ভোটের হাওয়ায় তারকারা
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানীতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। রাত পোহালেই শুরু হবে নির্বাচন। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা-উদ্দীপনা। আবার ভোটার না হয়েও শহরের বাসিন্দা হওয়ার কারণে এই উৎসবকে আপন করে নিয়েছেন অনেকে।
ভোট উৎসবের মাতাল হাওয়া ছুঁয়ে গেছে তারকাদের। আলাপচারিতায় বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় তারকা এমনটাই জানিয়েছেন। কথা বলেছেন পাভেল রহমান, সোমেশ্বর অলি ও মাসুম আওয়াল।
রোকেয়া রফিক বেবী, মঞ্চ অভিনেত্রী
ঢাকা ভাগ হয়ে যাওয়ার পর একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। আমার বাড়িটা পড়েছে ঢাকা দক্ষিণে। আমাদের ঠিক পেছনের বাড়িটা পড়েছে ঢাকা উত্তরে। আমরা এখন ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থীকে ভোট দিতে যাব। সকালে ভোট দেব এ নিয়ে একটু উত্তেজনা আছে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়াটা পছন্দ হয়নি। এতে করে ভোটারদের ভোগান্তি বাড়বে। সব মিলিয়ে আমার চাওয়া যোগ্য প্রার্থীরা নেতৃত্ব আসুক। আমাদের শহরটা যেন সুন্দর হয়ে উঠে।
মাকসুদ, সঙ্গীতশিল্পী
রাজনৈতিক ও সমাজ সচেতনতা থেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় আমি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। এই প্রেক্ষাপটে আমার গানও আছে। বর্তমান সময়ে আমরা চাই নতুন নেতৃত্ব, চাই নেতৃত্বে তারুণ্য। যেমন জোনায়েদ সাকি। এত বছর ধরে রাজনীতিবিদরা আমাদের হতাশ করেছে শুধু। আর হতাশা চাই না। জোনায়েদ সাকিকে আমি খুব কাছ থেকে জানি। তিনি একজন খেটে খাওয়া মানুষ। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্যই তার অকৃত্রিম মমতা। আর এই মমত্বই সঠিক নেতৃত্ব দেবে।
আমাদের রাজনীতি তিনটি কারণে আটকে আছে— পেশী, পয়সা ও পরিবারতন্ত্র। যার লোকবল আছে কিংবা যার টাকার জোর আছে অথবা বিশেষ বিশেষ পরিবারের; তারাই এতদিন রাজনীতিতে অংশ নিয়েছে, নেতৃত্ব দিয়েছে। তাহলে কৃষক, দোকানী, রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টস কর্মীদের নেতা কে? বহু বছর সবাই ভোট দিয়েছে ঠিকই, তবে অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সময় হয়েছে সবকিছু বদলে দেওয়ার। তৃতীয় শক্তি বলতে যা বুঝি, এখন সময় সেই তৃতীয় শক্তির। জোনায়েদ সাকি গণমানুষের নেতা। আদর্শগত দিক থেকেই তিনি নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে বদ্ধপরিকর।
ড. মোহাম্মদ বারী, নাট্যনির্দেশক
রাজনৈতিকভাবে সারাদেশে যে অরাজকতা শুরু হয়েছিল সিটি নির্বাচনকে ঘিরে সেটা বন্ধ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক। আমার প্রত্যাশা নির্বাচনের পরেও যেন স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকে। আমি ঢাকা দক্ষিণের ভোটার। কালকে ভোট দিতে যাব। প্রার্থীদের দেখে ভাল লাগছে। তারা সবাই বেশ তরুণ। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে ভাল কিছু হবে।
ওমর সানী, চিত্রনায়ক
নির্বাচনকে ঘিরে আমার একটাই প্রত্যাশা। সামনের দিনগুলোতে মানুষকে স্বস্তিতে থাকতে দিন। রাজনীতির নামে কোনো প্রকার অরাজকতা আমরা চাই না। নির্বাচনকে ঘিরে কয়েক দিন আমরা ভাল ছিলাম। সামনের দিনগুলোতেও ভাল থাকতে চাই। রাজনীতি যেন মানুষের জন্য হয়ে উঠে।
কৃঞ্চকলি ইসলাম, সঙ্গীতশিল্পী
আপনি শিল্পী মানুষ, তেল, গ্যাস, কয়লা নিয়ে আপনার কথা বলার দরকার কী? এমন প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়। সহজ উত্তর— নিজের স্বার্থে কথা বলি। মানুষ মাত্রই তার স্বার্থটা সম্পর্কে সচেতন। একজন সাধারণ মানুষ একটা সরকারি হাসপাতালে কতটুকু সম্মান পায়? পায় না। কিন্তু একজন পরিচিত মুখ সেখানে গেলে একটু সমীহ পাওয়া যায়। এটা কেন? আমি কৃঞ্চকলি, কেউ কেউ আমাকে চেনে এই জন্য আমাকে পাত্তা দেওয়া হয়। কিন্তু আমার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে কেন আমার পরিচয়ে সম্মান পেতে যাবে। একজন নাগরিক হিসেবে সে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাবে, ওর মতো প্রত্যেক মানুষ নাগরিক হিসেবে মানুষ হিসেবে আগে প্রাধান্য পাবে— আমার কথা বলা, আন্দোলন, গান এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি জুনায়েদ সাকি ভাইকে সমর্থন দিচ্ছি। এখানে আমার স্বার্থ আছে। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আমি যে দেশটার স্বপ্ন দেখি একই স্বপ্ন তার চোখেও। আমরা একটা মানবিক পৃথিবীর জন্য লড়াই করছি।
পরী মনি, চিত্রনায়িকা
আমি তো বনানীতে ভোট দেব। তবে আজকে পূবাইলে শুটিং করছি। কালকেও শুটিংয়ে থাকতে হবে। আশা করছি রাতে ঢাকায় চলে যাব। ভোট দিয়ে আবার পূবাইলে চলে আসব। এবারের নির্বাচনে অনেক তরুণ প্রার্থীদের দেখছি। আশা করছি এবার ভাল কিছু হবে। যে-ই নির্বাচিত হোক তারা যেন শহরটাকে সুন্দর করে তোলে এটাই প্রত্যাশা।
সম্রাট, চিত্রনায়ক
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন কোনো ঝামেলা যেন তৈরি না হয় এটাই আমার প্রত্যাশা। কালকে ভোট দিতে যাব। আমরা ঢাকা উত্তরের নির্বাচনী এলাকায় পড়েছি। গুলশানে ভোট দেব। আমাদের শহরের চিত্র তো আমরা জানি। প্রত্যাশা থাকবে যিনিই নির্বাচিত হন মানুষের জন্য যেন কাজ করেন। সামনের দিনগুলোতে যেন এ শহরের মানুষ ভাল থাকেন।
স্বাগতা, টিভি অভিনেত্রী
আমি ঢাকা দক্ষিণের ভোটার। কালকে ভোট দিতে যাব। তবে কাকে ভোট দেব এটা এখনো ঠিক করতে পারিনি। আর নির্বাচন নিয়ে বাসায় একটু উন্মাদনা রয়েছে। কারণ আমার ছোটবোন এবারই প্রথম ভোটার হয়েছে। সে প্রথমবার ভোট দিচ্ছে দেখে বাসার সবার মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা রয়েছে। কালকে বাসার সবাই একসঙ্গে মিলে ভোট দিতে যাব।
আরেফিন রুমি, সঙ্গীতশিল্পী
আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা পুরান ঢাকায়। সেই সূত্রে আমি ওখানকার ভোটার। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে বেশ একাধিক যোগ্য প্রার্থী লড়ছেন। মনে মনে আমি আমার প্রার্থী পছন্দ করে রেখেছি। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ কিন্তু এই মুহূর্তে নাম বলব না। ঢাকা আমার প্রিয় শহর। একে সুন্দরভাবে দেখতে চাই সব সময়। মেয়র হলেন শহরের অভিভাবক। তাকে অবশ্যই যোগ্য ও সুন্দর মনের মানুষ হতে হবে।
জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, মডেল ও অভিনেত্রী
নির্বাচনকে ঘিরে চারদিকে বেশ উৎসবের আবহ তৈরী হয়েছে। রাস্তায় দেখলাম প্রচুর মানুষ। সব মিলিয়ে ভাল লাগছে। আমি যদিও খুলনার ভোটার। তবুও এই শহরেই তো থাকি। এ শহরটাকে যারা নেতৃত্ব দেবেন তাদের কাছে আমারও প্রত্যাশা রয়েছে। আশা করব কালকে যেন ভালভাবে ভোটপর্ব শেষ হয়। ভাল মানুষ আমাদের নেতা হয়ে আসেন এটা চাই না। তবে চেয়ারটাতে বসার পর যেন নেতারা ভাল মানুষ হয়ে যান, মানুষের জন্য যেন কাজ করেন। শহরটাকে যেন বসবাসের উপযোগী করে তোলেন।
হ্যাপি, মডেল ও অভিনেত্রী
আমি তো ভোটার হয়নি। তবে নির্বাচনের দৃশ্যগুলো দেখে ভাল লাগছে। টিভিতে দেখছি, প্রার্থীরা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে। অনেক ভাল ভাল প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। জয়ী হওয়ার পর যদি মানুষের জন্য প্রার্থীরা কাজ করে তবে ভাল লাগবে। আমি চাই, যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হোক। ঢাকা শহরকে নতুন করে সাজাতে ভাল মানুষ যেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।