কামারুজ্জামানের হাতে লেখা ৩৬ পৃষ্ঠার সেই চিঠি

kamruzzaman_1_Edited-OKমানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রায় সাড়ে চার বছর আগে (২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৭ নম্বর সেল থেকে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান নেতৃত্বকে ৩৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছিলেন। ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ সময়ের দাবি’ শিরোনামে ওই চিঠির খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জামায়াতের মধ্যে শুরু হয় তোলপাড়। এমনকি রাজনীতিক মহলেও নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই গ্রেফতার হন জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তার সঙ্গে একই অপরাধে কারাগারে আটক ছিলেন (এখনো আছেন) জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) এবং ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া দলটির আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা। দীর্ঘ আইনি ও বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ১১ এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধে কামারুজ্জামানেরও ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। কামারুজ্জামান ওই চিঠিতে লিখেন, ‘‘আন্দোলন করে আমাদের মুক্ত বা সরকারের পতন করা যাবে এমন সম্ভাবনা নেই। বর্তমান সরকারের আমলেই আমাদের কিছু সংখ্যকের ‘বিচারের নামে প্রহসন’ হবে। আমরা ন্যায় বিচার পাব না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও একটি ইসলামী দলের নেতাদের শাস্তি হলে তো ভেতরে ভেতরে তারা অখুশি হবে না। জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে বিচার করার পর জামায়াতের ভাব-মর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হবে। জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।’’ এ অবস্থায় জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্বকে তিনটি পথ বাতলে দিয়ে তিনি বলেন— এক. ‘যা হওয়ার হবে। আমরা যেমন আছি তেমনি থাকব।’ দুই. ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পেছন থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে। এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে।’ তিন. ‘আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে, তারা জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াব এবং সম্পূর্ণ নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেব। ’ এর মধ্যে দ্বিতীয় পথটি গ্রহণের প্রস্তাব করে প্রথম প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হবে নেতৃত্ব আঁকড়ে থাকা হতবুদ্ধিতা। আর তৃতীয়টা গ্রহণ করা যেত যদি আমরা ১৯৭১ সালের বিষয়টার রাজনৈতিক মীমাংসা করতে পারতাম।p-18 ১৯৭১-এর (স্বাধীনতাবিরোধী) ভূমিকার কারণে জামায়াতে ইসলামী জনগণ বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বর্তমান দেশের সংবিধানের আলোকে একটি নতুন দল গঠনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে জামায়াতে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে এমনটি মনে হলেও ক্ষতির কিছু নেই। নতুন প্লাটফর্ম তৈরী হলে রাজনৈতিকভাবে কেউ সরাসরি আক্রমণ করতে পারবে না। নতুন দলের পদ-পদবির নাম বাংলাতেই হতে হবে। তিনবারের বেশী কেউ কেন্দ্রীয় বা জেলা সভাপতি থাকতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সব পেশার লোকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। নির্বাচনে প্রথমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। যতটি মন্ত্রণালয় আছে ততটি ডিপার্টমেন্ট করে (সম্পাদক) প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের জন্য দুইজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। এছাড়া দলে একটি অভিভাবক বা উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। এতে জ্যেষ্ঠ নাগরিকসহ বিভিন্ন পেশার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক, বিশিষ্ট আলেম ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা থাকবেন। কামারুজ্জামান আরও লিখেছেন, “১৯৭১ সালে যদিওবা জামায়াত পাকিস্তানের সংহতির পক্ষে ছিল, তথাপি বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নেয়। মুসলমানদের আন্দোলনের ফসল পাকিস্তানের ব্যাপারে ইসলামী দলগুলোর(জামায়াতসহ অন্যান্য) একটা দুর্বলতা ছিল এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর সকল ইসলামী দল ও ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিয়ে গঠনমূলক কাজ করছে।” জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে বিরোধিতা করে বিভিন্ন মহলে সমালোচিত। অন্য কোনো দেশের ইসলামী দলের এ ধরনের অভিযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মিশরে ইখওয়ানুল মুসলেমীন ও তুরস্কের ইসলামী দলের নেতারা সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। তেমনিভাবে ইয়েমেন, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া ও সুদানসহ বিভিন্ন দেশে ইসলামী দলের নেতারা নিজ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেননি, বরং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।” অবশ্য জামায়াতের করুণ অবস্থার জন্য এই চিঠিতে মিডিয়াকেও দোষারোপ করেন কামারুজ্জামান। এ বিষয়ে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী সম্প্রতি বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়ার পরপরই তিনি দলের যে পরিবর্তন দরকার এবং যারা অভিযুক্ত (যুদ্ধাপরাধ) তাদের বাদ দিয়ে দল চালানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে একটি চিঠিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি শেষ পর্যন্ত তার ওই চিন্তা-ভাবনা ও অবস্থান থেকে সরে আসেননি।’ কামারুজ্জামান ওই চিঠিতে উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বিষয়ে তার নিজের মতামত তুলে ধরেন।

কামারুজ্জামানের ৩৬ পৃষ্ঠার সেই চিঠি

https://drive.google.com/file/d/0B9ksDS8SM123QzU2NEc2NzRLNm8/view?usp=sharing

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend