পুলিশের টার্গেট বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী
ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের অধিকাংশের নামেই মামলা রয়েছে। আর যাদের নামে মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হবে।
ডিএমপির এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচন। এ নির্বাচনের আগেই গ্রেফতার হতে পারেন বিএনপি সমর্থিত অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, দুদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া তার অফিসে সন্ধ্যার পরে একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে ডিএমপি’র ক্রাইম ডিভিশনের (অপরাধ বিভাগ) ৮ উপ-পুলিশ কমিশনারসহ (ডিসি) মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সিটি নির্বাচনের পরিস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়েই এ বৈঠকে মূল আলোচনা হয়। এখানে অংশ নেওয়া ডিসিরা তাদের নিয়ন্ত্রিত ওসিসহ অন্যদের সঙ্গে পরে বৈঠক করে নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের গ্রেফতারে সরাসারি কোনো নির্দেশনার কথা কমিশনার বলেননি। তবে কমিশনারের নির্দেশনা ছিল— রাজধানীতে সহিংসতাকারী যারা আছেন তাদের তালিকা নিয়ে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করতে হবে। একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে নাশকতা করতে পারে এমন জামায়াত-বিএনপি সদস্যদের গ্রেফতার করতে হবে।
বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের তথ্য অনুসারে, গত তিন মাসের আন্দোলনে সারাদেশে অসংখ্য নাশকতার মামলা করা হয়েছে। এ সব মামলার বেশিরভাগ আসামিই বিএনপির নেতাকর্মী। বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতার মামলা রয়েছে। অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না গ্রেফতারের ভয়ে। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসও গ্রেফতার ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ডিএমপি কোনো প্রার্থীকে গ্রেফতার করছে না। তবে ফৌজদারি মামলার কোনো আসামি যদি নির্বাচনে প্রার্থী হনও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের তালিকা সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসী, অস্ত্র ও বোমাবাজদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়। তাদের মধ্যে কারাগারে ও জামিনে মুক্ত কারা আছেন তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কোনো প্রার্থী যদি নাশকতাকারী হয় তার নামও চলে আসবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের গ্রেফতারের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা না হলেও ইতোমধ্যে বিএনপি সমর্থিত তিনজন প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল খায়ের বাবলুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বিএনপির ধানমণ্ডি থানার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। শুক্রবার দুপুরে হাজারীবাগের টালি অফিস এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী কায়সার আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের মধ্যপাইকপাড়া বড় মসজিদ থেকে আসরের নামাজ পড়ে কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন কায়সার। এ সময় পুলিশ তাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
এ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী কাজী হাসিবুর রহমান ওরফে শাকিলকে গ্রেফতার করেছে পল্টন থানা পুলিশ। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর চামেলীবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে দিন পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। রবিবার তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ। গ্রেফতার এ সব প্রার্থীর বিরুদ্ধে সহিংসতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনের তথ্য অনুসারে ঢাকা উত্তরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদল সভাপতি এম এ মান্নান ও মোহাম্মদপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সোহাগকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. বাবুল শিকদারকে শুক্রবার পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে নিয়ে যায়। উত্তরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আকতার হোসেন ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল গাজীসহ তিনজনকে নির্বাচনী প্রচারণাকালে শুক্রবার মধুবাগ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ গ্রেফতার করেছে।