রাত পোহালেই তিন সিটিতে ভোটযুদ্ধ

Untitled-1রাত পোহালেই ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সকল প্র্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন্ (ইসি)। এছাড়া প্রার্থীরাও ২৬ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিন সিটির ২ হাজার ৭০১টি কেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছে ইসি। তিন সিটিতে প্রায় সাড়ে ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৬ জন ভোটার রয়েছেন।
ইসি জানায়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে অতীতের চেয়ে প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ক্যান্টনমেন্টে ‘রিজার্ভ ফোর্স’ হিসেবে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে।
এক নজরে তিন সিটি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৬টি ওয়ার্ডে ১৬ জন মেয়র প্রার্থী, ২৮১ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৯ জন সংরক্ষিত সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ সিটিতে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৯৩টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৯২টি। মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৪ হাজার ৭০১ জন ও নারী ভোটার ১১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৩ জন।
নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১৮ হাজার ৭৬৯ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার রয়েছেন ১ হাজার ৯৩ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৯২ জন ও পোলিং অফিসার ১১ হাজার ৭৮৪ জন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২০ জন মেয়র প্রার্থী, ৫৭ ওয়ার্ডের এই সিটিতে ৩৯০ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৭৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৮৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৪৬টি। মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ২৮৬ জন ও নারী ভোটার ৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭ জন। নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভোটগ্রহণের কাজ করবেন ১৫ হাজার ১২৭ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার ৮৮৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৪ হাজার ৭৪৬ জন ও পোলিং অফিসার ৯ হাজার ৪৯২ জন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে ১২ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৩ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এখানে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭১৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৯০৬টি। মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজ ৪৪৯ জন। এর মধ্যে পুরষ ভোটার ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ জন ও নারী ভোটার ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন।
চট্টগামে মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৩৭ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার ৭১৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৪ হাজার ৯০৬ জন ও পোলিং অফিসার ৯ হাজার ৮১২ জন।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ সোমবার বলেছেন, নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ৮০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে বিজিবি সদস্য থাকবে ১০০ প্লাটুন।
সিইসি বলেন, ভোটের দিন কেন্দ্রের ভেতর সশস্ত্র অবস্থায় ১০ জনসহ ২২ জন আইন শঙ্খলা সার্বক্ষণিক অবস্থান করবেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১২ জন সশস্ত্র সদস্যসহ ২৪ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশ ও র‌্যাবের ২টি করে মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেবে।
কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ আরও বলেন, পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পরও জনগণের স্বস্তির জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা ঢাকার তিনটি ও চট্টগ্রামের দু’টি জায়গায় অবস্থান করবে। এছাড়া ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও শতাধিক বিদেশী পর্যবেক্ষক থাকবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা। একই সঙ্গে প্রার্থীরাও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনে সোমবার দুপুরে ব্যারিস্ট্রার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনমনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। নির্বাচনে অনিয়ম হতে পারে।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সোমবার সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা অনুমতি পাননি।
পক্ষপাতিত্ব করলে কঠোর ব্যবস্থা
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ বলেন, তিন সিটির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সকল ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিচ্ছি। তাদের কোনোরকম শৈথিল্য নির্বাচন কমিশন বরদাস্ত করবে না। এর ব্যত্যয় হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি ফেল করলে সেনাবাহিনী
কী ধরনের পরিস্থিতি হলে সেনাবাহিনীকে ডাকা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেন, কর্তব্যরত রিটার্নিং অফিসার অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট সেনাবাহিনীকে ডাকবেন। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি উদ্ভব হতে হবে।
তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের মারপিট ও গণ্ডগোল হলে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। তারা ফেল করলে অথবা যদি মনে হয়, তারা অনেক দূরে আছে তাহলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেনাবাহিনীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর এই সিদ্ধান্ত নেবে রিটার্নিং অফিসার।
মাঠে থাকবে ৮০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী
নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পরিপত্র থেকে জানা গেছে, তিনি সিটি নির্বাচনে ৭৮ হাজার ৭৩০ জন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য থাকবে। এছাড়া ক্যান্টনমেন্টে তিন ব্যাটালিয়ন সেনাবাহিনী (২ হাজার ২২৩ জন) প্রস্তুত থাকবে। ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল মাঠে থাকবে তারা।
ইসি জানায়, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩০ হাজার ৭৬৪ জন, দক্ষিণ সিটিতে ২১ হাজার ৪৭০ জন এবং চট্টগ্রামে ২১ হাজার ৪৭০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকবে। প্রতি সিটিতে এক ব্যাটালিয়ন (৭৪১ জন) সদস্য রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তত থাকবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ৩৫ প্লাটুন করে এবং চট্টগ্রামে ৩০ প্লাটুন বিজিবি থাকবে। প্রতি প্লাটুনে ৩৪ জন সদস্য করে করে মোতায়েন করা হবে ৩ হাজার ৪শ সদস্য।
তিন সিটিতে ২৩৮ জন কোস্টগার্ড সদস্য মোতায়েন থাকবে। ঢাকার দুই সিটিতে ২ প্লাটুন করে ও চট্টগ্রামে ৩ প্লাটুন কোস্টগার্ড সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।
ঢাকা উত্তরে ৭২টি, দক্ষিণে ১১৪টি ও চট্টগ্রামে ৮২টি র‌্যারের টিম থাকবে। প্রতিটি টিমে ৮ জন সদস্য থাকবে। তিন সিটিতে ২ হাজার ১৪৪ জন সদস্য নিরাপত্তার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করবে।
মোবাইল ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে র‌্যাবের সমপরিমাণ টিম নিয়ে ২১৪৪ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে।
পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ঢাকা উত্তরে ১৮টি টিম, দক্ষিণে ২৮টি টিম ও চট্টগ্রামে ২০টি টিম থাকবে। প্রতিটি টিমে ১৬ জন করে ১ হাজার ৫৬ জন সদস্য নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৭জন করে ১৮ হাজার ৯০৭ জন পুলিশ। সাধারণ কেন্দ্রে একজন করে ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়ে ২৭০১ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ৩ জন ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়ে ৮ হাজার ১০৩ জন নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকবে।
এছাড়া সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বিবেচনায় ১৪ জন করে আনসার নিয়ে ৩৭ হাজার ৮১৪ জন মোতায়েন থাকবে।
ভোট কেন্দ্রে পৌঁছেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম
ঢাকা ও উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটিতে সোমবার কেন্দ্রে কেন্দ্র নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। দুই সিটিতে ২ হাজার ৭০১টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর ২০টি স্থান থেকে ঢাকা দুই সিটির জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, স্টিকার, গার্নি ব্যাগ, অমোচনীয় কালি-কলম, অফিসিয়াল সিল, ব্রাশ সিল ও প্যাড সংগ্রহ করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহয়তায় প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নিবাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. শাহ আলম বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারা সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কাছে ভোটের সামগ্রী বুঝে নিয়েছেন। ৮টি স্থান থেকে থেকে সোমবার সকাল ১০টা থেকে নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম সিটির ভোট কেন্দ্রেও নির্বাচনী পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend