ওয়ার্ল্ড ভিশনের `নির্মম রসিকতা’ : দুর্যোগের পর ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি মহড়া’
২১ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ২২ এপ্রিল বুধবার ভোর পর্যন্ত শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড়ে ঘর ভেঙ্গে ও গাছচাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ায় শেরপুরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের তার ও ঘরের উপর ভেঙ্গে পড়া গাছ এ রিপোর্ট পর্যন্ত সরানো সম্ভব হয়নি। ঝড়ে নিহতদের বাড়ীতে চলছে কান্নার রোল। এমন অবস্থায় শেরপুর ওয়ার্ল্ড ভিশন আয়োজন করলো ‘দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি মহড়া’র।
বুধবার সকালে শেরপুর আফছর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নিয়ে এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশন এই ‘দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি মহড়া’র জমকালো আয়োজন করে। দুর্যোগের পর দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতির এমন মহড়াকে অনেকেই ‘নির্মম রসিকতা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।’
নালিতাবাড়ী প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত তখন ওয়ার্ল্ড ভিশনের দুর্যোগ প্রস্তুতি মোকাবেলার মহড়া ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহতদের সাথে নির্মম রসিকতা ছাড়া আর কিই বা হতে পারে।’ ডোনারদের টাকা হালাল করার জন্য এমন ‘নির্মম রসিকতা’ ঝড়ে নিহতদের প্রতি অসম্মান আখ্যায়িত করে এমন অমানবিক ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বুধবার সকালে যখন ওয়ার্ল্ড ভিশনের এই মহড়া যখন চলছিল তখন নালিতাবাড়ী কলসপাড়ের তারাকান্দি গ্রামের ঘরের উপর গাছ পড়ে নিহত হায়দর আলীকে উদ্ধার করছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসী। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। শ্রীবরদী উপজেলার রাণী শিমূল ইউনিয়নে ঝড়ে নিহত কাজলীকে উদ্ধার করে তার স্বজন ও এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক দুলাল মিয়া বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি মহড়ার ব্যাপারটি সরকারী ভাবে করা হয়নি। ওয়ার্ল্ড ভিশন নামক একটি এনজিও এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি।’
তবে রাতের ঝড়ে উদ্ধারকার্যের ব্যাপারটি সম্পর্কে দুলাল মিয়া জানান, ‘আমাদের কাছে কেউ উদ্ধারকার্যের ব্যাপারে সহযোগিতা চাননি বলেই আমরা উদ্ধার কার্যে যাইনি।’
সকালে শেরপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের অভিযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, ‘জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উপর ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া গাছ সরানোর কাজ চলছে। ফলে জেলার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।’
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান জানান, ‘পুলিশ ভোরেই বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’
শেরপুরের জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন জানান, ‘প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা সকালেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও ঝড়ে নিহতদের স্বজনদের কাছে পৌচেছে। নিহতদের পরিবারের জন্য ইতোমধ্যে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনপূর্বক ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যতটুকু সম্ভব করা হবে।’
এ ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড ভিশনের জেলা প্রধান সজল বৈদ্য’র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে হলে তার অফিস থেকে জানানো হয় উনি একটি প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত আছেন।