সংখ্যাগরিষ্ঠতা না মেলায় সেনা মোতায়েনে সিদ্ধান্তহীন ইসি
আসন্ন ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে দিনভর ‘নাটকীয়তার’ পরেও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেনা মোতায়েন নিয়ে কমিশন সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত না পাওয়ায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না সিইসি।
সোমবার পর্যন্ত কমিশনারদের একটি পক্ষ সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিলেও বাকিরা সরাসরি মত দেননি। এ কারণেই কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারিনি।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ছাড়া বাকি চার জন কমিশনারের মতামত লাগবে। তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ (তিন জন) পক্ষের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সিইসি সেনা মোতায়েনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আর যদি চার জনের মধ্যে দু’জন করে পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নেন তাহলে সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ তার মতামত তুলে ধরবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ পক্ষ পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে রয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ। সিইসির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন কনিষ্ঠ কমিশনার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। তিনি ইতোমধ্যে লিখিত মতামতও জানিয়েছেন। তবে অন্য কমিশনারদের কাছে ফাইল পাঠানো হলেও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্পষ্ট করে মতামত দেয়নি তারা। তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ফাইলে স্বাক্ষর করবেন।
এদিকে, সেনা মোতায়েনের দাবিতে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক ও আবু হাফিজ সিইসিকে জানিয়েছেন, অতীতের সিটি নির্বাচনগুলো সেনাবাহিনী ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকেও কোনো আশঙ্কার কথা জানানো হয়নি।
অপর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী এক পৃষ্ঠার মতমত জানিয়েছেন। তিনি পরিস্থিতি বিবেচনা করার কথা জানালেও সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন কিনা জানা যায়নি।
ইসি সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী নিয়ে ইসি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগেই একজন কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কমিশন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরদিন এ সংবাদটি গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ করে। এতে কয়েকজন কমিশনার ক্ষুব্ধ হন। তখন থেকেই মতনৈক্যের সৃষ্টি হয়।
ইসি সূত্র আরও জানায়, সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে সোমবার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, আবু হাফিজ ও মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজকে নিয়ে বৈঠক করেন সিইসি। তবে তারা কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারেনি। পরে সেনা মোতায়েনের পক্ষে চার কমিশনারকে নথিতে লিখিত মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু দিন ভর ফাইল চালা-চালি করা হলেও সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিকেলে সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা অফিস ত্যাগ করেন।
দুপুরে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেনা মোতায়েন নিয়ে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নথিতে সিদ্ধান্ত হবে এবং সবার মতামত নেয়া হবে।’
নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আপনারা দুই-তিন দিনের মধ্যে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে জানতে পারবেন।’
সচিব বলেন, ‘সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাদের জানাতে পারছি না।’
এর আগে রবিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। তারপরও আমরা পর্যবেক্ষণ করে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।’
ওইদিনের বৈঠক শেষে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা দেখানো হয়নি। তারা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। প্রশাসন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশ কাজ করছে। যার ফলে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির কোনো অবনতি ঘটেনি। এছাড়া নির্বাচন ভল্ডুল করতে পারে এমন আশঙ্কাও দেখছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।