জয়ের চিন্তায় মগ্ন মুশফিক
ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ ও একমাত্র টোয়েন্টি২০তে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের উচু স্তরেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজেও সেই ধারা ধরে রাখতে চান টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে সোমবার মুশফিক বলেছেন, ‘ড্রয়ের চিন্তা করে খেললে মাথার মধ্যে রক্ষণাতত্মক ভাব চলে আসার ঝুঁকি থাকে। সবকিছুই নির্ভর করে ম্যাচের পরিস্থিতির ওপর। তারপরও আমাদের ম্যাচে নামতে হবে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। জয় ছাড়া ভিন্ন কোনো কিছু করার নেই। দলে অনেক ম্যাচ উইনার খেলোয়াড় আছে। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ, নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমরা কেন প্রস্তুত হব না? আমি মনে করি জয়ের চিন্তা করাই আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।’
মুশফিক আরও বলেছেন, ‘আমাদের অ্যাপ্রোচ অবশ্যই জয়ের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২টি টেস্ট ম্যাচই কিন্তু আমরা লাস্ট সেশনে গিয়ে জয় লাভ করেছি। টেস্ট ম্যাচ কখনো সহজ হয় না কারও জন্য। আমাদের বিশ্বাস আছে, আমাদের বোলিং আক্রমণ যেমন তাতে ২০ উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা আছে। ব্যাটসম্যানদেরও ৬০০ প্লাস রান করার মতো ক্ষমতা আছে। দলের ফিল্ডাররা প্রাপ্ত সুযোগগুলো যদি কাজে লাগাতে পারে রেজাল্ট আমাদের পক্ষে আসবে।’
মঙ্গলবার মাঠে নামার আগে আরও একটি আত্মবিশ্বাসের জায়গা আছে বাংলাদেশের। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই ব্যাকফুটে পাকিস্তান। টানা ৫ ম্যাচ হারতে হয়েছে পাকিস্তানকে। মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে যতগুলো টেস্ট খেলেছি এতো ভাল মানসিক অবস্থা নিয়ে এর আগে মাঠে নামেনি।আমরা আত্মবিশ্বাসী। ৫ দিন ভাল ক্রিকেট খেলার আত্মবিশ্বাস আমাদের মধ্যে রয়েছে। লড়াইয়ের জন্য মানসিক ও শারিরিক ভাবে প্রস্তুত ক্রিকেটাররা ।’
মাশরাফি ওয়ানডে সিরিজ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগে এটা কি আপনার জন্য বাড়তি কোনো চাপ কিনা এর জবাবে মুশফিক বলেছেন, ‘চাপ নেই তবে চ্যালেঞ্জ বলতে পারেন। আমাদের ওয়ানডে ও টোয়েন্টি২০ ভাল হয়েছে। ঠিক তেমনই চেষ্টা করব টেস্ট সিরিজে। পাকিস্তান টেস্টের চার নম্বর দল। ওদের টেস্ট স্কোয়াডে অভিজ্ঞ কিছু খেলোয়াড় আছে। আমি বলব এটা চাপ নয়, এখানে প্রত্যাশা জড়িত। আশা করছি ৫ দিন যদি আমরা সেরা ক্রিকেট খেলতে পারি তাহলে রেজাল্ট আমাদের পক্ষে আসবে।,
পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ টেস্টের একটিতেও জয় পায়নি বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪টি ম্যাচই বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছিল টেস্ট জেতার। কিন্তু শেষ অবধি জয় ধরা দেয়নি। মুলতান টেস্টের আক্ষেপ মুশফিকের মনে নাড়া দেয়। অবশ্য মুশফিক তখনও বিকেএসপির ছাত্র। এ ব্যাপারে মুশফিকের জবাব, ‘খেলাটা দেখেছিলাম এবং খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। আক্ষেপ অবশ্যই আছে। আক্ষেপ শুধু এটা নয়, টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের যে ক্ষমতা সেই অনুযায়ী আমরা শেষ ১৫ বছর ধরে টেস্ট খেলতে পারেনি। সত্যি বলতে শেষ ২ বছর ধরে আমরা বাইরে এবং হোমে খুব ভাল ক্রিকেট খেলছি।’
ইউনুস খান ও মিসবাহকে নতুন করে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের ছাড়া আর কাউকে নিয়ে বাড়তি কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা এ প্রশ্নে মুশফিক বলেছেন, ‘তারা টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ ব্যাটসম্যান। অবশ্যই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ একটু বেড়েছে। মাঠে নামার আগে তাদের (পাকিস্তান) মাথায় থাকবে ৪-০। মানসিক ভাবে তারা একটু হলেও পিছিয়ে থাকবে। আমাদের বোলারদের মূল টার্গেট থাকবে তাদের এই ২ জন মূল খেলোয়াড়কে চাপে রাখা। এর বাইরে আজহার আলী ভাল খেলছে। হাফিজও ভাল। মূল খেলোয়াড় নয়, আমাদের জিততে হলে ২০টি উইকেটই নিতে হবে।’
বোলিং বিভাগ খুব দুর্বল হয়ে গেল কিনা এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘না, রুবেল খুব ভাল বোলিং করছে। রাজীব গত টেস্ট খেলছে। হয়তো সব ম্যাচে ভাল করেনি। তারপরও আমরা যতটুকু প্রত্যাশা করেছিলাম ততটুকু করেছে। শহীদ গত এক-দেড়বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট ভাল ক্রিকেট খেলেছে। বোলিং বিভাগ নিযে আমরা আশাবাদী। যারাই খেলবে ২ জন কিংবা ৩ জন তারা যেন তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে-এটাই প্রত্যাশা করছি।’
খুলনায় ২টি টেস্টের মধ্যে একটি জয় পেয়েছেন। অন্যটি জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। এই ভেন্যুতে মঙ্গলবার তৃতীয়বারের মতো টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান দলটির জন্য এটা লাকি ভেন্যুও বটে। লাকি ভেন্যুতে খেলতে নামা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘কোনো গ্রাউন্ডে খেলতে গেলে অতীতের ভাল স্মৃতি থাকলে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু ভাল রেজাল্ট করতে অতীত কোনো কাজেই লাগে না। আমাদের আবার প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে। ৫ দিন খুব কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা প্রস্তুত।’
চলতি টেস্ট সিরিজে হাফিজ-সাকিব নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে কিনা এ প্রশ্নে মুশফিক বলেছেন, ‘অবশ্যই, তারা ২ জনই র্যাংঙ্কিংয়ের উপর দিকে। তাদের ২ জনের মধ্যে লড়াই হবে। হাফিজ এরই মধ্যে বোলিং করার অনুমতি পেয়েছে। সাকিব ব্যাটিং-বোলিং খুবই ভাল করছে। প্রত্যাশা থাকবে সাকিব যেন ভাল করে আর হাফিজ যেন সাকিবের চেয়ে কম ভাল করে।’