ভিসির অপসারণ দাবি : জাফর ইকবালসহ শাবিপ্রবির ৩৫ শিক্ষকের পদত্যাগ
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ৩৭ প্রশাসনিক পদ থেকে লেখক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালসহ ৩৫ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক ফোরামের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার বেলা ১১টার দিকে তারা গণপদত্যাগ করেন।
ফোরামের আহ্বায়ক ও রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ সামছুল আলম, যুগ্ম-আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মস্তাবুর রহমান, আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক প্রফেসর ড. নাজিয়া চৌধুরী পদত্যাগপত্রগুলো জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইসফাকুল হোসেনের কাছে। ইসফাকুল হোসেন পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তা তৎক্ষণাৎ গ্রহণ করেন।
পদত্যাগকৃত শিক্ষকরা হলেন— ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির পরিচালক ও ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সেন্টার ফর এক্সিলেন্সের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস, লোক প্রশাসন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল আউয়াল বিশ্বাস, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এমদাদুল হক, সহকারী প্রক্টর, পরিবহন প্রশাসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সকল ছাত্রছাত্রী হলের প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্ট।
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর সৈয়দ সামছুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, উপাচার্যের বাজে আচরণের প্রেক্ষিতে আমাদের এ পদত্যাগ। এই উপাচার্যের সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই এক হয়ে কাজ করব না। কারণ তার সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি পরে জানিয়ে দেব।
পদত্যাগের ব্যাপারে জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে ভিসির সঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত আমি আরও দেড় বছর আগেই নিয়েছি। অন্যান্য শিক্ষকেরা এখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও গত দেড় বছর ধরে আমি সভায় অনেকটাই অনিয়মিত। কারণ আমি এই ভিসির সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না।’
তবে তাদের এ পদত্যাগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না বলে জানান তিনি।
শিক্ষকদের পদত্যাগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমি মিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা যেন পদত্যাগের বিষয়টি আরেকটু ভেবে দেখেন। আমি আশা করছি তারা পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেবেন।
পদত্যাগ করা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার সকালে ভিসির সঙ্গে একাডেমিক ভবনের স্পেস সম্পর্কিত জটিলতা নিরসনের ব্যাপারে কথা বলতে যান পদার্থবিজ্ঞান ও জিওগ্রাফি এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (জিইই) বিভাগের ১৯ জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের স্ত্রী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ইয়াসমিন হকও উপস্থিত ছিলেন। ওই দিন ভিসির সঙ্গে কথাকাটাকাটি হলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ বদিউজ্জামান ফারুক এবং জিইই বিভাগের প্রফেসর ড. শরীফ মোহাম্মদ শারাফউদ্দিন বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ ঘটনার রেশ ধরেই ভিসিবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকরা।