ‘দল আমার সঙ্গে মারাত্মক বেইমানী করেছে। আমাকে নির্বাচনে নামিয়ে দিয়ে টাকা খেয়ে আওয়ামী লীগের লোককে দলীয় সমর্থন দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিএনপির প্রার্থী হিসেবেই প্রচারণা চালাব। নির্বাচনে আছি, থাকব। যে কয়টা ভোট পাই তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’
ঢাকা উত্তরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী জোহরা রহমান রবিবার দুপুরে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নির্বাচনে মাঠে আছি, থাকব— ইনশাআল্লাহ।’
এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শামছুল হুদা কাজল। দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক কাউন্সিলর এডিএম মোস্তফা বাদশা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আরও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিস্ক্রিয় করতে দলটির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান খোকন বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে প্রতিটি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দেওয়ার। বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কমে আসছে।’
সাংগঠনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা দলীয় নিবার্চন নয়, এখানে দলীয় সমর্থনের প্রয়োজন হয় না। যে কেউ নিবার্চন করতে পারেন। চাইলেই তো আর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তা ছাড়া অনেকের প্রার্থিতা টিকে আছে। এখন তো আর তারা প্রত্যাহার করতে পারছেন না। তারা শুধু প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থেকে দলের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারেন।’
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপাতত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’